জুমবাংলা ডেস্ক : ইমরান হেলাল (৮) ও খাদিজা আক্তার মিম (৯)। এরা কোন না কোন পরিবারের সন্তান। কিন্তু মা-বাবা ও স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এ দু’ কোমলমতি শিশু। নিয়তির নির্মম পরিহাসে আজ তারা ‘পথশিশু’ নামেই পরিচিত সভ্য সমাজের কাছে। পথে-ঘাটে ভিক্ষার হাত পেতেই জীবিকা হয় তাদের।
শিশু দু’টিকে উদ্ধার করে এক প্রকার মায়ের স্নেহ দিয়ে কোলে তুলে নিলেন খুলনার রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার। পরম মমতায় চুমু খেলেন, আদরও করলেন তিনি। আপাতত তাদের ঠিকানা হয়েছে খুলনার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে।
ইমরান হেলালের পিতার নাম জুয়েল ও মাতার নাম লাবনী এবং খাদিজা আক্তার মিমের পিতার নাম খোকন ও মাতার নাম সাবানা- এই পরিচয় ছাড়া শিশু দুটি আর কিছুই বলতে পারে না। তবে তারা নিজ মা-বাবাকে দেখেনি, নানীর কাছে বড় হয় বলে জানিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে তাদের নানী মারা যাওয়ায় তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা কিভাবে কার মাধ্যমে সেনেরবাজার ঘাট এলাকায় এসেছে- সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি শিশুরা। তবে স্থানীয়দের ধারণা- শিশু দু’টি বরিশাল জেলার কোন একটি গ্রামের বাসিন্দা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জানুয়ারি রাতে রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার জানতে পারেন- উপজেলার আইচগাতী সেনের বাজার ঘাট, ডাচবাংলা ব্যাংক ও ওষুধের দোকান এলাকায় দু’টি পথ শিশু দিনে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং রাতে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকে।
এ খবর পেয়ে পর দিন ১৪ জানুয়ারি সকালেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুল ও ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই সেকেন্দার পথ শিশুদের উদ্ধার করে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি খুলনা ও বাগেরহাট বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে কোথাও শিশুদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করতে না পারায় এক পর্যায়ে ভেঙ্গে পড়েন। পরিশেষে তিনি যোগাযোগ করেন খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সব বিষয় শুনে তাদেরকে গ্রহণ করার সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
ইতিমধ্যে শিশুদের গোসল করিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয় এবং তাদেরকে নতুন পোষাক ক্রয় করে তা নিজ হাতে পরিয়ে দেন নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া তাদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল অফিসারকে খবর দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল অফিসার ডা. পিকিং শিকদার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে তাদেরকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
এদিকে গড়িয়ে গেছে ৬ ঘন্টা। এক পর্যায়ে খুলনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশু দুটিকে পৌঁছানোর জন্য থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। যখনই শিশুরা বুঝতে পারে তাদেরকে নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় ছেড়ে চলে যেতে হবে। তখন তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘আম্মু’ সম্বোধন করে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে থাকে। এ সময় নির্বাহী কর্মকর্তাও তাদের ভালোবাসায় আবেগ-আপ্লুত হয়ে তাদেরকে নিজ সন্তানের মত আদর করেন। বিষয়টি দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আবু বকর মোল্লা, সমাজসেবক হাবিবুর রহমান, আজিজুল ইসলাম ও গণমাধ্যমকর্মীসহ নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ফুটফুটে এ শিশু দু’টি কারো না কারো আদরের ধন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক তারা আজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, আশ্রয়হীন। যে কারণে তাদের উদ্ধার করে একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবারের সঠিক ঠিকানা পাওয়া গেলে অভিভাবকদের হাতেই তুলে দেয়া হবে তাদের।
নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার ধারণা করছেন- কোন শিশু গ্যাং বা চক্র এ শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তির কাজে ব্যবহার করতে পারে। কারণ তারা ভিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে গাম (আঁঠা) নিয়ে নেশাও করে। উদ্ধারের পর ছেলেটাকে অনেকটা নেশাগ্রস্ত, অসংলগ্ন আচরণ করতে দেখা যায়। এছাড়া ওরা দু’জনে বিশেষ ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাও বলে। বলে ‘আংকেল’ আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। তবে, কে সেই আংকেল তা বলতে পারেনি। এক সপ্তাহ পর শিশুদের দেখতে তিনি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে যাবেন বলেও জানান মমতাময়ী নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.