আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলে স্থানান্তরের কারণে ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৮০ শতাংশেরও বেশি বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদক, পরিশোধন প্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতের ব্যবহারকারীরা গ্যাসের পরিবর্তে জ্বালানি তেল ও তরল জ্বালানি পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সম্প্রতি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের বিশ্লেষকদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকদের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিদ্যুৎ উৎপাদক, পরিশোধক ও শিল্প খাতের ব্যবহারকারীরা দৈনিক ৬ লাখ ৩৩ হাজার ব্যারেল তরল জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা তৈরিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রাক্কলিত ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিমাণ ছিল দৈনিক সাড়ে তিন লাখ ব্যারেল।
জ্বালানি পণ্যের বাজার উত্থান-পতনে বর্তমানে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা অঞ্চলটিতে জ্বালানি তেলের সরবরাহকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ৬ সেপ্টেম্বর নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের অজুহাত দেখায় দেশটি। এ ঘোষণার পর অঞ্চলটিতে ব্যাপক বাড়ে গ্যাসের দাম। এ পরিস্থিতিতে আসন্ন শীতে অঞ্চলটিতে রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটের তথ্য বলছে, ২৬ আগস্ট ইউরোপে বাজার আদর্শ গ্যাস টিটিএফের দাম প্রতি এমএইচডব্লিউ গ্যাসের দাম ৩১৯ দশমিক ৯৮ ইউরোয় উন্নীত হয়, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। ৬ সেপ্টেম্বর দাম কমে ২৩৭ দশমিক ৯৮ ইউরোয় নামলেও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চার গুণ বেশি।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে এলএনজির দামও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে মজুদ অবকাঠামোর অপ্রতুলতা পরিস্থিতিতে আরো খারাপের দিকে নিয়ে গিয়েছে।
ফলে এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এলএনজির সরবরাহ সংকটে পড়েছে। ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি আমদানি ব্যয় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব দেশের জন্য। ফলে দাম যত বেড়েছে, দেশগুলো এলএনজি ক্রয় ততটাই কমিয়েছে। আটলান্টিক ব্যাসিনে সংকটের কারণে এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। আগস্টে জেকেএম বাজার আদর্শের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ২৫ আগস্ট দৈনিক সরাসরি মূল্যায়ন অনুযায়ী প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৭১ ডলার ১ সেন্টে পৌঁছে, যা ৭ মার্চের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় দাম ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৮৪ ডলার ৭৬ সেন্ট।
বিটিইউ বেসিসে বর্তমানে ইউরোপের বাজার আদর্শ গ্যাস ও এশিয়ান এলএনজির দাম সালফার জ্বালানি তেলের চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেড়েছে। এতে যেসব দেশের বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে, সেগুলো গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলের স্থানান্তরিত হতে আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে।
আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইউরোপের পরিশোধক, বিদ্যুৎ উৎপাদক ও শীর্ষ শিল্প খাতগুলো তরল জ্বালানির চাহিদা দৈনিক ৩ লাখ ৮ হাজার ব্যারেলে উন্নীত করতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে, যা গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলে স্থানান্তরে বৈশ্বিক হিস্যার প্রায় অর্ধেক। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধিতে উদ্বৃত্ত ধরা হয়েছে দৈনিক ১ লাখ ৬৬ হাজার ব্যারেল বা ৪৭ শতাংশ। এশিয়ায় গ্যাস থেকে জ্বালানি তেলে স্থানান্তরে মোট চাহিদা প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ধরা হয়েছে দৈনিক ২ লাখ ৭১ হাজার ব্যারেল। প্রাক্কলন অনুযায়ী যা চলতি প্রান্তিকের দৈনিক ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলের তুলনায় বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।