ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া তরুণ বাবর আলী (৩৪)। পেশায় চিকিৎসক সন্তানের এভারেস্ট জয়ে উচ্ছ্বসিত তার বাবা লিয়াকত আলী ও মা লুৎফুন্নাহার বেগম।
রোববার (১৯ মে) দুপুরে এক প্রতিক্রিয়ায় বাবরের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘আজ আমার আনন্দের শেষ নেই। আমার ছেলে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে। এই অর্জন আনন্দের-গর্বের-উল্লাসের।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে খবর পাচ্ছিলাম। আজ সকাল ৮টায় চূড়ান্ত খবর পাই, ছেলে এভারেস্ট জয় করেছে। এরপরই বিভিন্নস্থান থেকে মানুষজন বাড়িতে আসতে শুরু করে। পুরো বাড়ি আজ আনন্দে ভাসছে।’
বাবর আলীর মা লুৎফুন্নাহার বেগম বলেন, ‘ছেলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল, এভারেস্ট জয় করবে। বাবর খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। চিকিৎসক হিসেবে পেশা শুরু করলেও তার নেশা ছিল ভ্রমণ। ছেলে এভারেস্টে যাবে এজন্য মা হিসেবে বুকের ভেতরে ভয় কাজ করলেও সাহস রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন অনেক চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় ছিলাম। ছেলে এভারেস্টের চূড়ায় ঠিকমত উঠতে ও নেমে আসতে পারবে কি না। সারাক্ষণ জায়নামাজে বসে দোয়া করেছি। শেষ পর্যন্ত সুস্থ অবস্থায় বাবর এভারেস্ট জয় করেছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের।’
‘আমরা এখনো চিন্তায় আছি। কারণ বাবর এখনও নেমে আসেনি। ছেলে যতক্ষণ আমার বুকে না আসবে ততক্ষণ চিন্তা কাটবে না।’ যোগ করেন তিনি।
গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বাবরের মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান। ১০ এপ্রিল এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। ২৬ এপ্রিল বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে এভারেস্ট ক্যাম্প-২ এ পৌঁছালেও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ফিরে আসেন তিনি।
তারপর এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার মতো উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাবর আলীকে। শেষ পর্যন্ত যাত্রা শুরু হয় গত ১৪ মে। এদিন তিনি দ্বিতীয় ক্যাম্পে, ১৮ মে তৃতীয় ক্যাম্পে এবং ১৯ মে ভোরে ক্যাম্প ফোরে পৌঁছান।
বাবর আলী ১৯ মে ভোরে ডেথ জোন নামে পরিচিত শৃঙ্গে আরোহণ করেন এবং মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন।
বাবর আলীর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে এভারেস্ট জয় করেছেন, মুসা ইব্রাহীম, এম. এ. মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাসরিন ও মো. খালেদা হোসাইন। এঁদের মধ্যে খালেদ হোসাইন এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে নিখোঁজ হন।
২০১৭ সালে ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের উত্তরকাশী শহরের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন বাবর।
২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম আরোহণ করেন তিনি।
এভারেস্ট জয়ের আগে বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। তার মধ্যে রয়েছে সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।