রুশ রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্দেলিফকে বলা হয় পর্যায় সারণির জনক। ১৮৬৯ সালে গ্যালিয়ামসহ বেশ কয়েকটি মৌল সম্পর্কে নিজের পর্যায় সারণিতে আগাম অনুমান করেছিলেন মেন্দেলিফ। সেগুলোকে তিনি সংস্কৃত শব্দ একা (অর্থ এক) দিয়ে নির্দেশ করেছিলেন। এগুলো ছিল একা-অ্যালুমিনিয়াম, একা-বোরন এবং একা-সিলিকন। তাঁর মতে, অনাবিষ্কৃত এই মৌলগুলোর পারমাণবিক ওজন হওয়া উচিত যথাক্রমে প্রায় ৬৮, ৪৪ ও ৭২।
১৮৭৫ সালের দিকে মেন্দেলিফের ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে শুরু করে। সে বছর নতুন একটি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছিল। স্পেক্ট্রোসকপি ব্যবহার করে আবিষ্কারটি করেছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী পল এমিল লিকক ডি বোইসবাদরান। নতুন মৌলটির পারমাণবিক ওজন ছিল প্রায় ৬৯.৭। অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিচার করে বোঝা গেল এটিই মেন্দেলেভের অনুমিত একা-অ্যালুমিনিয়াম।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নিজের জন্মভূমি ফ্রান্সের নামে মৌলটির নাম গ্যালিয়াম প্রস্তাব করেন পল। প্রাচীনকালে ল্যাটিন ভাষায় ফরাসিদের বলা হতো গল, আর তাদের বাসভূমি বা ফ্রান্সকে বলা হতো গ্যালিয়া, সেখান থেকেই এসেছে গ্যালিয়াম। এই নামটিই সর্বজনের স্বীকৃতি পেয়েছিল।
তবে এ বিষয়ে বিজ্ঞানী মহলে এক গুঞ্জনও চালু আছে। অনেকের ধারণা, মৌলটির নাম নিয়ে কৌতুক করেছেন পল লিকক। কারণ ফরাসি শব্দ লি ককের অর্থ মোরগ। আর মোরগের ল্যাটিন অর্থ গ্যালাস। তাই পল লিকক আসলে নিজের নামেই মৌলটির নাম গ্যালিয়াম রেখেছেন বলে ঘোর সন্দেহ করেন অনেকে। তবে পল তা বরাবরই অস্বীকার করেছেন।
যা-ই হোক, গ্যালিয়াম সাদা ও নরম ধাতু। ধাতুটি এতই নরম যে একে চাকু দিয়েই মাখনের মতো কেটে ফেলা যায়। এর গলনাঙ্ক খুবই কম। তাই আপনার হাতের সংস্পর্শেই এই ধাতু গলে যেতে পারে। সূর্য থেকে আসা অগম্য নিউট্রিনো শনাক্ত করতে গ্যালিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়। মাটির নিচের চৌবাচ্চায় বিপুল পরিমাণ (১০০ টন) তরল গ্যালিয়াম ক্লোরাইড রাখা যায়, যাতে নিউট্রিনো আর গ্যালিয়াম নিউক্লির মধ্যে যেকোনো সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়। আবার এলইডিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতিতে গ্যালিয়ামের ব্যবহার আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।