চন্দ্র সূর্যের মতো সময়ের নিয়ন্ত্রকও একমাত্র আল্লাহ
এম এ মান্নান : বর্ষ পরিক্রমা মহান আল্লাহর বিধান। বাংলা সন বা দিনপঞ্জি তৈরি হয়েছে সৌরবর্ষের ভিত্তিতে। এ সনের সঙ্গে রয়েছে হিজরি সনের সম্পর্ক। চন্দ্রবর্ষীয় হিজরি সনের সৌরবর্ষীয় সংস্করণ হলো বাংলা সন। মহানবী (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত থেকে হিজরি সনের শুরু। বাংলা সনের উদ্ভব মুঘল শাসনামলে। খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে চালু করা হয় এই সন।
চন্দ্র সূর্য সবকিছুই যেমন আল্লাহর সৃষ্টি তেমন চান্দ্রবর্ষ বা সৌরবর্ষ, যেভাবেই সময়কে ভাগ করা হোক, সবকিছুর নিয়ন্তা মহান আল্লাহ। সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ তিনিই যিনি সৃষ্টি করেছেন রাত, দিন, চন্দ্র ও সূর্য। এর প্রতিটিই পরিভ্রমণে নিয়োজিত রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগ সহকারে।’ এ বিষয়ে সুরা ইয়াসিনের ৩৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘সূর্য কখনোই চন্দ্রকে ধরতে পারবে না কিংবা রাত কখনো অতিক্রম করতে পারবে না দিনকে। প্রতিটিই পরিভ্রমণে নিয়োজিত নিজ নিজ কক্ষপথে, নিজস্ব গতিবেগ সহকারে।’
আল্লাহ যেহেতু সময়ের নিয়ন্তা সেহেতু সময়কে ভালো-মন্দ ভাবার সুযোগ নেই। সময় কেমন হবে তা নির্ভর করে মানুষের আচরণের ওপর। মানুষ আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সদ্ব্যবহার করলে তার কল্যাণ হবে। আর অগ্রাহ্য করলে ডেকে আনবে নিজের অকল্যাণ। এ ক্ষেত্রে সময়কে দোষ দেওয়া অযৌক্তিক। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, বনি আদম আমাকে কষ্ট দেয়, সে যুগকে গালি দেয় অথচ আমিই যুগ, আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৯১)
পবিত্র কোরআনেও একই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দেব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭) । মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর খলিফার মর্যাদা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর হাবিবকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের মধ্য থেকে। মানুষের উচিত আল্লাহ প্রদত্ত সময় অর্থাৎ দিন, রাত ও বছরকে তাঁর নির্দেশিত পথে অতিবাহিত করা। এ বিষয়ে গাইডলাইন রয়েছে আল কোরআনের বিভিন্ন সুরায়। সুরা ফাতিহায় সরল পথ পাওয়ার জন্য এবং বিপথগামীদের পথ থেকে রক্ষা পাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সুরার ৫-৭ আয়াতে আছে, ‘তুমি আমাদের সরল পথ দেখাও, তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ, তাদের পথ নয় যারা ক্রোধে নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।’ মানব জাতির সবারই আল্লাহর রহমত যে পথে সে পথ অনুসরণ করা উচিত। দ্বিতীয় সুরা বাকারার তৃতীয় আয়াতে রয়েছে, ‘সৎ জীবিকা থেকে ব্যয় করার আদেশ সৃষ্টিকর্তার।’ এ ব্যাপারটি প্রত্যেক মানুষ মেনে চললে পৃথিবীতে একটি সুষম সমাজ গড়ে ওঠবে। সম্পদ বণ্টনে ভারসাম্য হবে। অসৎ উপার্জন থেকে মানুষ বিরত থাকলে পৃথিবীতে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ৪২ নম্বর আয়াতে রয়েছে, ‘মিথ্যার সঙ্গে সত্য না মিশিয়ে ফেলার আদেশ এবং জেনেশুনে সত্য গোপন না করার কথা।’ আল কোরআনের এ ঐশী শিক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও চর্চা মানুষকে সঠিক পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করবে এমনটি কাক্সিক্ষত। ৪৪ নম্বর আয়াতেই রয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের কথা বল আর নিজেরা ভুলে থাক, আবার কিতাবও পড়? তবু কি তোমরা বুঝবে না?’ অর্থাৎ কোরআন পাঠ করলে ও উপদেশ দিলে হবে না, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তিজীবনে সৎ, সুন্দর হয়ে অন্যদের জন্য উদাহরণ হতে হবে। ৬০ নম্বর আয়াতেই রয়েছে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি না করার উপদেশ। ৮৩ নম্বর আয়াতে ‘এক সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের পাশাপাশি শিক্ষা রয়েছে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিনদের প্রতি সদয় হওয়ার আদেশ, মানুষের সঙ্গে সৎভাবে কথা বলার আদেশ।’ আল কোরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানুষকে যেভাবে চলার উপদেশ দিয়েছেন সেভাবে চলার মধ্যে রয়েছে সত্যিকারের জাগতিক ও আখেরাতের শান্তি। নতুন বছরে মুমিনরা আনন্দ করবেন, এমনটিই স্বাভাবিক। তবে এ আনন্দের প্রকাশ ঘটাতে হবে সর্বশক্তিমানের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে। ভাবতে হবে পরলৌকিক জীবনের কথা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফল। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ্য ছাড়া কিছু না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
আল্লামা ইবনু কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘সময় নষ্ট করা মৃত্যুর চেয়েও বেশি ভয়াবহ। কেননা সময়ের অপচয় তোমাকে আল্লাহ, পরকাল ও জান্নাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে। আর মৃত্যু তোমাকে কেবল পৃথিবী ও তার অধিবাসীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। পৃথিবীতে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হলো সেই কাজে লিপ্ত থাকা, যা অধিক উত্তম ও পরকালে বেশি উপকারী।’ (মাওয়ারিদুজ জামআন লি-দুরুসিজ জামান : ৪/৪৬৯)
নতুন বছরে আমরা যাতে আল্লাহ এবং রসুল (সা.)-এর নির্দেশে চলতে পারি সে ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। অতীতের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা চাইতে হবে। আল্লাহ আমাদের আগামী দিনগুলো, বছরের প্রতিটি দিন তাঁর নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দান করুন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।