ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জন্য জাপান থেকে আসা ২০টি এস্কর্ট গাড়ি ছয় মাস ধরে পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
গাড়িগুলোর চুক্তিমূল্য দেখানো হয়েছে ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পুলিশের ধারণা ছিল, এর জন্য কর দিতে হবে ৩ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে ৭২ কোটি টাকার বেশি।
এই ২০টি ছাড়াও আরও যে গাড়ি আনবে, তার জন্য কর হিসেবে বরাদ্দ রাখা আছে ৩৯ কোটি টাকা। এই বাড়তি টাকার সংস্থান কোথায় হবে, আপাতত জানে না বাহিনীটি।
তবে একটি ব্যবস্থাপনায় আপাতত গাড়িগুলো বন্দর থেকে ছাড়ানো হবে। পরে কর পরিশোধ করা হবে, এমন একটি ব্যবস্থাপনায় রাজি হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টম কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলোর জন্য ৭২ কোটি ১১ লাখ টাকা কর দাবি করেছে।
গাড়িগুলো ছাড়ানোর জন্য ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পে এত টাকা বরাদ্দ নেই। গাড়ি কেনার জন্য কাস্টম ডিউটি বাবদ এই প্রকল্পে বরাদ্দ আছে মোট ৩৯ কোটি টাকা। সেখানে এই ২০টি ছাড়াও আরও গাড়ি আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, `গাড়িগুলো আটকে দেয়ার পর আমরা বিশেষায়িত ভেহিক্যাল হিসেবে এগুলোর শুল্ক মওকুফের জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আবেদনে সাড়া পাওয়া যায়নি।’
এই কর্মকর্তা বলেন, বিশেষায়িত যান হিসেবে গাড়িগুলোর জন্য শুল্ক হিসেবে ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এখন বাড়তি প্রায় ৭০ কোটি টাকা গুনতে হবে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫টি ফ্লাডলাইট যান ইতিমধ্যে ডিএমপির কাছে হস্তান্তর হয়েছে। যা জাপান সরকারের অনুমোদিত এজেন্সি জেআইসিএসের মাধ্যমে জাপান থেকে আনা হয়েছে।
একই এজেন্সির মাধ্যমে ১০টি আর্মার্ড কার কেনার চুক্তি হয়। চুক্তিমূল্য দেখানো হয় ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গাড়িগুলো বন্দরে আসে গত মার্চের দিকে। গাড়িগুলো বন্দরে এলে এইচএস কোড যাচাই করে কর নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ।
পরে সেগুলো ছাড় নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক সভা হয়।
সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত সবাই একমত হন। তবে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইং ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগে রিভিশন প্রস্তাব পাঠানোর জন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সভা থেকে বলা হয়েছে।
এনবিআরের বিকল্প উদ্যোগ
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়ি ছাড়াতে রাজি না হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে এনবিআর ‘ডেফার্ড পেমেন্টে’ ব্যবস্থাপনায় গাড়িগুলো ছাড় করার অনুমোদন দেয়। অর্থাৎ গাড়িগুলোর জন্য কর পরিশোধ করা হবে পরে।
অনুমোদনের কাগজটি বন্দরের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর পর গাড়িগুলো ছাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘হোলি আর্টিজানের পর জাপান থেকে ডোনেশন হিসেবে গাড়িগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। ওনারা ডিউটি ফি হিসেবে ডিক্লেয়ার দিয়েছিলেন ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আমরা সঠিক এইচ এস কোড যাচাই করে দেখি এর ট্যাক্স দাঁড়ায় ৭২ কোটি টাকা।
‘এত টাকা ট্যাক্স দেয়া লাগবে, এটা হয়তো তখন পুলিশ জানত না। গাড়ি চলে এলেও টাকা না থাকায় তারা গাড়িগুলো নিতে পারেনি।’
এখন কী হবে- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ কর অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। এখন এনবিআর থেকে একটা অনুমোদন এনেছে তারা। ফাইলটা এখনও আমাদের কাছে পৌঁছায় নাই। ডেফার্ড পেমেন্ট দেয়ার একটা অনুমোদন পেয়েছে। এই ট্যাক্সটা তারা পরে পরিশোধ করবে, এই শর্তে তারা গাড়িগুলো ছাড়াতে পারবে।’
পুলিশকে কত দিন সময় দেয়া হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্তত ছয় মাস সময় পাওয়া যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।