জুমবাংলা ডেস্ক: মরুভূমি বা আরব দেশের ফল হিসেবে খ্যাত সাম্মাম বা রক মেলন ফল এবার বাংলাদেশের গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে। শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের এক তরুণ উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলকভাবে এ ফল চাষে সফল হয়ে এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, মরুভূমির এ ফল চাষ সম্প্রতি বাংলাদেশে শুরু হলেও শেরপুরে এটিই প্রথম। তবে ফলন দেখে মনে করা হচ্ছে, উচ্চ মূল্যের এ সাম্মাম চাষ গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে চাষাবাদে লাভবান ও আগ্রহ সৃষ্টি করবে স্থানীয় কৃষকদের। ইতিমধ্যে আরব দেশের ফল চাষের খবর পেয়ে আশাপাশ গ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষ তার এই ফল বাগানে ভিড় করছে এক নজরে দেখতে।
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতি উপজেলার নককুড়া ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের সীমান্তঘেষা গ্রাম গোমরা। এ গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন প্রথমে ইউটিউবে দেখেন সাম্মাম উচ্চমূল্যের ফল। তাই তিনি এ ফল চাষে পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে চলতি মাসের ফেব্রুয়ারি মাসে তার পৈত্রিক ১০ শতক জমিতে ওই বীজ রোপন করেন। মাত্র ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর আরও ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল থেকে ফল এবং সর্বশেষ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে সেই ফল পাকতে শুরু করেছে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ। আনোয়ারের এ ফল চাষে এ পর্যন্ত খরচ করেছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। সব ঠিক থাকলে ফল বিক্রি হবে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। প্রতিটি ফল প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের হয়েছে। পাইকারি বাজার মূল্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি হিসেবে প্রতিটা ফল প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে বলে তার ধারণা।
কুমড়া গাছের মতো লতানো গাছ। গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে গোল গোল ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল ও ফুল। বাঁশের বাতা আর নেট ব্যাগ বা জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো ক্ষেত যেন ফলে ভরে রয়েছে। সাম্মাম ফল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বহির্বিশ্বে এ ফলের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে এটির প্রচলন এখনো কম। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মাম বলে। তবে বিভিন্ন দেশে এটি রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানি ডিউ নামেও পরিচিত। সাম্মামের দুটি জাত রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।
এদিকে প্রত্যন্ত এ গারো পাহাড়ে আনোয়ারের সাম্মাম চাষে গ্রামের অনেকেই প্রথমে সন্দিহান থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে ওই গাছে প্রচুর ফুল ও ফল দেখে আশ্চর্য হয়েছে গ্রামবাসী। সেইসঙ্গে তার এ ফল চাষে সফলতা দেখে গ্রামের অনেকে তার বাগান দেখতে এবং এ চাষে আগ্রহ হয়ে উঠেছে। কারণ গারো পাহাড়ে রয়েছে প্রচুল পতিত জমি। ওই পতিত জমিতে সাম্মাম চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চাচ্ছে কেউ কেউ।
শ্রীবরদী থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি আরবের ফল এখানে চাষ হয়েছে বলে দেখতে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে চাষ করা হয়েছে। নতুন এ ফল দেখে দেখে মন ভরে গেছে।’
এ বিষয়ে ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার জানায়, বর্তমানে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং আধুনিক চাষাবাদে তরুণরা এগিয়ে আসছে। মরুভুমির এ ফল চাষে স্থানীয় চাষিদের আশার আলো দেখছে। তেমনি উচ্চ লাভজনক এ চাষে স্থানীয় চাষিদের মনে ব্যাপক আগ্রহ স্মৃষ্টি হবে বলেও জানায় এ কৃষি কর্মকর্তা।
চীনা বাদাম চাষে ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ, ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখেছেন আরফান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।