নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভাল দামে পশু বিক্রির স্বপ্নে গাজীপুরের খামারিরা এবারও পশু লালন পালন করেছেন। পাশাপাশি অনেক কৃষকও কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছেন। কারণ সামনেই ঈদুল আজহা। করোনার কারণে এখনো বাজার জমে ওঠার মতো পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
এদিকে এবার করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশুর হাট বসানো এবং এর পাশাপাশি অনলাইন কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন লাঘালিয়া এলাকার গরুর খামারি শাকিক আহমেদ বুলবুল। ঈদে বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি ইতোমধ্যেই নিজ খামারে ৩০টি গরু এবং ২৫টির মতো ছাগল (খাসি) প্রস্তুত করেছেন। গত বছর তিনি কোরবানির ঈদে ৪০টি গরু এবং ১৬টা খাসি বিক্রি করে গরুতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। এবার তিনি পুঁজি তুলতে পারবেন কিনা শঙ্কায় পড়েছেন।
খামারি বুলবুল জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এতে প্রতি গরু-ছাগলেই তুলনামূলক বেশি খরচ হয়েছে। তার উপর করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের আয় কমে গেছে। তাই অনেকেই আগের মতো দামে বা পরিমানে কোরবানি দিতে পারবেন না। আবার অনেকে হয়ত এবার কোরবানি নাও দিতে পারেন। ফলে পশুর চাহিদা এবার কম থাকবে বলে করছেন তিনি। তাই কিভাবে পশু বিক্রি করবেন এ নিয়ে খবিই চিন্তায় আছেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। এ বছর খামারিদের লাভ হলেও তা হবে একেবরেই সীমিত। আবার অনেকক্ষেত্রে পুঁজি ফেরত পাওয়া কষ্টকর হতে পারে। তিনি আরো জানান, যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ রোধ করা যায় তাহলে হয়তো খামারিদের লাভবান হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা থাকবে।
গাজীপুর সদর উপজেলার খুন্দিয়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম মুকুল। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য কৃষিকাজের পাশাপাশি কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে প্রতিবছরই দু-চারটি করে গরুও লালন পালন করেন।
তিনি জানান, গত বছর ঈদের আগে ৯০ হাজার টাকায় ৩টি ষাড় কিনেছিলেন। কয়েক মাস লালন পালনে খরচ করেছিলেন আরো ৬০ হাজার টাকা। ঈদে ওই ৩টি গরু বিক্রি করেছিলেন সোয়া দুই লাখ টাকা। এবার মাত্র একটি প্রস্তত করছেন। চার মাসে আগে ৪০ হাজার টাকায় গরুটি কিনেছেন। চার মাসে খরচ হয়েছে ১৫/১৬ হাজার টাকা। অন্যবছর এ গরুটি ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর দাম কেমন হয় বুঝতে পারছিনা, চিন্তায় আছি।
খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ছাড়াও দেশের বিভিন্নস্থানের কৃষক বা খামারিরা গাজীপুরে তাদের পশু বিক্রি করতে আনেন। এবার করোনা সংক্রমনের কারণে বাজারে তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তাই সার্বিক দিক লক্ষ্য রেখে খোলা জায়গায় বেশি বেশি বাজার সৃষ্টি করার পরামর্শ তাদের। তাহলে স্বাস্থ্য বিধি মানা সম্ভব হবে তারা মনে করেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্য মতে, গাজীপুরে ৬ হাজার ৮৬১ জন খামারি রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে এখানের খামারিরা ৬১ হাজার ১৫০টি পশু প্রস্তত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ষাড় ২৭ হাজার ৩৪০টি, গাভী ৯ হাজার ৮৩টি, বলদ ৩ হাজার ৫৩৭টি, মহিষ ৬৭৫টি, ছাগল ১৯ হাজার ৪৪৪টি এবং ভেড়া ১ হাজার ৭১টি।
অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ের হিসাবে- সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৬১৮টি পশু, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯ হাজার ৪৬০টি পশু, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২২ হাজার ৮৯৫টি পশু, কাপাসিয়া উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬০টি পশু এবং শ্রীপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ৮১৭টি পশু রয়েছে। এছাড়া জেলার অসংখ্য কৃষক পারিবারিকভাবে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান মৃধা জানান, সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে দুটি। কোরবানি উপলক্ষে সিটির বিভিন্ন এলাকায় আরো ১০টি হাটের জন্য টেন্ডার হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাটের সংখ্যা প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হতে পারে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন রায় জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার অনলাইনে পশু বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা প্রাশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনেক এসোসিয়েশন, ব্যবসায়ি অনলাইনে পশু বিক্রির কার্যক্রম শুরু করছে। বেশিরভাগ পশু এবার অনলাইনে বিক্রি হবে বলে মনে করছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।