একবার ভাবুন, আপনি প্রথমবার মহাকাশে গেছেন। উপভোগ করছেন মহাশূন্যের শূন্যতা। হঠাৎ আপনার মহাকাশযান ধ্বংস হয়ে গেল। মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সঙ্গী একমাত্র স্পেস সুট। পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো উপায় নেই। এ অবস্থায় আপনি কী করতে পারেন? এখানেই জীবনের শেষ দেখে ফেলবেন? নাকি পৃথিবীতে ফিরে আসার শেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন?
এ রকম একটি কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ২০১৩ সালের বহুল প্রশংসিত সাইফাই সিনেমা গ্র্যাভিটি। সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, দুজন নভোচারী নাসার একটি মিশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। একজন নারী নভোচারী রায়ান স্টোন, যিনি জীবনের প্রথম মহাকাশে যাত্রা করবেন। অন্যজন দলের কমান্ডার ম্যাট কোয়ালস্কি। এটিই তাঁর জীবনের শেষ মিশন। নভোচারী দুজনের কাজ হাবল টেলিস্কোপে একটি নতুন স্ক্যানিং ডিভাইস লাগানো এবং টেলিস্কোপের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করা।
তাঁদের মিশন সাত দিনের। সপ্তম দিনে দেখা যায়, রায়ান মহাকাশযানের বাইরে এসে কাজ করছেন। প্রথম মিশন, তাই কিছুটা নার্ভাস তিনি। হঠাৎ পৃথিবী থেকে তাঁদের জানানো হয়, মিশন বন্ধ করে তখনই পৃথিবীতে ফিরে যেতে। কারণ, তাঁদের দিকে ছুটে আসছে একটি স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ। রাশিয়ার অকেজো একটি স্যাটেলাইটের অংশ। এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় রায়ান স্টোনদের জন্য।
পৃথিবী থেকে সতর্ক বার্তা পাঠানো হলেও রায়ান চাচ্ছিলেন কাজটা শেষ করে যেতে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই এক টুকরা ধ্বংসাবশেষ তাঁদের মহাকাশযানকে আঘাত করে এবং রায়ান মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে যান। স্টোন এখানেই তাঁর শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু ম্যাট কোয়ালস্কি তাঁর বিশেষ স্পেস স্যুট ব্যবহার করে বাঁচিয়ে দেন রায়ানকে। অবশ্য ভাগ্য তাঁদের সহায় ছিল না।
তাঁদের মহাকাশযান এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। ম্যাট সিদ্ধান্ত নেন, বিশেষ নিয়ন্ত্রিত স্পেস স্যুটের সাহায্যে তাঁরা ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার দূরের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে দুটি স্পেসক্র্যাফট নিয়ে পৌঁছাবেন পৃথিবীতে। কিন্তু এবারও নিরাশ হতে হয় তাঁদের। কেননা, স্পেসক্র্যাফট ছিল মাত্র একটি। এদিকে তাঁদের স্পেস সু৵টে অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে। ম্যাট তখন নিজের জীবন উৎসর্গ করে রায়ানকে স্পেসক্র্যাফট নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে যেতে বলেন। কেননা দুজনের একসঙ্গে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
রায়ান চাচ্ছিলেন ম্যাটকে বাঁচাতে। রায়ান স্টেশনে ঢুকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। এর মধ্যে আগুন লেগে যায় স্টেশনে। এরপরই শুরু হয় ক্লাইমেক্স। সেটি কী? রায়ান কি পারবেন বেঁচে ফিরতে কিংবা ম্যাটকে বাঁচাতে। জানতে হলে দেখে ফেলুন সিনেমাটি।
সিনেমায় রায়ানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্যান্ড্রা বুলক। ম্যাট কোয়ালস্কির চরিত্রে অভিনয় করেছেন জর্জ কলোনি। সিনেমার পরিচালক আলফোনসো কুয়ারোন। সিনেমার গল্প, অভিনয়, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দুর্দান্ত। সিনেমাটি ৮৬তম অস্কারে সর্বোচ্চ ১০টি বিভাগে নমিনেশন পায়। জেতে সাতটি পুরস্কার। ১০০ মিলিয়ন বাজেটের সিনেমাটি আয় করে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। যাঁরা মহাকাশ ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এই সিনেমা দেখা আবশ্যক। সিনেমাজুড়ে আপনি একটিথ্রিল অনুভব করবেন। জানতে পারবেন মহাকাশের এক অজানা অধ্যায়কে। বুঝতে পারবেন, মহাকাশের বর্জ্য কতটা ক্ষতিকর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।