জমবাংলা ডেস্ক: জি ক্যাম, শুধু এইটুকু দেখে বা শুনে অনেকেই বুঝে যান এটি কি জিনিস। জি ক্যাম এর পূর্ণরূপ গুগল ক্যামেরা। আজকে আলোচনা করবো গুগল ক্যামেরার বিস্তারিত নিয়ে। এর জন্ম, কি কাজ এবং কিভাবে আপনার মুঠোফোনে ব্যবহার করবেন তার সবই থাকছে এই আর্টিকেলে।
গুগল ক্যামেরা (GCam) কি এবং বর্তমান গুগল ক্যামেরা বা জি ক্যামের জন্ম কিভাবে?
গুগল ক্যামেরা গুগলের ডেভেলপ করা একটি ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন। শুরুতে এটির নাম ছিল গুগল ক্যামেরা যেটি আগেকার গুগল নেক্সাস ফোনের ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন ছিল এছাড়াও এটি অন্যান্য এন্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করার জন্য উম্মুক্ত ছিল গুগল প্লে স্টোরে। অ্যান্ড্রয়েড কিটক্যাট ৪.৪.৪ কিংবা তার উপরের সংস্করণের যেকোনো মুঠোফোনে এটি ব্যবহার করা যেত। প্লে স্টোরে এখনো এটি থাকলেও আর কোনো নতুন সংস্করণ বের করেনি গুগল।
অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল আগের গুগল ক্যামেরাতে। একদম সহজ কাজ ছাড়া ম্যানুয়াল কিছুই করা যেতো না তাতে। তবে এটির একটি চমৎকার ফিচার ছিল লেন্স ব্লার। যার দ্বারা ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করে বেশ ভালো ছবি পাওয়া যেত।
এবার চলে যাওয়া যাক ২০১৬ সালে, যখন, গুগল তাদের নেক্সাস লাইনআপ বাদ দিয়ে শুরু করলো পিক্সেল লাইনআপ। যা ছিলো গুগলের প্রথম নিজস্ব মুঠোফোন এবং এই ফোনটি ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল প্রযুক্তি জগতে। যেখানে অ্যাপল তাদের আইফোন সেভেনে ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করেছিল সেখানে একটি ক্যামেরা নিয়েই মাঠে নামে পিক্সেল ও পিক্সেল এক্স এল।
২০১৬ তে অ্যাপল যখন দুই ক্যামেরা ব্যবহার করে পোরট্রেইট মোডের পরিচয় ঘটিয়েছিল সেখানে গুগলের নতুন ফোনে মাত্র একটি ক্যামেরা দেখে অনেকের সন্দেহ হয়েছিল যে, এটির ক্যামেরা আদৌ ভালো হবে কিনা। কিন্তু সবার সন্দেহ উড়িয়ে ভালোবাসার ফোন হয়ে যায় নতুন পিক্সেল ফোন দুটি। এর সফটওয়্যার প্রসেসড ছবি , পোরট্রেইট ছবি কিংবা নতুন এইচডিআর প্লাস ছবি কোনো অংশেই আইফোন সেভেনের চেয়ে কম ছিল না বরং বেশিই ছিল।
নতুন পিক্সেল ফোনের ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন সর্বপ্রথম পোর্ট করেন ডেভলপার বি-এস-জি এবং তিনি তার পোর্ট করা এপিকে ফাইলটি রাশিয়ান সাইট 4PDA তে প্রকাশ করেন। সেই এপিকে ফাইলটি ডেভেলপার আরনোভা আরো উন্নত করেন স্ন্যাপড্রাগন ৮xx সিরিজের চিপসেটে চালিত ফোনের জন্য। শুরুতে ওয়ানপ্লাস ৩ ও ৩টি এবং শাওমি মি ৫ , মি৫এ এর জন্য বের হলেও ডেভেলপারদের কল্যাণে আজ অধিকাংশ ফোনেই ব্যবহার করা যাচ্ছে বর্তমান গুগল ক্যামেরা বা জি ক্যাম।
বি-এস-জি , আরনোভা উনাদের পরিচয় কি?
