নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ তুলে না নেওয়ায় এখনো যানজট অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা দাবিতে আন্দোলনের কারণে গাজীপুর জেলায় ২১টি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি সারোয়ার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোনাবাড়ি-জিরানী এলাকার রেজাউল অ্যাপারেলস লিমিটেড, কেএম নোবলী গার্মেন্টস, বানিকা ফ্যাশন লিমিটেড, ডোরিন গার্মেন্টস, ডরিন অ্যাপারেলস, লাইফ টেক্টটাইল, এবিএম ফ্যাশন, পিএন কম্পোজিট নিট লিমিটেড, ভোগড়া বাইপাস এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস, বেসিক ক্লথ লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, বেসিক নিটওয়্যার লিমিটেড প্রভৃতি।
এর আগে শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। মহাসড়কের দক্ষিণ দিকে টঙ্গীর কাছাকাছি যানজট গিয়ে ঠেকে। আমরা অনেক গাড়ি বিকল্প পথে চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া মহাসড়কে অনেকগুলো ডাইভারসন আছে, সেগুলো দিয়ে চালক ও যাত্রীরা চলাচল করছেন। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ, উত্তর) নাজির আহমেদ বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ১০-১২ বার শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা প্রথমে বলেছিলেন দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেবেন। পরে বলেছিলেন, বিকেল ৫টায় অবরোধ তুলে নেবেন। কিন্তু তারা অবরোধ তুলে নেননি। এখন তারা বলছেন, রাত ১০টায় অবরোধ তুলে নেবেন। তারপরও আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনো আশ্বাস মানতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে মহাসড়কের যানজট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না।
দিনভর যানজটে আটকা পড়েছেন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা। স্ত্রী ও তিন বছরের শিশু নিয়ে নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসেন আলম হোসেন নামের এক পোশাকশ্রমিক।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তার অদূরে বাস থেকে আমাদের নামিয়ে দেয়। দীর্ঘক্ষণ চান্দনা চৌরাস্তায় অবস্থান করেও কোনো যানবাহন না পেয়ে বিকল্প পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। তবে বাচ্চারা খুব কান্না করছে।’
ময়মনসিংহ থেকে আসা বাসচালক কালাম হোসেন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে যানজটে বসে আছি। আন্দোলনকারীরা প্রথমেই আমার গাড়ি আটকায়। গাড়ি নিয়ে পেছনে ফিরে যাবো তারও কোনো সুযোগ নেই।’
মেহেদী হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘১১টা বাজার আগে ১৫-২০ বার আমাদের গাড়ি আটকিয়েছে। আমার ৬ মাসের বাচ্চাসহ ৩-৪ জন নারী গাড়ির ভেতরে আছেন। চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। এরকম নাকি (আন্দোলন) আরও দু-তিনবার করেছে। সরকারের উচিত একটা সমঝোতা করা।’
গাজীপুর শিল্পপুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মালেকের বাড়ি এলাকায় টি এন জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি।
শনিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মালেকের বাড়ি কলম্বিয়া মোড় এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।