রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: বড় কোনো খোলা মাঠ নেই, নেই কোনো নদীতীর; ধারাই মেলা টিকে আছে শুধু একটা বটগাছকে কেন্দ্র করে।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, এ মেলার বয়স শত বছরের বেশি। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধারাই গ্রামে বৈশাখ মাসব্যাপী এ মেলা হয়।
ধারাই মেলা কবে শুরু, জানেন না স্থানীয়রা। তবে বংশ পরম্পরায় আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ এ মেলায় আসেন। বৈশাখের প্রতি মঙ্গলবার এ মেলা বসে। এখানে একটি সার্বজনীন চণ্ডি মন্দিরের নামে খাস জায়গা রয়েছে। এই জায়গায়ই মেলা বসে। তবে আশপাশে কোনো হিন্দুবাড়ি নেই।
ধারাই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সম্ভবত দেশভাগের সময় কিছু এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানকার হিন্দুরা ভারত চলে গেছেন। কিন্তু তাদের ফেলে যাওয়া চণ্ডিমণ্ডপ এখনো টিকে আছে। এই মণ্ডপের একটি বটগাছের নিচেই বছরের পর বছর মেলাটি হয়।
মঙ্গলবার সরজমিন গিয়ে মেলার আশপাশে কোনো মন্দির চোখে পড়ল না। তবে মেলাস্থলের পাশে প্রাচীরঘেরা একটা জায়গা রয়েছে। সেখানে কিছু স্থাপনাও রয়েছে। সেখানকার একটি বটগাছের নিচে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী কালীর প্রতিচ্ছবি বসানো হয়েছে। সেখানেই পূজার প্রসাদ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় আসা সেন্টু মণ্ডল বলেন, তিনি ১২ বছর আগেও এ মেলায় এসেছিলেন। বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর গ্রামে। এই বটগাছ কেন্দ্র করেই এ মেলা হয়। গাছের নিচে পাঁঠাবলিসহ নানা প্রসাদ দেওয়া হয়।
সেন্টুর সঙ্গে আসা প্রদীপ মণ্ডল জানান, তাঁর জন্মের সময় বাবা-মা এখানে কবুতরের জোড়া মানত করেছিলেন। প্রায় ২৫ বছর পর তিনি সেই মানত পূরণ করতে এসেছেন।
ঘুরে দেখা গেল, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ মেলার বেশির ভাগ দর্শনার্থীও মুসলমান সম্প্রদায়ের। তারা মূলত কেনাকাটা করতে এসেছেন।
পলাশবাড়ী সদরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শাহবাজ কবির এসেছিলেন ঘুরতে। তিনি বলেন, মেলায় গ্রামের মানুষের নিত্য ব্যবহার্য অনেক জিনিস কম দামে পাওয়া যায়। লোহার তৈরি কাস্তে, পাচুন, বটি থেকে শুরু বাঁশ-কাঠের নানা জিনিস পাওয়া যায়। তিনি আগেও এ মেলায় এসেছিলেন।
মেলা ঘুরে আরও দেখা গেল, বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, খেলনাপাতির বিপুল সমারোহ। আছে প্রসাধনসামগ্রীর দোকানও। সেসব দোকানে শিশুকিশোরদের ভীড়।
দোকানি রফিকুল ইসলাম জানালেন, তাঁর বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তিনি প্রসাধনসামগ্রী ফেরি করে বেচেন। আর যেখানেই মেলা হয়, সেখানে অস্থায়ী দোকান দেন। মেলায় বেচাকেনা বেশি হয়।
মেলার তখন শেষ সময়। দোকানপাট গোছাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কথা হলো আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁর বাড়ি ধেরুয়া গ্রামেই। তিনি বললেন, তাঁর বয়স ৭৫। ছোটবেলা থেকেই এ মেলা দেখে আসছেন। তাঁর বাপ-দাদার কাছেও এ মেলার কথা শুনেছেন। এ মেলার বয়স কত, তাঁরাও বলতে পারেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।