জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার মজনুকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এর আগে রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে গত রবিবার সন্ধ্যার পর ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী। গভীর রাতে ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরের দুদিনও উত্তাল থাকে ঢাবি ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। ধর্ষককে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ, র্যাবসহ একাধিক সংস্থা।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থলের পাশে তদন্ত করছিল পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ছিলেন সাংবাদিকরাও। তখন সেখানে ঘোরাফেরা করছিল এক ব্যক্তি। প্রকাশ্যে মাদক সেবন করতে করতে ঘুরে ঘুরে তদন্ত দল ও সাংবাদিকদের কাজ দেখছিল সে। বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের ক্যামেরায় ধরা পড়ে সে দৃশ্য।
গতকাল বুধবার দুপুরে মজনুকে যখন র্যাবের গাড়ি থেকে নামানো হয়, তখন দেখা যায়, এই ব্যক্তির সঙ্গে মঙ্গলবারের সেই ব্যক্তির হুবহু মিল।
সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন-কাশেম বলেন, মজনুর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার জাহাজমারায়। তার বয়স ৩০ বছর। সে বিবাহিত, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি। বাবা-মাও মারা গেছেন।
তিনি বলেন, বর্তামনে মজনুর সঙ্গে গ্রামের কোনো যোগাযোগ নেই। ১২ বছর আগে সে ঢাকায় আসে। পেশায় হকার হলেও সে সিরিয়াল রেপিস্ট। বিভিন্ন সময় রাস্তায় প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুকসহ নারীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। তাদের হত্যার হুমকিও দিত। এ পর্যন্ত সে ৫-৬ জন নারীকে ধর্ষণ করেছে। এ ছাড়া রাস্তা থেকে পথশিশুদের তুলে নিয়ে তাদের গোসল করিয়ে যৌন নির্যাতন করতো। সে মাদকাসক্ত ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার সঙ্গেও জড়িত।
ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়া যাওয়ার উদ্দেশে বাসে ওঠেন ঢাবি শিক্ষার্থী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পর মজনু তাকে পেছন থেকে গলা ঝাপটে ধরে পাশে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়। সে দিন মজনু অসুস্থতার কারণে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাস্তায় বের হয়ে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে দেখে। এরপরই সে আলোড়িত হয় ও ধর্ষণ করার জন্য টার্গেট করেন।
পরে মেয়েটিকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু যায়। এ সময় সে ওই ছাত্রীকে বার বার চড় দিচ্ছিল। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভিক্টিম। ওই ছাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মজনু তার রেখে যাওয়া মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। গতকাল রাতে সে বনানী স্টেশনে ঘুমিয়েছে।
র্যাব জানায়, মামলাটি ক্লুলেস ছিল। মূলত ভিকটিমের মোবাইলের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হই। মজনুর কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যাগ, পাওয়ার ব্যাংক ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। মজনু সেই মোবাইলটি শেওড়া এলাকার অরুনা নামে একজনের কাছে দেয়। অরুনা সেই মোবাইলটি খায়রুল নামে একজনের কাছে বিক্রি করে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই শেওড়া স্টেশনের কাছ থেকে মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায় সে প্রায় ওই এলাকায় ওৎ পেতে থাকতো।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মজনু ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। সে স্বীকার করেছে সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে মজনু র্যাবকে জানিয়েছে, সে নিরক্ষর। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সে আর বিয়ে করতে পারেনি। তাই সে এ ধরনের কাজ করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে মজনুর ছবি দেখানো হয়েছে, তিনি ধর্ষককে শনাক্ত করেছেন। ওই ছাত্রীকে বার বার ছবি দেখানো হয়েছে। তিনি একেবারে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন, পৃথিবীর সব লোকের চেহারা ভুলতে পারবো। কিন্তু ধর্ষকের চেহারা ভুলতে পারবো না।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।