নীলফামারী প্রতিনিধি: একদিকে যেমন যৌবন ফিরে পেয়েছে নীলফামারীর বুড়িখোড়া নদী, অন্যদিকে বদলেছে তার চিরচেনা রুপ। হুমকির মুখে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকা এই নদীটিতে এসেছে স্বাভাবিক গতি। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন মাছ চাষিরাও। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেয়ায় দিনদিন সংকুচিত হচ্ছিলো বুড়িখোড়া নদীটি।
এরমাঝে বেদখল হওয়া তো রয়েছে। নদীর ভিতর চাষাবাদের কারণে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা হারিয়ে গিয়েছিলো, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহমান গতিপথে বৃষ্টির পানি উজান হতে ভাটিতে যেতে বাধাগ্রস্থ হতো এবং পাশ্ববর্তী এলাকাসমুহ প্লাবিত হতো।
মৎসজীবী মিজানুর রহমান শাহ বাদল বলেন, নদী পুনঃখননের ফলে বন্যার পানি থেকে মুক্ত হয়েছে এলাকাবাসী। আগে ফসলি জমি ছাড়াও আশপাশ এলাকাগুলো তলিয়ে যেতো। এখন দ্রুত পানি নিষ্কাশন হওয়ায় আগের মতো এখন সেটি আর হচ্ছে না। জমিগুলোতে দুটি ফসল ফলানো যাচ্ছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সদস্য সচিব গেদন চন্দ্র দাস বলেন, বুড়িখোড়া নদী খননের ফলে পানি থাকছে। এরফলে মাছ উৎপাদন বাড়বে। বিশেষ করে দেশীয় মাছের চাহিদা অনেকাংশে লাঘব হবে। অন্যদিকে নদীর প্লাবন ভুমিগুলোতে আমন আবাদ হচ্ছে। শুধু মৎস্যই না কৃষিতেও প্রভাব ফেলছে পুনঃখননের ফলে।
সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, এতদিন যেভাবে নদীটির চরিত্র দেখে আসছি সে রকম এখন আর নেই। আগে নদীটির গতি প্রকৃতি ঠিক ছিল না। অল্প পানিতে বন্যা হয়ে যেতো কারণ পানি নিষ্কাশন করতে পারতো না এখন সেটি আর নেই। এছাড়া নদীটি প্রাকৃতিক আবত তৈরি করতে পেরেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী বিভাগ সূত্র জানায়, ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) গত বছর থেকে বুড়িখোড়া নদীটি ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে পুনঃখনন কাজ চলমান রয়েছে।
এরফলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত বছরের বন্যা হতে নদীটির পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহ রক্ষা পেয়েছে। ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীটির পূনঃখনন কাজ করছে হাসান ব্রাদার্স। খননকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক বাদল মিয়া জানান, চলতি বছরের নভেম্বরে পুনঃখনন কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত ৮৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, নদীর পাড় বাধা, ঘাস দিয়ে শোভাবর্ধন এবং বনায়ন কর্মসূচি করা হয়েছে। এরফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে পাবেন নদী তীরবর্তী মানুষরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নাব্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমেও নদীতে পানি প্রবাহ থাকবে যা কৃষিতে সেচ কাজে ব্যবহার করা যাবে। নদীতে মৎস্য উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র অনেকাংশে দূরীভুত হবে। এছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় নদী খননের পাশাপাশি নদীর দুই পাড়ে বনায়ন কর্মসূচি রয়েছে যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।