ইসলামি শরীয়তে জানাযা নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে। এটি মৃত মুসলমানের প্রতি জীবিতদের একটি ফরয কিফায়া। তবে কখন, কোথায়, কিভাবে এবং কার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে—এ বিষয়ে সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত সীমারেখা রয়েছে।
গায়েবানা জানাযা কখন জায়েয?
হাদীসে একমাত্র বিশুদ্ধ প্রমাণ পাওয়া যায় বাদশাহ নাজাশী (রহঃ)-এর গায়েবানা জানাযা সম্পর্কে। তিনি মুসলিম হলেও অমুসলিম দেশে অবস্থান করায় তাঁর জানাযা পড়ার মত কেউ ছিলেন না। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদিনায় তাঁর গায়েবানা জানাযা পড়েছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫২)। এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, যদি মৃত ব্যক্তির জানাযা আদায় না হয়, তখন গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয।
যাদের জানাযা হয়ে গেছে, তাদের জন্য গায়েবানা জানাযা?
হাদীস বা সাহাবীদের আমলে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন ব্যক্তির জানাযা হয়ে যাওয়ার পর অন্য কোথাও পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া হয়েছে।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র বলেন:
“যদি গায়েবানা জানাযা জায়েয হতো, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ ছাহাবীদের জানাযা পড়তেন, যাদের জানাযায় তিনি শরীক হতে পারেননি।”
(আল-জাওহারুন নাক্বী, ৪/৫১)
এছাড়া চার খলীফা (আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী) রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মৃত্যুর পরও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মুসলমানদের কাছ থেকে কোন গায়েবানা জানাযার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।
বর্তমান প্রচলিত প্রথা ও সুন্নাহর অবস্থান
বর্তমান সময়ে দেখা যায়, একটি লাশ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে একাধিক জানাযা নামাজ আদায় করা হয়, কিংবা লাশ রেখে পরে জানাযা পড়া হয়—এগুলো সুন্নাহসম্মত নয়।
- জানাযা পড়িয়ে লাশ রেখে দেয়া এবং পরে জানাযা আদায় না করে দাফন করা সুন্নাতবিরোধী।
- একাধিক জানাযা পড়ানো নয়, বরং প্রথম জানাযাই মূল জানাযা।
- কেউ পরে আসলে, সে চাইলে কবরে গিয়ে জানাযা আদায় করতে পারে।
যেমন:রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক সাহাবীর কবরে একমাস পরে গিয়ে জানাযা পড়েছেন।
ইবনু ওমর (রাঃ) তাঁর ভাই আছেমের জানাযা তিনদিন পরে এসে পড়েছেন। (বায়হাক্বী ৪/৪৯)
শরীয়ত অনুযায়ী যদি জানাযা না হয়, তবে গায়েবানা জানাযা জায়েয। তবে যদি জানাযা হয়ে থাকে, তাহলে পরে গায়েবানা জানাযা পড়ার অনুমতি নেই। একাধিক স্থানে জানাযা বা লাশ রেখে দাফনে বিলম্ব করা সুন্নাহবিরোধী। তাই যথাসময়ে জানাযা করে দ্রুত দাফন করাই ইসলামি নির্দেশনা।
জেনে রাখুন-
১. গায়েবানা জানাযা কাকে বলে?
যে ব্যক্তির জানাযা পড়ার সুযোগ নেই বা সে এমন স্থানে মারা গেছে যেখানে জানাযা হয়নি, তার জন্য দূরবর্তী স্থানে জানাযা পড়াকে গায়েবানা জানাযা বলা হয়।
২. কার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া জায়েয?
শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির জন্য যার জানাযা আদায় হয়নি এবং যিনি মুসলমান ছিলেন, তার জন্য গায়েবানা জানাযা জায়েয।
৩. কার জানাযা হয়ে গেলে গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে কি?
না, যদি মৃত ব্যক্তির জানাযা ইতোমধ্যেই আদায় করা হয়, তবে পরে অন্য স্থানে গায়েবানা জানাযা আদায় করা জায়েয নয়।
৪. একজনের জন্য একাধিক জানাযা করা কি জায়েয?
একাধিক জানাযার হাদীস সম্মত কোন প্রমাণ নেই। প্রথম জানাযা মূল জানাযা এবং সেটিই যথেষ্ট।
৫. পরে কেউ এলে কী করবে?
যদি কেউ জানাযায় উপস্থিত হতে না পারে, তবে সে মৃতের কবরে গিয়ে জানাযার নিয়তে দোয়া করতে পারে। এটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.