রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : কালো বোরকাপরা স্ত্রী ও সন্তানসহ দরিদ্র এক পরিবার গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে। পথে এক মুরুব্বির প্রশ্ন, ‘কী রে আসিনুর, গ্রাম ছেড়ে কই যাস?’ ‘কী আর করব, চাচা। গ্রামে তো কাজ নাই। তাই গাজীপুরে গার্মেন্টসে কাজ করতে যাই।’ জবাব দেন পরিবারের কর্তা। এর পরপরই বলা হয়, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড থাকলে সেখানেই কাজ করতে পারত পরিবারটি। এভাবে এলাকাছাড়া হতে হতো না।
এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে বানানো একটি ভিডিওচিত্র।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) নির্মাণের পক্ষে এমন অনেক ভিডিওচিত্র তৈরিসহ অনলাইন, অফলাইনে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
তাঁদের দাবি, গোবিন্দগঞ্জে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সরকার সেখানে ইপিজেড নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছে। কিন্তু একটি মহলের বাঁধার কারণে তা এখনো শুরুই করা যাচ্ছে না। ইপিজেডটি হলে শুধু গাইবান্ধা নয়, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে। তাঁদের আর কাজের খোঁজে এলাকা ছাড়তে হবে না।
গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রংপুর চিনিকলের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এসব জমিতে আখ চাষ হতো। চিনিকল বন্ধের পর আখমাড়াইও বন্ধ হয়। এরপর সাঁওতালরা কয়েক দফায় এসব জমি দখল করেন বলে অভিযোগ।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কলের জমি উদ্ধারে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এরপর সরকার চিনিকলের জমিতে ইপিজেড করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সাঁওতালদের একটি অংশ এর বিরোধিতা করে যাচ্ছে। তবে আরেকটি অংশ ইপিজেডের পক্ষেও আছে।
চিনিকলের জমিতে দ্রুত ইপিজেড নির্মাণ শুরুর দাবিতে বিভিন্ন সময় ঢাকাসহ নানা স্থানে কর্মসূচি পালন করে আসছেন এর পক্ষের লোকেরা। এমনকী নবগঠিত এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও এখানে ইপিজেড নির্মাণের পক্ষে দাবি করেন।
গত ৩০ মে গাইবান্ধায় এক সমাবেশে সারজিস বলেন, গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণ এই এলাকার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। একটা ইপিজেড একটি উপজেলা, জেলা এমনকী আশপাশের কয়েক জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। তাই এলাকার সব রাজনীতিবিদকে নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি না করে ঐক্যবদ্ধভাবে ইপিজেড নির্মাণের পক্ষে ভূমিকা রাখতে হবে।
যারা ইপিজেড নির্মাণের বিরুদ্ধাচারণ করবে, তাদের প্রতিহত করার আহবানও জানান সারজিস আলম।
কিন্তু সাঁওতালদের একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। পক্ষটি গত বৃহস্পতিবার সকালে গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে দুই শতাধিক সাঁওতাল ও বাঙালি অংশ নেন। মিছিলটি চারা বটগাছ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ শেষে তাঁরা সড়কের ওপর বসে পড়েন। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক অবরুদ্ধ হয়। এতে সড়কটির উত্তরপাশের যানবাহন আটকে পড়ে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
এই পক্ষের দাবি, সরকার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা করার আইনি বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করা হয়েছে।
একই দিন দুপুর ১২টার দিকে ইপিজেডের নির্মাণকাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে চারমাথা এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এতে সাঁওতাল নেতা মেখায়েল বেসরাসহ অনেকে বক্তব্য দেন। এ সময় মহাসড়কটির দুপাশে তিন-চার কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকে যায়। জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সরকারকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এমন আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, ইপিজেড হলে দুই লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে সাঁওতালরা অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু একটি মহল এর বিরোধিতা করছে। তারাই চিনিকলের জমি অবৈধভাবে দখল করে আছে।
এর আগে ২৬ ও ২৭ জুন ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে ও গাজীপুরে গোবিন্দগঞ্জবাসীর ব্যানারে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ হয়। সেখানেও আন্দোলনকারীরা একই ধরনের দাবি জানান।
অফলাইনে এসব কর্মসূচির পাশাপাশি অনলাইনেও চলছে প্রচারণা। ‘গোবিন্দগঞ্জ ইপিজেড আমাদের অধিকার’ নামের ফেসবুক পেজ থেকেও এআই নির্মিত ভিডিওসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ছবি, ভিডিওচিত্র প্রচার করা হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি একটাই, সাঁওতালসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গোবিন্দগঞ্জে দ্রুত ইপিজেড বাস্তবায়ন করা হোক।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হাড়িভাঙ্গা আম’ পাঠালেন প্রধান উপদেষ্টা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।