গর্ভাবস্থা এমন একটি সময় যা একজন নারীর জীবনে আবেগপ্রবণ ও শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণ। এই সময়কালে অনেক প্রশ্ন, উদ্বেগ এবং সামাজিক ধারণা মাথাচাড়া দেয়, বিশেষত স-হবাসের বিষয়টি ঘিরে। গর্ভাবস্থায় স-হবাস নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারনা প্রচলিত রয়েছে, যা বহু পরিবারে অযথা ভয় ও দূরত্ব সৃষ্টি করে। অথচ চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ গর্ভাবস্থায় স-হবাস সম্পূর্ণ নিরাপদ।
গর্ভাবস্থায় স-হবাস: বাস্তবতা বনাম ভ্রান্ত ধারণা
গর্ভাবস্থায় স-হবাস সম্পর্কে একাধিক ভুল তথ্য আমাদের সমাজে প্রচলিত। বিশেষত প্রথম ও শেষ তিন মাসে স-হবাস করলে সন্তানের ক্ষতি হতে পারে — এই ভ্রান্ত ধারণা বহুদিন ধরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এইসব ধারণাকে একদম ভিত্তিহীন বলে জানাচ্ছে।
Table of Contents
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক এবং জটিলতামুক্ত হয়, তাহলে স-হবাসে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শুধু অনুমান থেকে স-হবাস এড়িয়ে চলা একদিকে যেমন অযৌক্তিক, অন্যদিকে দাম্পত্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে।
গর্ভাবস্থার সময় শরীর ও মনের পরিবর্তনের ফলে অনেকেই যৌন চাহিদায় পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। এটি স্বাভাবিক এবং এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই পরিবর্তন দম্পতিদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা ও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা বাড়ায়।
কখন গর্ভাবস্থায় স-হবাস এড়িয়ে চলা উচিত?
যদিও বেশিরভাগ গর্ভাবস্থায় স-হবাস নিরাপদ, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এটি এড়ানোই ভালো। যেমন:
- গর্ভকালীন ভারী রক্তপাত
- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Placenta previa)
- জরায়ুমুখের দুর্বলতা (Cervical insufficiency)
- আগের গর্ভধারণে সময়ের আগেই সন্তান জন্ম
এই ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের স্পষ্ট পরামর্শ না নেওয়া পর্যন্ত স-হবাস থেকে বিরত থাকা উচিত।
অতিরিক্ত তথ্য ও গবেষণার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-এর রিপ্রোডাকটিভ হেলথ বিভাগে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
স-হবাসের নিরাপদ ভঙ্গিমা ও স্বাস্থ্যকর পন্থা
গর্ভাবস্থায় স-হবাসের সময় শরীরের ভারসাম্য এবং পেটের চাপ এড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু ভঙ্গিমা মেনে চলা জরুরি। যেমন:
- কাত হয়ে স-হবাস
- সাইড বাই সাইড অবস্থানে
- চাপহীন অবস্থানে
পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়লে তা গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো পজিশন বেছে নেওয়ার আগে স্বস্তি ও সুরক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
দম্পতির মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক উন্নয়ন
গর্ভাবস্থায় স-হবাস শুধুমাত্র শারীরিক না, এটি মানসিক ও আবেগগত সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়। এই সময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিশ্বাস, সহানুভূতি ও বোঝাপড়ার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
তবে কোনো কারণবশত যদি একজন আগ্রহী না হন, তাহলে তার মতামতকে সম্মান করে সম্পর্ক রক্ষা করা আবশ্যক। এই সময়ে পারস্পরিক সম্মানই সম্পর্কের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।
নিরোধ ব্যবহার এবং যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা
যৌনবাহিত রোগ (STI) গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই যদি কোনও সঙ্গীর পূর্বে STI ইতিহাস থাকে বা সুরক্ষিত যৌনতা না হয়, তবে নিরোধ ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দেন। এটি গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে সহায়ক।
এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে আমাদের স্বাস্থ্য আপডেট বিভাগে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ও সচেতনতা
গর্ভাবস্থার সময় যৌনতা নিয়ে সচেতনতা ও সঠিক তথ্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুল তথ্য, লজ্জা বা ভীতি নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত ও সম্পর্কনির্ভর সিদ্ধান্তই পরিবারে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভকালীন সমস্ত প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা বা স্বাস্থ্য বিষয়ক সংশয় নিয়ে লাইফস্টাইল বিভাগের অন্যান্য প্রতিবেদন পড়ে উপকৃত হতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় স-হবাস নিয়ে সচেতনতা ও বিজ্ঞাননির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিই পারে সমাজের পুরানো ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে। এই বিষয়ে আরও জানার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে কখনোই দ্বিধা করবেন না।
FAQs
গর্ভাবস্থায় স-হবাস কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, যদি গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক এবং জটিলতামুক্ত হয় এবং চিকিৎসক নিষেধ না করেন, তবে এটি নিরাপদ।
গর্ভাবস্থার কোন সময়গুলোতে স-হবাস এড়িয়ে চলা উচিত?
যখন ভারী রক্তপাত, প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, জরায়ুমুখ দুর্বলতা বা আগের সময়ের আগেই সন্তান জন্মের ইতিহাস থাকে।
স-হবাসের জন্য কোন ভঙ্গিমাগুলো সবচেয়ে নিরাপদ?
যেসব ভঙ্গিমায় পেটে চাপ পড়ে না, যেমন কাত হয়ে, সাইড বাই সাইড অবস্থানে ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় যৌন চাহিদা কি কমে যায়?
এটি একান্তই ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। অনেকেই কম অনুভব করেন, আবার অনেকেই স্বাভাবিক রাখেন।
গর্ভাবস্থায় STI থেকে সুরক্ষা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়?
নিরোধ ব্যবহার এবং সঙ্গীর যৌন ইতিহাস সম্পর্কে অবগত থাকা সুরক্ষার উপায়।
গর্ভাবস্থায় স-হবাস কি শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
না, যদি চিকিৎসক নিষেধ না করেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তবে ঝুঁকি থাকে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।