জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে বাগেরহাটের সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পচে যাওয়া ওই সব শুঁটকি মাছ থেকে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
নষ্ট হয়ে যাওয়া মাছের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল। এসব মাছ সাগরে ফেলে দিতে হবে বলে জানান দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন আহম্মেদ।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এর প্রভাবে বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের বিভিন্ন চড়ে বৃষ্টি ঝরতে থাকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকায় ভারী বর্ষণ হয়। ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনের শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোলে শুঁটকির জন্য শুকানো এবং কাচা অবস্থায় প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওইসব মাছ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বাগেরহাটের মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। এ সময়ে সুন্দরবন উপকূল এবং সাগর মোহনায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেইসঙ্গে দমকা বাতাস বয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোল নিইে দুবলার চর। ৩ নভেম্বর থেকে এই চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। যা চলবে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত। বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি জেলে, মহাজন, শ্রমিক ওই সব চরে গিয়েছেন।
এক হাজার ৩৫টি অস্থায়ী ঘর করে জেলেরা ওই সব চরে অবস্থান করছেন। সেখানে জেলেরা সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার পর ওই সব চরে নিয়ে কাটা-বাছা এবং মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিছু মাছ শুকানো হচ্ছিল, আবার কিছু মাছ শুকানোর জন্য প্রস্তত করা হচ্ছিল। কিন্তু, ২ দিন ধরে বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে চরে থাকা কাঁচা, অর্ধশুকনা এবং প্রায় শুকনা সব মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলে মহাজনদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
দুবলার চর জেলে টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, বুধবার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া বিভাগ মোংলা বন্দরকে ১নং বিপদ সংকেত জারি করে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে ওই সব এলাকায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। তিনি মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টি হতে পারে এজন্য জেলেদেরকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে ওই চারটি চরে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া, জালে ধরা পরার পর বেশকিছু মাছ জেলেরা আবার সাগরে ফেলে দিয়েছে। এখন চরগুলোতে পচা মাছের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত এসব মাছ এখান থেকে না সরালে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পচে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি ধারণা করছেন। আজ শনিবার (১৮ নভেম্বর) ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে বলে তিনি জানান।
কামাল উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরনের চরগুলোতে শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কোটি টাকার উপরে মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব পচা মাছের দুর্গন্ধে সেখানে জেলেদের থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। পচা মাছ সাগরে ফেরে দিতে হবে। তা না হলে পচা মাছের দুর্গন্ধে ওই চরগুলোতে মানুষ অবস্থান করতে পারবে না।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে দুবলার চরে শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করার জন্য সেখানে দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের স্টাফদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব জানা যাবে।
দুবলার চর থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় বেশ কয়েকজন জেলে জানান, তারা ৩ নভেম্বর দুবলার চরে যাওয়ার পর শুঁটকির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। চরে মাচায় ঝুলিয়ে এরইমধ্যে প্রচুর মাছ শুকাতে দেওয়া ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে সব মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।