নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট দেশ যখন উত্তাল। সকালে কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা দেশের সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। ঠিক ওই দিন গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভারতীয় পুলিশ সন্দেহে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) দুটি বাস আটকে দেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। এ সময় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় বিজিবি। এর মধ্যে একটি গুলি শাকিলের (২৮) কোমড়ে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সে।
স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না মেলায় এক দিন পর যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানেও একই অবস্থা। গুলি বের করতে না পারায় সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এখন শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটছে তার। অভাব-অনটনের সংসারে চিকিৎসা নিয়েও আছেন দুশ্চিন্তায়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে শাকিলের বাড়িতে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় তিনি অসহায় দৃষ্টিতে আকুতি জানিয়ে বলেন, অন্তত আমার গায়ের গুলিটা বের করার ব্যবস্থা করুন, সুস্থভাবে কাজ করে খাওয়ার সুযোগ করে দিন।
পেশায় গাড়িচালক শাকিল জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে। সীমিত আয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সে। এবার তার শয্যাশায়ী হওয়ায় পুরো পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তার রাফি নামের পাঁচ বছরের এক ছেলেও রয়েছে।
শাকিল জানান, এক দফা আন্দোলনে যখন উত্তাল সারা দেশ। ৫ আগস্ট সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার কাতারে এসে আন্দোলনে অংশ নেন সে। পেশায় গাড়িচালক হলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পিছপা হননি। হাজারো জনতার সঙ্গে সে দিন গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল বিজিবিকে ভারতীয় পুলিশ সন্দেহে আটক করে রাখেন স্থানীয় উত্তেজিত জনতা। সেখানে মিছিল চলছিল। এক সময় সে মিছিলে চলে মুহুর্মুহু গুলি। হঠাৎ একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শাকিলের কোমড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সে। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না মেলায় এক দিন পর যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানেও একই অবস্থা। গুলি বের করতে না পারায় সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এখন শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটছে তার। অভাব-অনটনের সংসারে চিকিৎসা নিয়েও আছেন দুশ্চিন্তা।
শাকিল বলেন, পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, মেরুদণ্ডের হাড়ের ভেতর রয়ে গেছে গুলি। সরকারি দুই হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, গুলিও বের করে দেননি তারা। গত ১৬ দিনে ধারদেনা করে চিকিৎসা ও দৌড়াদৌড়ি করে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন ঘরে খাবার নেই, ওষুধ কেনার টাকাও নেই, গুলি যে বের করতে পারবো—সে নিশ্চয়তাও কেউ দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, গুলির যন্ত্রণায় এখন মরে যাওয়ার অবস্থা। অন্তত আমার গায়ের গুলিটা বের করে সুস্থভাবে কাজ করে খাওয়ার সুযোগ করে দিন। আর না হলে পরিবারকে নিয়ে আমার না খেয়ে মরতে হবে।
শাকিলের স্ত্রী রিপা আক্তার বলেন, তার বাবা (শাকিলের শ্বশুর) মারা গেছেন। শাকিল তার মায়ের পরিবারের ভরণপোষণ করতো। শাকিলের ওপর নির্ভরশীল দুটি পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী এখন শয্যাশায়ী। রাত হলেই গুলির যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করেন। স্ত্রী হিসেবে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এপর্যন্ত ৬০-৬৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। পুরো টাকাটাই প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া। এ টাকা শোধ করবো, না নতুন করে টাকা হাওলাদ করবো?
ওয়ারীতে জমি বিক্রি করেও দখল করে নিয়েছে কথিত প্রতারক আইনজীবী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।