রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: আপনার শ্বশুরবাড়ি যদি গাইবান্ধায় হয়, তবে পাতে কি এখনো রসমঞ্জরী পড়েছে? অথবা গাইবান্ধায় বাড়ি আপনার কিন্তু বিয়ে করেছেন অন্য জেলায়, শ্বশুরবাড়িতে কখনো রসমঞ্জরী নিয়ে গেছেন?
উত্তর অবশ্য ‘হ্যাঁ’-ই হওয়ার কথা। আর যদি ‘না’ হয়, আপনার ‘চাকরি’ মানে সম্পর্ক এখনো আছে?
শুধু সম্পর্ক রক্ষা নয়, নতুন সম্পর্ক জুড়তেও রসমঞ্জরীর জুড়ি নেই। গাইবান্ধার মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে প্রেম করতে চান? অন্যকিছুর প্রয়োজন নেই, সরাসরি রসমঞ্জরী দিয়ে ‘প্রপোজ’ করে দেখুন। কাজ হয়েও যেতে পারে! যে খাবারের নামই রসমঞ্জরী, রসের সম্পর্ক রক্ষা করতে বা তৈরি করতে তার চেয়ে ভালো বিকল্প আর কী হতে পারে!
এতক্ষণে হয়ত বুঝতেই পারছেন, রসমঞ্জরী একটি মিষ্টির নাম। এটি গাইবান্ধার জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্যও। দেখতে কিছুটা রসমালাইয়ের মতো হলেও এর রন্ধনপ্রণালী ও স্বাদ অতুলনীয় এবং আলাদা।
গাইবান্ধায় কে কবে রসের এই মিষ্টিটি বানানো শুরু করেন, তার প্রামাণ্য ইতিহাস নেই। কিছু লোক জানান, দেশভাগেরও আগে থেকে এ এলাকায় পাওয়া যেত এই রসমঞ্জরী। সে সময় জেলা শহরের মিষ্টি ভান্ডারের মালিক রামমোহন দে তৈরি শুরু করেছিলেন এই মিষ্টি।
আর কিছু লোকের ভাষ্য, জেলা শহরের সার্কুলার রোডের রমেশ সুইটসের কর্ণধার প্রয়াত রমেশ ঘোষের হাত ধরে ১৯৪৮ সালে রসমঞ্জরী প্রথম তৈরি হয়েছিল। তিনি ওডিশার এক কারিগরকে এনে শুরু করেন এ মিষ্টি বানানো। শুরুতে রসমঞ্জরী লম্বা আকারের বানানো হতো। পরে এটি গোল করে বানানো হয়। এখনো এটি গোলই আছে।
রমেশ সুইটসের কারিগর স্বপন ঘোষ জানান, রসমঞ্জরীর বড় অংশজুড়ে থাকে দুধ ও ছানা। দুধ ঘন করে ক্ষীর বানানো হয়। এরপর ছানা আর ময়দা মিশিয়ে তৈরি হয় মিষ্টি। মিষ্টির বেশির ভাগটাই থাকে ছানা। মিষ্টিগুলো চিনির রসে সেদ্ধ করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এনে রসে ভেজানো মিষ্টি, ক্ষীরে মেশানো হয়। তৈরি হয় রসমঞ্জরী।
গাইবান্ধায় এখন রসমঞ্জরী তৈরির অনেক দোকান গড়ে উঠেছে। অনেক দোকানে এখনো মিষ্টি হাতেই তৈরি করা হয়। কিছু দোকানে মিষ্টি গোল করতে বসানো হয়েছে মেশিন। এমনই একটি দোকান গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার।
ওই মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান কারিগর নূর আলম জানান, প্রথমে দুধ সংগ্রহ করেন তারা। এরপর বড় কড়াইয়ে সেগুলো জ্বাল দিতে হয়। পরে ফুটন্ত দুধ ঠান্ডা করে হালকা গরম অবস্থায় ছানা ছেঁকে বের করতে হয়। তারপর হালকা আটা, সুজি ও চিনি দিয়ে মিশ্রণটি মেশিনে দিয়ে গোল গোল করে মিষ্টি কাটতে হয়। পরে সেগুলো ফুটন্ত চিনির সিরায় ১০ থেকে ১২ মিনিট সেদ্ধ করে ফের সিরায় নামানো হয়। কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার পর তা ক্ষিরে ডোবালেই তৈরি হয় সুস্বাদু ও রসে টইটুম্বুর রসমঞ্জরী।
গাইবান্ধার রসমঞ্জরীর রসে মজেছেন রাজশাহীর মেয়ে শোভা চৌধুরী। তাঁর বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধা শহরে। তিনি জানান, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তখনই প্রথম রসমঞ্জরীর স্বাদ নেন। তাঁর তখনকার বন্ধু ও পরে বর গাইবান্ধা থেকে মিষ্টিটি নিয়ে এসেছিল। বন্ধুবান্ধবেরা মজা করে খেয়েছিলেন। এরপর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তো প্রায়ই রসমঞ্জরী খাওয়া হয়। বাপের বাড়িতেও মিষ্টিটি নিয়ে যান তাঁর বর। তাঁর বরের শ্বশুরবাড়িও রসমঞ্জরীর ভক্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।