দুজনেই ডেভেলপার। জি ক্যামের মড জগতে জনপ্রিয় দুই ডেভেলপার। বি-এস-জি সর্বপ্রথম গুগল ক্যামেরা পিক্সেল ফোন হতে পোর্ট করে সেটি উন্মুক্ত করেন এবং আরনোভা , সেই অ্যাপ্লিকেশনটি আরো উন্নত ও সহজ করে তোলেন এবং বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
গুগল ক্যামেরা দিয়ে স্ন্যাপড্রাগন ও এক্সিনস চালিত কিছু ফোনে (কিরিন বা মিডিয়াটেক চালিত ফোনে এখনো কোনো পোর্ট বের হয়নি) বেশ ভালো পোরট্রেইট এবং এইচডিআর ছবি , অসাধারণ নাইট মোড ছবি তোলা সহ পিক্সেল ফোনের গুগল ক্যামেরার অধিকাংশ ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। এর অপটিমাইজেশন বেশ ভালো হওয়ায় ফোনের ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশন থেকেও অনেক বেশি চমৎকার সব ছবি তোলা যায়। তাই গুগল ক্যামেরা আজ এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যদিও এটি অনেক ফোনে ইনস্টল করা কিছুটা ঝামেলার। কিভাবে আপনার ফোনে জি ক্যাম ইনস্টল করবেন দেখে নিন।
যা লাগবে ও যেভাবে করবেন
১. স্ন্যাপড্রাগন বা এক্সিনস( বর্তমানে শুধু কিছু গ্যালাক্সি এস ও নোট সিরিজে ব্যবহার করা যায় ) চালিত স্মার্টফোন।
২. ক্যামেরা টু এ পি আই চালু থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে প্লে স্টোর থেকে Manual Camera Compatibility এপ্লিকেশনটি ইনস্টল করে দেখে নিন আপনার ফোনে ক্যামেরা টু এ পি আই চালু আছে কিনা। যদি থাকে তবে নিচের ৬ নম্বর অপশন থেকে নির্দেশনাটি অনুসরণ করুন।
যদি না থাকে তবে ৩নং থেকে ৫নং পর্যন্ত নির্দেশনাটি ভালোভাবে অনুসরণ করুন
৩. বুটলোডার আনলকড থাকতে হবে।
৪. রুট থাকতে হবে।
৫. প্লে স্টোর থেকে Build.prop Editor এপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করুন। রুট পারমিশন দিন।
এবার উপরে ডান কোণায় চিহ্নিত কলম আইকন থেকে build.prop এ ক্লিক করে সবার নিচে যান।
এবার persist.camera.HAL3.enabled=1 এই লাইনটি কপি করে পেস্ট করুন। খেয়াল করে দেখুন সবটুকু পেস্ট হয়েছে কিনা।
এবার সেভ করে বের হয়ে আসুন ও ফোনটি পুনরায় চালু করুন।
[এডিবি বা জিপ ফ্ল্যাশ করেও ক্যামেরা টু এপিআই চালু করা যায় কিন্তু অনেক সময় চালু হয়না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফোন ব্রিকও হতে পারে। তাই সরাসরি build.prop এডিট করা উত্তম]
৬. এবার চেলসোয়া এজেভেডো এর বানানো সাইট থেকে পপুলার ডেভ অপশন থেকে অল ডেভে যান। সেখানে আপনার ফোনের জন্য আদর্শ ডেভেলপার সিলেক্ট করে জি ক্যাম মড এপিকে(apk) ডাউনলোড ও ইনস্টল করুন।
সাইটে লাল চিহ্নিত ভার্শন অবশ্যই ইনস্টল করবেন কারন ওগুলো মোটামুটি স্ট্যাবল এবং বেশিরভাগ জিক্যাম ফিচারই কাজ করে।
এবার গুগল ক্যামেরা ওপেন করে ব্যবহার করতে থাকুন!
[বুটলোডার আনলক বা রুট করলে আপনার ফোনের ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে। যদি আপনি জেনে থাকেন আপনি কি করছেন বা করবেন এবং ওয়ারেন্টি এর ব্যাপারে কোনো সমস্যা না থাকে তবেই বুটলোডার আনলক বা রুট করুন। ]
কিছু ছবি দেওয়া হলো-
মনে রাখবেন, আদর্শ গুগল ক্যামেরা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয়না। যেহেতু এগুলো পোর্ট করা সেহেতু কোন না কোন সমস্যা থেকেই যায়। তাই আপনাকে বেশ কিছু এপিকে ফাইল নামিয়ে চেক করতে হতে পারে। নাইট মোডের জন্য অবশ্যই সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।