ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশন তথা পরিচালনার কাজ শুরু করবে সৌদি আরব ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে। পুরোদমে এই কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় বছরে ৩০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে অপারেশন শুরু করতে যাচ্ছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে। চুক্তি স্বাক্ষরের চার মাসের মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের বাধ্যবাধকতা থাকায় ইতোমধ্যে যন্ত্রপাতিও নিয়ে আসতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিসিটি নির্মাণের পর তিন বছরের বেশি সময় ধরে খালি পড়ে ছিল। বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সবচেয়ে কাছের এবং সুবিধাজনক অবস্থানে হওয়ার পরও টার্মিনালটির অপারেশন নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। তবে শেষ পর্যন্ত সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে পহেলা এপ্রিল থেকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং শুরু করবে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জনবল নিয়োগ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে অপারেশন শুরু করবে রেড সি গেটওয়ে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটিগুলোতে নাব্যতা সংকটের কারণে সাড়ে নয় মিটার গভীরতার বেশি জাহাজ ভেড়াতে না পারলেও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে পতেঙ্গায় গ্যান্টি ক্রেনের সুবিধা না থাকায় এখানে শুধু গিয়ার ভেসেল ভিড়তে পারবে।
এদিকে চুক্তির নানা শর্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেতে যাচ্ছে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ের কাছ থেকে।
এর মধ্যে প্রতিটি ১০০ মার্কিন ডলার হিসাবে কমপক্ষে আড়াই লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জের ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রিভার মুরিং চার্জ, পাইলটিং চার্জও রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল।
তিনি বলেন, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করে কর্ণফুলী নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে ওঠা এই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে একসঙ্গে ৩টি জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আর বছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে ৫ লাখের বেশি।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সৌদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২২ বছরের জন্য চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশ্য তার আগে ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টার্মিনালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চুক্তির দিন থেকে ২২ বছর চট্টগ্রাম বন্দরের এ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিপাক্ষিক এই চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেলো বিদেশিরা।
উল্লেখ্য, এবারই প্রথম সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। এ ছাড়া লালদিয়ার চড়ে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান মায়েরস্ক লাইন, প্রস্তাবিত বে টার্মিনালে দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড, সিঙ্গাপুরের সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটিসহ আরও কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
দেশের ৯৪ ভাগ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আবার মূল রফতানি বাণিজ্যের ৯৮ ভাগ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যে হারে বাড়ছে, তাতে বন্দরে আরও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনেক আগেই দেখা দিয়েছিল। পিসিটির ব্যবহার শুরু হলে বন্দরের টার্মিনালের সংখ্যা দাঁড়াবে চারটিতে। অফরদিকে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দরের মূল জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২১টিতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।