জুমবাংলা ডেস্ক : এমনিতেই দেশে গ্যাস সংকট কাটছে না। তার ওপর একের পর এক সমস্যায় ভুগছে গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। গত সপ্তাহে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের পাইপলাইন লিকেজ হওয়ায় সংকট দেখা দেয়। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত শেষে দেশে ফিরলেও নোঙরের রশি ছিঁড়ে যাওয়ায় এলএনজি সরবরাহ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। এতে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর একটি এক্সিলারেট এনার্জির, অন্যটি সামিটের। গত মঙ্গলবার জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ছিদ্র হয়ে যায়।
জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় অলস বসে থাকে এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি। এতে প্রায় ৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। তিন দিন পর এটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। বর্তমানে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এটির মেরামত দেশে সম্ভব না হওয়ায় পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে মেরামত শেষে দেশে ফেরে গত ১০ জুলাই। ১৭ জুলাই এটি দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ টার্মিনালটি নোঙর করার জন্য যে রশি বা চেইন ব্যবহার করা হয় সেটি ছিঁড়ে গেছে।
আশা করা হচ্ছে, আগামী ২৪ জুলাইয়ের পর এটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে ১১০ কোটি গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের সংকট কাটাতে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ এলএনজি টার্মিনালের সক্ষমতা ১১০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ বাড়ানোর আগে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে ২ থেকে ৩ বছর লাগবে।
পেট্রোবাংলার ওয়েব সাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রোববার ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি মাত্র ৬০ কোটি ঘনফুট। আর দেশীয় কূপ থেকে উত্তোলন করে সরবরাহ করা হয়েছে ২০০ কোটি ঘনফুট। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাহিদা ২৩০ কোটি ঘনফুট, সরবরাহ করা হয়েছে ৯২ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ কম হওয়ায় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে ১৪০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি রয়েছে। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ শুরু হলেও ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি থেকেই যাবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি কিছু এলাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিংও করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের প্রভাব তেমন একটা না পড়লেও দেশের গ্রামাঞ্চলে তীব্র বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীতে সিএনজি স্টেশনের বাইরেও লম্বা লাইন দেখা যায়। শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আবার গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের চাপ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন আবাসিকের গ্রাহকরা। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় সকাল ৯টার পর থেকে গ্যাস থাকছে না। আসছে বিকালে বা রাতে।
শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে বারবার পেট্রোবাংলার কাছে ধরনা দিচ্ছেন মালিকরা। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও চাপ নেই। ফলে উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে। বিকল্প জ্বালানি দিয়ে উৎপাদন করতে দিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, দিন দিন দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। সেই অনুপাতে সরবরাহ বাড়ছে না। তাই সংকট রয়ে যাচ্ছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার বলেছেন, আমরা এখন ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি করে সরবরাহ করছি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটি সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত শেষে গত ১০ জুলাই দেশে এসেছে। এটি দিয়ে ১৭ জুলাই গ্যাস সরবরাহ শুরু করার টার্গেট ছিল। কিন্তু টার্মিানলটি নোঙর করার যে রশি সেটি ছিঁড়ে গেছে। তাই ২৪ জুলাইয়ের আগে এটি দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এটি থেকে সরবরাহ শুরু হলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এ ছাড়া নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ছিদ্র হয়ে যায়। দুদিনের মধ্যে তা মেরামত করে সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। শিল্পের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।