রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : আমন ধান কেটে নেওয়ার পর ফসলের মাঠ ফাঁকা। বোরো মৌসুম শুরু হতে ঢের দেরি। স্কুল খুললেও এখনো সব বই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। ফলে পড়ার চাপও কম। এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফাঁকা মাঠে নেমে পড়েছে গ্রামের শিশু-কিশোর এমনকী তরুণী বধূরা। বউচি, গোল্লাছুটসহ গ্রামীণ খেলায় মেতেছেন তারা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রামে কয়েক দিন ধরে দেখা মিলছে দল বেঁধে গ্রামীণ খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্য। আজ শুক্রবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা মাঠে একদল শিশু- কিশোর- কিশোরী বউচি খেলছে। দলে কম বয়সী তরুণী বধূও আছে। সবাই পরস্পরকে হারিয়ে দিতে তীব্র প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।
এক ফাঁকে কথা হলো তরুণী বধূ শাহানা আকতারের সঙ্গে। তিনি বললেন, তিনি দুই সন্তানের মা। তবু খেলা দেখে মন মানছে না। তাই কোমরে আঁচল বেঁধে নেমে পড়েছেন।
পাশেই কাজ করছিলেন শাহানার স্বামী শাহ আলম। তিনি বললেন, শাহানার বয়স তুলনামূলক কম। তাই মনটা এখনো কিশোরীর। আমন ধান উঠে যাওয়ায় এখন হাতে কাজও তেমন নেই। তাই বিকেলে খেলতে নেমেছে বউ।
শুধু গোবিন্দগঞ্জের ডুমুরগাছায় নয়, পাশের পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামেও দেখা মিলছে নানা খেলার। এখানে দলবেঁধে ফাঁকা মাঠে চলছিল গোল্লাছুট খেলার।
এখানে গোল্লাছুট খেলায় মেতেছিল কিশোরী মরিয়ম আক্তার। সে বলে, সে ক্লাস নাইনে উঠেছে। এখনো সব বই হাতে পায়নি। তাই স্কুলে পড়ার চাপ কম। সে কারণে বিকেল বেলায় পাড়ার ভাইবোনদের সঙ্গে গোল্লাছুট খেলছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, এতদিন ধরে মাঠ পড়েই ছিল। কিন্তু হাতে টুকটাক কাজও ছিল। এখন শীতের বিকেলে এসব মাঠে মিষ্টি রোদ পড়ে। এই মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে খেলায় নামলে শরীর যেমন উষ্ণতা পায়, তেমনি নির্মল বিনোদনও পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, গোল্লাছুট, বউছি, দাঁড়িয়াবান্ধা– এগুলো গ্রামের ঐতিহ্য। এখন গ্রামেও এগুলো কম দেখা যায়। এর বদলে গ্রামেও ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলের পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন খেলাও শুরু হয়েছে। কোনো খেলাই খারাপ নয়। তবে পার্থক্য হচ্ছে, শহুরে খেলাগুলো ব্যয়বহুল। তুলনায় গ্রামীণ খেলায় কোনো খরচই হয় না। সবাই অংশ নিতে পারে।
জাহাঙ্গীর কবির আরও বলেন, তরুণী বধূরাও এসব খেলায় অংশ নিচ্ছেন — এটাও ইতিবাচক। তাদের বিনোদনের সুযোগ এমনিতেই কম। এসব খেলার মূল উপকারী দিক এটাই– বিনা খরচে বিমল বিনোদন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।