দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ বাংলাদেশের উপকূলীয় জনজীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি: উপকূলের জন্য এক বড় হুমকি
ঘূর্ণিঝড় শক্তি নামটি এই মুহূর্তে উপকূলীয় মানুষদের মনে ভয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৫ মে ২০২৫ সন্ধ্যায় এই ঘূর্ণিঝড়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ী, রমজান নগর, কৈখালীসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে। এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি স্থানীয় বেড়িবাঁধ আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।
Table of Contents
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দুর্গাবাটি ও দাতিনাখালী এলাকার তিনটি স্থানে পাউবোর বাঁধের অবস্থা ভেঙে পড়ার মত দুর্বল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল এবং পুনর্নির্মাণ হলেও তা টেকসই ছিল না।
পাউবোর প্রস্তুতি ও বাস্তবতা
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, তাদের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩ কিলোমিটার অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় শক্তির সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাউবোর কর্মকর্তা ও কর্মীরা কড়া নজরদারিতে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনওভাবেই চাই না মানুষের জানমাল হানি হোক। সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
মাটির ধরন ও বাঁধ নির্মাণের সমস্যা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সানাউল ইসলাম মনে করেন, “দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মাটির ধরন ভিন্ন। বাঁধ নির্মাণের সময় কোন স্তরের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নির্মাণের সময়কাল এই উপকরণগুলোর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।”
এই জটিল প্রকৃতির কারণে এলাকাবাসী প্রায়ই বিপদের মুখোমুখি হন। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা এবং ২০২০ সালের ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিপুল ক্ষতি হয়েছে এবং এই ক্ষতির রেশ এখনো রয়ে গেছে।
উপকূলবাসীর উদ্বেগ ও সচেতনতা
২০০৯ সালের ২৫ মে গাবুরা দ্বীপ ইউনিয়নে আইলার আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর প্রায় দুই বছর পানিতে ডুবে ছিল এলাকা। এই স্মৃতি এখনো তাদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘূর্ণিঝড় শক্তির আগমন সেই আতঙ্ককেই নতুন করে উস্কে দিয়েছে।
গাবুরার সাবেক মেম্বার আবদুর রহিম বলেন, “আমাদের হরিষখালী, পার্শেমারী, টেকেরহাট, গাবুরা, চকবারা, লেবুবুনিয়া—এসব জায়গার বাঁধগুলো অনেক পুরনো ও জরাজীর্ণ। বাঁধ প্রতিনিয়ত ভাঙছে। এই অবস্থায় যদি শক্তি সরাসরি আঘাত হানে তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”
ঘূর্ণিঝড় শক্তি যেন আবারও উপকূলবাসীকে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তবে এবার প্রশাসন, পাউবো এবং স্থানীয় জনগণ সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পরিস্থিতি যেভাবেই হোক, সচেতনতা এবং সহযোগিতাই হতে পারে এ দুর্যোগ মোকাবিলার মূল হাতিয়ার।
অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে একশন শুরু: সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও কঠোর পদক্ষেপ
FAQs: ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
- ঘূর্ণিঝড় শক্তি কখন উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে?
ঘূর্ণিঝড় শক্তির সর্বশেষ গতিপথ অনুযায়ী, এটি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে পারে। - এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে?
প্রবল জলোচ্ছ্বাস, বাতাসের তীব্রতা, এবং দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবন—এসব কারণে ঘূর্ণিঝড় শক্তি থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। - প্রশাসনের পক্ষ থেকে কি ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে?
প্রশাসন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত, বাঁধ মেরামত, জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো, এবং বিপদ সংকেত প্রচার করছে। - সাধারণ মানুষ কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারেন?
স্থায়ী ও নিরাপদ ভবনে আশ্রয় নেওয়া, রেডিও ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আপডেট থাকা এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা সবচেয়ে কার্যকর। - ঘূর্ণিঝড় শক্তি পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর তুলনায় কেমন?
শক্তি অত্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা ২০০৯ সালের আইলা এবং ২০২০ সালের আম্পানের মতনই বিপজ্জনক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।