বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আবহাওয়াগত পরিস্থিতি জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল মানুষ যখন স্বস্তির আশায় তাকিয়ে, ঠিক তখনই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হতে যাওয়া সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় – ঘূর্ণিঝড় শক্তি – এক নতুন উদ্বেগের নাম হয়ে উঠেছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, যার সম্ভাব্য নাম দেওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত নাম ‘শক্তি’।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি: সর্বশেষ তথ্য
ঘূর্ণিঝড় শক্তি সম্পর্কে আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ উল্লেখ করেছেন যে, বঙ্গোপসাগরে যেভাবে নিম্নচাপ, বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি এবং গড় তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটছে, তাতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
Table of Contents

তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।” আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, সচেতনতা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
সূত্রে জানা গেছে, ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা প্রবল। সেই সঙ্গে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে এটি আছড়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিস্তারিত পড়ুন আবহাওয়া আপডেট বিভাগে।
বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থা এবং ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে যে আবহাওয়াগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরির পূর্বাভাস বহন করছে। নিম্নচাপের সৃষ্টি, বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা, এবং জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া, এসবই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পক্ষে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল – বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগ – সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্রবল বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা উপকূলও রয়েছে সরাসরি ঝুঁকির মুখে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নদীকেন্দ্রিক ফেরিঘাটগুলো খালি রাখতে হবে এবং উপকূলীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
একটি সরকারি আবহাওয়াবিষয়ক প্রতিষ্ঠান জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানলেও এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত – রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম প্রয়োজন সচেতনতা। ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, উদ্ধারকারী দল সক্রিয় রাখা এবং জনগণকে আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সচেতনতা এবং দ্রুত প্রস্তুতির মাধ্যমে অনেক বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। যেমনটি হয়েছিল আম্পান ও সিত্রাংয়ের সময়। তাই এবারও সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাগুলো প্রস্তুত আছে, কিন্তু সাধারণ জনগণের সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ঢাল।
নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের পর্যায়
- নিম্নচাপ: প্রথমে সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
- ডিপ্রেশন: এরপর এটি নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়।
- ঘূর্ণিঝড়: তারপর এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
এই ধাপগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটতে পারে এবং তাই আবহাওয়া অফিসের নজরদারি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
FAQ: ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
ঘূর্ণিঝড় শক্তি কবে আঘাত হানতে পারে?
আবহাওয়া অফিসের মতে, ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড় শক্তি উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি কোথায় আঘাত হানবে?
ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড় কতটা শক্তিশালী হতে পারে?
আবহাওয়াবিদদের মতে, এটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে যার ফলে প্রবল বৃষ্টি, দমকা হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
সরকার কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে?
সরকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে এবং জনগণকে আগাম সতর্ক বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাদের উপর বেশি পড়বে?
দক্ষিণাঞ্চল – বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কী করণীয়?
সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া এবং অপরিহার্য জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিয়ে সর্বশেষ আপডেট জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়ে অবগত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।

জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।