জুমবাংলা ডেস্ক : সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের লোকজন বুধবার রাতভর আম্পানের তান্ডবের দু:স্বপ্ন কাটিয়ে এখন ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব করছেন। শ্যামনগরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত গাবুরা ইউনিয়নের নয়টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের সবাই কম-বেশি বিপর্যস্ত।
গাবুরার বাসিন্দা মানিক হোসেন, যিনি নিজে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে একজন স্বেচ্ছসেবি হিসাবে কাজ করেন, মোবাইল ফোনে বিবিসি বাংলাকে বলেন, আম্পানের তান্ডবে তিনি নিজেও চরম দুর্দশায় পড়েছেন।
আম, জাম, জামরুল, পেয়ারার বড় বাগান রয়েছে তাদের। ঝড়ে ভরন্ত এসব মৌসুমি ফলগাছের সব ফল ঝরে গেছে।
”সত্তর-আশিটি আমের গাছ আমাদের। দু-একটি গাছে চার-পাঁচটি আম আছে। আর সব মাটিতে। পেয়ারা গাছেগুলোর একই অবস্থা, জামরুল গাছের একই অবস্থা। কিছু গাছ পড়ে গেছে, আনেক গাছের গোড়া নড়ে গেছে। বাঁচবে কীনা জানিনা।“
তিনি বলেন, গাবুরার নয়টি গ্রামের সবাইর একই অবস্থা। তবে গাবুরার মানুষের প্রধান চিন্তা ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নিয়ে। মানিক হোসেন জানান, অনেকগুলো জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের সময় খোলপেটুয়া নদী থেকে হুহু করে পানি ঢুকছে। “পানি ঢুকে গ্রামগুলোকে একেকটি দ্বীপের মত লাগছে,” তিনি বলেন।
ঘরের চালে মানুষ
দু-তিনটি গ্রামে মানুষের ঘরে-উঠোনে পানি ঢুকেছে।
“কিছু মানুষ ঘরের চালে উঠে থাকছে। ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় বা পানি ওঠায় কিছু মানুষ এখনও সাইক্লোন শেলটার রয়ে গেছেন,” তিনি বিবিসিকে জানান।
গাবুরা থেকে ঝড়ের আগের দিনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাজার দুয়ের মানুষকে নদী পার করে শ্যামনগর উপজেলা সদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের অনেকে এখনও ফেরেননি।
শ্যামনগরের পদমপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য স্বপন মন্ডল বিবিসিকে বলেন, ঝড়ে তার এলাকার “ধাপা সাইক্লোন শেলটারের কাছ থেকে শুরু করে পাতাখালি স্লুইস গেঠ পর্যন্ত“ পুরো বাঁধ ধসে গেছে।
প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে এলাকার কয়েকশ লোক নিজেরাই বাঁধা মেরামতের চেষ্টা করছেন। মি মন্ডল বলেন, গত দুদিনে তেমন কোনো ত্রাণ তার এলাকায় আসেনি।
“প্রথম দিন ৩০ কেজি চাল ও ডাল পাওয়া গিয়েছিল, তা দিয়ে খিচুড়ি রেঁধে আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষকে খাওয়ানো হয়েছিল,” তিনি বলেন।
সমুদ্রে ফিরে গেছে জাহাজ
আম্পানে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বাগেরহাট জেলার মঙলা থেকে স্থানীয় সাংবাদিক আবু হোসেইন সুমন বিবিসিকে জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন জয়মনি, চিলা, বৈদ্যমারি এলাকায় শতিনেক বাড়ি ধসে পড়ায় অনেক মানুষ গতকাল খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন।
উপজেলার পক্ষ থেকে দুহাজারেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া, মঙলায় কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তার সূত্রে আবু হোসেইন সুমন জানান, বাহিনীর পক্ষ থেকে বাগেরহাট, খুলনা এবং সাক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর সাড়ে তিন হাজার পরিবারকে খাদ্য সাহায্য দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙ্গে দু হাজারের মত চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। ঝড়ের দুদিন পরও মঙলা উপজেলার সব মানুষের ঘরে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি।
তবে, ঐ সাংবাদিক জানান, মঙলা বন্দরে জাহাজ চলাচল আজ (শুক্রবার) সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে।নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের যে আটটি জাহাজ সমুদ্র থেকে মঙলা বন্দর এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল সেগুলো সকালেই সাগরে ফিরে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।