গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুরে একটি অটো স্পিনিং মিলের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও অন্তত পাঁচজন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নিরাপত্তাকর্মীর নাম মো. রাসেল (৩৬)। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার উলুল গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি ওই কারখানার কোয়ার্টারে থেকে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে ছিলেন।
স্বজনদের ভাষ্যমতে, নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন-আনারুল (আনোয়ার), সুজন, সেলিম কবির, শাহ্ জালাল ও রায়হান।
খবর পেয়ে শ্রীপুর, জয়দেবপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৮টি ইউনিট ঘটনাস্থল পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে দাউ-দাউ আগুন জ্বলছিল।
কারখানার মহাব্যবস্থাপক হারুন-অর রশিদ জানান, দুপুর ঠিক আড়াইটার দিকে কারখানার গুদামে আগুন লাগে। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক কারখানার নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তাঁরা।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পাল জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রথমে শ্রীপুর ও পাশের ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের আলাদা চারটি ইউনিট ঘটনাস্থল পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে রাত ১১টা পর্যন্ত আরো ১৪টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যোগ দেয়।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, পানি সংকট ও কারখানাটির ভেতরের রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
কারখানার ব্যাকসাইড লাইনম্যান মোমতাজ বেগম জানান, আগুন লাগার পর তাৎক্ষণিক ভেতরে থাকা শ্রমিকদের বেরিয়ে যেতে বলে নিজেও নিরাপদে বেরিয়ে যান তিনি। তিনি দাবি করেন, ‘তুলার গুদামে কোনো লোক ছিল না বলেও ধারণা করছি।’
কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরজাহান আক্তার জানান, আগুন লাগার পর কারখানার ফায়ার অ্যালার্ম বাজানো হয়। ওই সময় শ্রমিকরা বেরিয়ে গেলেও কারখানার শৌচাগারে নিরাপত্তাকর্মী রাসেল আটকা পড়ে। ওই সময় তীব্র ধোঁয়া ভেতরও রাসেলের চিৎকার শোনা যায়। টের পেয়ে তাঁকে (রাসেল) উদ্ধারের চেষ্টা করেন তাঁরা। একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা শৌচাগারের দেওয়াল ভেঙ্গে রাসেলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদ হাসান জানান, রাসেলকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তিনি জানান, আগুনে রাসেলের শ্বাসনালীসহ শরীরের ওপরের কিছু অংশ দগ্ধ হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তবে শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে কারখানার কোনো কর্মকর্তা কিংবা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গতকাল সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। তাঁরা সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন।
কারখানা ঘিরে সেখানে নিরাপত্তায় রয়েছেন বিপুল পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।