গোল গাছের মিষ্টি গুড়! দিনে দিনে বাড়ছে কদর
জুমবাংলা ডেস্ক: গুড়ের তৈরি পায়েস কিংবা মুখরোচক খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে। কিন্তু মিষ্টিতে সুগার থাকায় সুস্বাদু বাহারি রকম খাবার খেতে পারেন না অনেকেই। তবে প্রকৃতির সৃষ্ট গোল বাগান থেকে আহরিত রস কিংবা গুড়ে সুগার কম থাকায় দিনে দিনে এর কদর বাড়ছে। চ্যানেল ২৪ এর প্রতিনিধি এম কে রানা-র প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় বিস্তৃর্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থাকায় প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায় গোলগাছ। গোলগাছ যেন বৈপরীত্যে ভরা। নাম তার ‘গোল’ অথচ পাতাগুলো সব নারকেল পাতার মতো লম্বা। উপকূলের কৃষকেরা প্রাচীনকাল থেকেই গোলগাছের এই রস দিয়ে গুড় তৈরি করে আসছেন। এখন সেটা বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে।
শুধু গুড় নয়, গোলগাছের পাতা, ডাঁটা—কোনো কিছুই ফেলনা নয়। গোলপাতায় ঘরের ছাউনি, ডাঁটা দিয়ে চাটাই, ঘরের বেড়া, এমনকি জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় চাহিদা বাড়লেও ক্রমশই ধ্বংস করা হচ্ছে বাগান। ফলে বাগানের পাশাপাশি কমছে গাছিদের সংখ্যাও।
গোল বাগান বিনষ্টের ফলে গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন অনেক গাছিরাও করেছেন তাদের পেশার পরিবর্তন। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে বাগান রক্ষা ও নদীর তীর কিংবা লোনা জলাশায়ে গোল বনায়নের দাবি গোল চাষী এবং গাছিদের।
যেভাবে তৈরি করা হয় গোলের গুড়
লবণাক্ত পলিযুক্ত মাটিতে জন্মানো গোলগাছের ফলের কাণ্ড থেকে রস বের করার কৌশলটি বেশ অদ্ভুত। কলাপাড়া উপজেলার গোল চাষি বাবুল মিস্ত্রী জানান, এই বাগান থেকে বছরের প্রায় ৩ মাস রস সংগ্রহ করা যায়। আষাঢ় মাসে গোলগাছে ফল ধরে। আমরা এই গোল গাছের ফলকে ‘গাবনা’ বলি। অগ্রহায়ণ মাসে ফল বড় হলে এর কাণ্ডটি ফলের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়ে। এরপর কাণ্ডটিকে টেনে নুইয়ে মাটির কাছাকাছি নিয়ে নিচ থেকে দড়ি দিয়ে দিয়ে বেঁধে রাখি।
এরপর পৌষের শুরুতে নোয়ানো এই কাণ্ড পা দিয়ে আলতো করে ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে ধোয়ানো (মালিশের মতো) দিতে হয়। এতে নরম হয়ে গাছের রস ওই কাণ্ডে জমা হয়। ১২ থেকে ১৫ দিন ধরে এভাবে ধোয়ানোর পর যেকোন একদিন কাণ্ড থেকে ফলটি কেটে ফেলি। এরপর রস পেতে অপেক্ষা করতে হয় আরও ৮ থেকে ১০ দিন।
ফল কাটার পর কাণ্ডটিকে তিন দিন শুকাতে সময় দিতে হয়। তিন দিন পর কাণ্ডের মাথার দিকে পাতলা করে চেঁছে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ ধরে চাঁছার পর কাণ্ডের মাথা থেকে বের হতে থাকে সুমিষ্টি আর গাঢ় রস। এরপর ছোট ছোট হাঁড়ি বা বোতল বেঁধে সে রস সংগ্রহ করি। রাতভর ফোঁটা ফোঁটা করে হাঁড়িতে জমা রস সকালে সংগ্রহ করে চাতালে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। পৌষ থেকে ফাল্গুন—তিন মাস ধরে এভাবে চলে রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরির কাজ। আর এসব গুড় গাছিরা বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বিশেষ করে ডায়বেটিস রোগীদের কাছে লবনাক্ত এই গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি।
নেয়ামত পুর গ্রামের গাছি শেখর তালুকদার বলেন, আমাদের গ্রামের ২২টি পরিবার এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে আসেন গুড়ের জন্য। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইলে অর্ডার দেয় এই গুড়ের জন্য। আমরা কুরিয়ার বা বাসের মাধ্যমে তাদের দেয়া ঠিকানায় এই গুড় পাঠিয়ে দেই। কিন্তু দিন দিন বাগান কমে আসছে ফলে এখন আগের মতো রস পাই না তাই গুড়ের উৎপাদনও কম হয়।
একই বাড়ির ৩২ বছর বয়সী অনিতা রানী জানান, বিয়ের পর থেকেই এই কাজ করছি শুরুতে প্রতি ১০ থেকে ১৫ কলস রস পেতাম। এখন ৩ কলস পাই। রসের চার ভাগের এক ভাগ গুড় হয়। ২০ কেজি রসে ৫ কেজি গুড় হবে। এখন আর গুড় তৈরি করে সংসার চলে না তাই অন্য কাজের সঙ্গে এই গুড় তৈরি করি।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম আর সাইফুল্লাহ জানান, গোলগাছ মানুষের ঘর নির্মাণসহ প্রকৃতি রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গুড় থেকে বিশাল একটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি হাজারো মানুষ এর উপর নিভর্রশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোলবন সংরক্ষনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদী তীরে গোলচারা রোপন করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।