সৌরজগতের প্রাণভোমরা সূর্য। সূর্যের আলোর নিচে আমাদের জীবন ছুটছে। সেই সূর্য বিশাল এক নক্ষত্র, যা প্রধানত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের সমন্বয়ে তৈরি বিশাল একটি বল। সূর্যের অভ্যন্তরে তাপ ও চাপে পারমাণবিক সংযোজন প্রক্রিয়া ঘটছে কোটি কোটি বছর ধরে। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপের কারণে সূর্যের ছবি তোলা বেশ কঠিন, সেই কঠিন বিষয়কে জয় করার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পদার্থবিদ মুনীম হোসেন রানা।
দূর থেকে সূর্য এক স্তরের মনে হলেও সূর্যের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পদার্থবিদ মুনীম হোসেন বলেন, সূর্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা বেশ কম বলা যায়। সূর্যের কেন্দ্র বা কোরে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়া ঘটছে। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াই শক্তির মূল উৎস। এখানকার তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপরে আছে তেজস্ক্রিয় বা রেডিওঅ্যাকটিভ জোন। এই স্তর কোরের ওপরে অবস্থিত।
এখানে শক্তি ফোটনের আকারে বিকিরণ হিসেবে স্থানান্তরিত হয়। শক্তি কোর থেকে এই স্তরে চলে আসে ধীরে ধীরে। এরপরে আছে কনভেকটিভ জোন, ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার আর সর্বশেষ স্তরের নাম করোনা। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫ হাজার ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। আর কেন্দ্রে দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন তাপমাত্রার কারণে সূর্যের ছবি তোলা বেশ কঠিন। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা—নাসার হিসাবে সূর্যের বয়স ৪৫০ কোটি বছর। পৃথিবী থেকে ৯৩০ কোটি মাইল দূরে সূর্যের অবস্থান। আমাদের সৌরজগতের একমাত্র তারা হচ্ছে সূর্য।
শৌখিন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার মুনীম হোসেন। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল তিনি দ্য গ্রেট আমেরিকান এক্লিপ্স নামের সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের করোনার ছবি তুলেছিলেন। মুনীম হোসেন বলেন, ‘তখন আমার ক্যামেরা নিয়ে সূর্যগ্রহণের ছবি তুলেছিলাম। একটি আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যগ্রহণের পেছনে ছুটেছিলাম। নেক্সটার ৮এসই কম্পিউটারাইজড টেলিস্কোপ ব্যবহার করছিলাম। সেই ছবি তোলার অভিজ্ঞতার পর থেকে আমি সূর্যের ছবি তোলা শুরু করি।
সূর্য প্রতি ১১ বছর পর একটি চক্র সম্পূর্ণ করে। এই চক্র সৌরচক্র নামে পরিচিত। এ সময় সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যায়, সৌর ক্রিয়াকলাপ বাড়ে ও কমে। মুনীম হোসেন জানান, এই চক্রের সময় সূর্যের ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি পায়। এমন সময় অনেক সৌরঝড় দেখা যায়। সৌরঝড় আসলে সৌর বিস্ফোরণ ও সৌরশিখার ছোটাছুটি।
এই সৌরঝড়ের প্রভাব পৃথিবীতে দেখা যায়। প্রায় ১১ বছর পরপর সৌরচক্রের কারণে সূর্যের পৃষ্ঠে সানস্পট বা সৌরকলঙ্ক বেশি দেখা যায়। এই সময় সূর্য থেকে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়ায়। পৃথিবীর দুই মেরুতে এই সময় সেই বিকিরণের আবহ ‘অরা’ আকারে দেখা যায়। বিকিরণের সঙ্গে চৌম্বকক্ষেত্রের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
দুই মেরুর আশপাশের এলাকায় অরার কারণে রাতের বেলায় আকাশে অদ্ভুত সব রঙের আলোক ঝলক দেখা যাচ্ছে।বেশ কয়েকটি ছবি তুলি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছবিটি আমি ৬ নভেম্বর ছবি তোলার কাজ শেষ করি। এখন সূর্যের ছবি তোলার কাজ করেছি আমার টেক্সাসের বাসার পেছনের আঙিনা থেকে। সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ার ও ফটোস্ফিয়ারের গভীরের ছবি তুলতে আমি ৭০ মিলিমিটার অ্যাপারচার ও ৪০০ ফোকাল লেন্থের বিশেষ ধরনের সোলার টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছি।
মডেলটির নাম “করোনাডো সোলার ম্যাক্স থ্রি আর ডাবল স্ট্যাক”। ফিল্টার ছিল হাইড্রোজেন আলফা। এই যান্ত্রিক সেটআপ সূর্যের পৃষ্ঠের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য যেমন সানস্পট, ফিলামেন্ট ও প্রমিনেন্স দেখতে বেশ সহায়ক। সূর্যের উজ্জ্বলতাকে ধরতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।