আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পাঁচলা এলাকা থেকে একটি গাড়ি ভর্তি নগদ টাকা উদ্ধার করল পুলিশ। কলকাতা থেকে ঝারখান্ড গ্রামে ওই গাড়িতে ছিলেন পাঁচ জন। তাদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের তিনজন বিধায়ক ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। কলকাতা থেকে অন্ততপক্ষে ৫৫ কিলোমিটার দূরে এই ঘটনা নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় গোয়েন্দারা তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অর্পিতা কান্ডের পর বিভিন্ন জায়গায় বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা। পাঁচলাই উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থ অর্পিতার কিনা সেটি এখনো পরিষ্কার নয় এবং সেই টাকার পরিমাণও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য বরখাস্ত হওয়া মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতারের পর বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম, তার গ্রেফতারের পর উদ্ধার হওয়া টাকা কি বাংলাদেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায় ছিল কিংবা তা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডি হয়ে আসা টাকা। কলকাতার একটি প্রভাবশালী দৈনিকের ডিজিটাল সংস্করণে ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরের তথ্য এমন প্রশ্নই তৈরি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, ইডির তল্লাশিতে উত্তর চব্বিশ পরগনার বেলঘরিয়ার রথতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার পাশে একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। আর ওই ব্যাগের সূত্র ধরেই টাকাগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সংযোগ রয়েছে কি না; সেটা জানার চেষ্টা করছেন।
এক্ষেত্রে কলকাতার অদূরে আসানসোলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন অধ্যাপিকার নাম উঠে এসেছে। ওই নারী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলতেন বলেই ইডি সূত্রের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম তাদের খবর প্রকাশ করে।
সেখানে বলা হয়, ওই অধ্যাপিকা প্রায়ই বাংলাদেশে আসতেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাই তার হাত ধরে বাংলাদেশে কোনো অবৈধ সংযোগ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ওই অধ্যাপিকার যোগাযোগ রয়েছে বলেও কলকাতার ওই গণমাধ্যম তাদের ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশ করে।
এদিকে ইডির জেরার মুখে পঞ্চম দিনে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্পিতার নামে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ। এসব প্রতিষ্ঠান অর্পিতার নামে লিখে দেন পার্থ। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খবরও। রয়েছে বেশ কিছু সম্পদের দলিল।
এরইমধ্যে পার্থের বান্ধবী অর্পিতা জেরায় জানিয়েছেন, তার ফ্ল্যাটে যে টাকা রাখা হয়েছে, সেই টাকাগুলো সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানতেন না এবং রাতের বেলায় কিছু লোক এসে ওই ফ্ল্যাটে ব্যাগে করে জিনিস রেখে যেতেন। ওই জিনিসগুলো পার্থের বলেও জানান তিনি। ব্যাগের মধ্যে টাকা রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি জানতেন না।
তবে ইডি সূত্রের খবর, পঞ্চম দিনের জেরায় ভেঙে পড়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। কান্নাকাটি করছেন এবং কিছুই খাচ্ছেন না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাদের জেরা করা হচ্ছে উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সংযোগ রয়েছে কি না, তা জানতে। তবে এখনো কোনো যোগসূত্র কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা পায়নি বলেই জানা গেছে।
এদিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা শহর বারাসাতের একটি নামি শাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে ইডির গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন। সংশ্লিষ্ট ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ইডির গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট এই ব্যবসায়ীকে যেকোনো সময় জেরা করতে পারেন বলেই কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে।
তবে বরাবরই ইডির কর্মকর্তারা সরাসরি সাংবাদিকদের কোনো তথ্য জানান না। সরকারিভাবে বিবৃতি দেন টুইটার কিংবা ফেসবুকে তাদের নিজস্ব সরকারি পেজে।
গত শনিবার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন মমতাঘনিষ্ঠ তৎকালীন ক্যাবিনেটমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার হন তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তাদের জেরা করে দুই দফায় গোয়েন্দারা প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেন। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার এবং শত শত কোটি টাকার সম্পদের দলিল। এ ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়ে দলীয় সব পদ থেকে ছেঁটে দেয়া হয়।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন রাজ্য বিজেপির সভাপতি ডক্টর সুকান্ত মজুমদার। একই সঙ্গে মধ্য কলকাতার গান্ধী ভাস্কর্যের পাদদেশে গত ৫০৩ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষক নিয়োগে বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়ে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।