এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যা সমাধান করতে পারেনি কোনো কম্পিউটার। কিন্তু নতুন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘আলফাজিওমেট্রি’ এসব সমস্যা সমাধানে সফল হয়েছে। কয়েক ডজন উপপাদ্যের সমাধান করে চমকে দিয়েছে বিশ্বকে।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিতের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে শিক্ষার্থীরা ব্রোঞ্জ, রৌপ্য ও স্বর্ণপদকের জন্য প্রতিযোগিতা করে। শিগগিরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামগুলো প্রতিযোগিতা করতে পারে বিশ্বসেরা এই গণিতবিদদের সঙ্গে!
চলতি বছর জানুয়ারিতে গুগল ডিপমাইন্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিউ এইচ ট্রিনের নেতৃত্বে একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্মোচিত হয়। এর নাম রাখা হয়েছে আলফাজিওমেট্রি। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এ।
ফিল্ডস পদকজয়ী ও তিনবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদকজয়ী জার্মান গণিতবিদ পিটার শোলজে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এর কাজকর্ম প্রশংসণীয়। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগীদের প্রশিক্ষণের জন্য এটি ব্যবহৃত হতে পারে।’
আগেই বলেছি, আলফাজিওমেট্রি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা ৩০টি জ্যামিতিক সমস্যা নির্বাচন করেন। এগুলো ২০০০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নে ছিল। উ-এর (Wu) অ্যালগরিদম নামে পরিচিত একটি প্রোগ্রামকে এসব সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়। সেটি মাত্র ১০টি সমস্যা সমাধান করতে পেরেছে। চ্যাটজিপিটি-৪ এ ক্ষেত্রে একদম ‘গোল্লা’ পেয়েছে। মানে, একটি প্রশ্নেরও সমাধান করতে পারেনি।
কিন্তু নতুন এই আলফাজিওমেট্রি ২৫টি সমস্যার সমাধান করেছে। গবেষকদের মতে, এই স্কোর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের বেশির ভাগ প্রতিযোগীর চেয়ে ভালো। কারণ শিক্ষার্থীরা এই ৩০টি সমস্যার মধ্যে গড়ে ১৫.২টি সমাধান করতে পেরেছে। তবে স্বর্ণপদক জয়ীরা গড়ে ২৫.৯টি সমাধান করতে পেরেছে। অবশ্য সমস্যাও আছে। সে কথা আগেও বলেছি, এই এআই সমস্যাগুলোর সমাধান করেছে অনেক সংক্ষিপ্তভাবে। তবে সংক্ষিপ্ত হলেও সেগুলো ছিল সঠিক।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পুরাতন ৩০টি সমস্যার মধ্যে ২৫টি জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী এই পরিমাণ সমস্যার সমাধান করলে তাকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ২০০৪ সালের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যা সমাধান করতে দেওয়া হয়েছিল এই এআইকে। এটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে একই সমস্যা নানাভাবে সমাধান করে দেখিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে দুই দিনে শিক্ষার্থীদের ৬টি সমস্যা সমাধান করতে হয়। এর মধ্যে কিছু সমস্যা এত জটিল হয় যে বিশেষজ্ঞরা পর্যন্ত সমাধান করতে হিমশিম খান। আলফাজিওমেট্রি সে ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পেরেছে। তবে সমাধানগুলো হয়েছে সংক্ষিপ্ত। গবেষকেরা মনে করেন, এ জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও বেশি সৃজনশীল দক্ষতা প্রয়োগ করতে হবে।
শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন? না, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এখনই চিন্তিত হওয়ার সময় আসেনি। কারণ এসব জ্যামিতিক সমস্যা সম্পূর্ণ অলিম্পিয়াডের ৩ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। তবে ভবিষ্যতে যে এআই সেসব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, তা আসলে জোর দিয়ে বলার উপায় নেই। কে জানে, হয়তো বছর কয়েক পরে কোনো এক আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করবে এক অ-মানুষ (এআই), জিতে নেবে স্বর্ণপদক!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।