নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের গাজীপুর অংশের কালীগঞ্জ বাইপাস মোড় যেন একটি ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। যাত্রী ও মালবাহী অসংখ্য যানবাহনের চলাচল এই মোড়ে রোজই ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। গোলচত্বরের অনুপস্থিতি, ট্রাফিক পুলিশের দীর্ঘ অনুপস্থিতি, সরু রাস্তা ও বেপরোয়া গতির মিলিত বিপদে এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত যেন মৃত্যুকে হাতছানি দেয়।
এই মোড়টি তিন দিক থেকে আগত যানবাহনের সংযোগস্থল। একদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা শহর, অপরদিকে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এবং তৃতীয়দিকে টঙ্গী ও রাজধানী ঢাকা। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই মহাসড়কে যানচাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামমুখী অসংখ্য বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন এই মোড় ব্যবহার করে। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নেই কোনো কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থা বা নিরাপদ সড়ক পরিকল্পনা।
স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা বলছে, এখানে নিয়মিত ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। গত ১৪ মে এই মোড়েই একটি চলন্ত লরির নিচে পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান এক মোটরসাইকেল আরোহী। তা ছাড়া ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঘটনা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। পথচারী, রিকশা, অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল চালক—সবাই দুশ্চিন্তায় থাকেন কখন কোন দিক থেকে ধেয়ে আসে কোনো দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইপাস মোড়টি কার্যত একটি অনিয়ন্ত্রিত চৌরাস্তার মতো। নেই কোনো গোলচত্বর বা গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। পাশাপাশি সড়কটি সরু এবং দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকান ও হকারের দখল। তুমলিয়া মোড়ের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ব্যস্ত সময়ে যানজট কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়ে পড়ে।
পথচারী আবুল হোসেন, যিনি প্রতিদিন গাভির দুধ নিয়ে কালীগঞ্জ বাজারে যান, বলেন, ‘এই মোড় পার হওয়ার সময় মনে হয় যুদ্ধক্ষেত্র পার হচ্ছি। দুর্ঘটনা এতটাই সাধারণ হয়ে গেছে যে প্রতিদিন এখানে কিছু না কিছু ঘটেই।’
এমনই অভিজ্ঞতা শোনান কালীগঞ্জ সরকারি শ্রমিক কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখানে দুবার দুর্ঘটনায় পড়েছি। এখনো ভয় করে। প্রতিদিন কলেজে যাওয়া যেন রাশিয়ার রুলেট খেলার মতো।’
স্থানীয়রা বলছেন, বাইপাস মোড়ে একটি বড় গোলচত্বর নির্মাণ, ট্রাফিক পুলিশের স্থায়ী উপস্থিতি এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। এরই মধ্যে গণস্বাক্ষর ও স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে দাবিও জানানো হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ জানান, ‘জেলার সভায় বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে একটি স্টাডি চালানোর কথা বলা হয়েছে।’
তবে এ নিয়ে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোহাম্মদ শরিফুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।