রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: উদাস দুপুর কিংবা বিষণ্ণ বিকেলে মন খারাপ? দারুণ দুপুরে কোথাও জিরিয়ে নিতে চান? অথবা ব্যস্ত বিকেলে মিলেছে একটু ফুরসত? গাইবান্ধার আশপাশে যদি থাকেন, তাহলে চলে যেতে পারেন ঘাঘট নদের পাড়ে।
আর যদি রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোনো জনবহুল এলাকা থেকেও এসে থাকেন আপনিও ঢুঁ মারতে পারেন ঘাঘটের তীরে। এখানকার নির্জন নদী আপনাকে নিরাশ করবে না।
গাইবান্ধা শহর গড়ে উঠেছে ঘাঘটের তীরে। তবে পুরান সে নদের প্রবাহ পালটে দেওয়া হয়েছে। তাই শহরঘেঁষা নদটি এখন মরা খাল। এর পরিবর্তে শহর থেকে সামান্য দূরে নিরিবিলি বয়ে চলেছে নতুন ঘাঘট। তাই এখানে নেই কোনো শহুরে কোলাহল।
জেলা শহরের পশু হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা মুরাদ হাসান বলেন, গাইবান্ধা শহরকে বন্যার কবল থেকে বাঁচানোর জন্য নদের গতিপথ পালটে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ঘাঘট হয়েছে দুইটা– একটা পুরান ঘাঘট, আরেকটা নতুন ঘাঘট।
গাইবান্ধা শহর থেকে অটোরিকশায় সুন্দরগঞ্জ সড়ক ধরে উত্তরে ১৫-২০ মিনিট গেলেই নতুন ব্রিজ। এর নিচ দিয়েই পূর্ব-পশ্চিমে বয়ে গেছে নতুন ঘাঘট।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শান্ত ঘাঘট কুলকুল রবে নীরবে বয়ে চলেছে। নতুন ব্রিজের আশপাশে দোকানপাট থাকলেও বাঁধ ধরে যেকোনো দিকে গেলেই গ্রাম এলাকা।
বাঁধ ধরে পূর্বদিকে এগোলে একটি চমৎকার রেস্টুরেন্ট। চাইলে যাতায়াতের পথে এখানেও কিছু সময় কাটাতে পারেন। এর ভেতরের পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
রেস্টুরেন্ট পেরিয়ে দেখা যায়, গৃ্হস্থবাড়ির ভিটা চুম্বন করে নদী বয়ে চলেছে আপন মনে। আর কিছুদূর গেলে বাঁধের রাস্তার দুধারে চারাগাছ লাগানো হয়েছে। কয়েকজন সেসব চারা পরিচর্যা করছেন।
একজন চারাপরিচর্যাকারী জানালেন, গাছগুলো সমিতির মাধ্যমে লাগানো হয়েছে। সবাই সেগুলো দেখাশোনা করেন।
সবুজ গাছপালা পার হয়ে আরও কিছুদূর এগোলো দেখা যাবে সেখানে ঘাঘট বাঁক নিয়ে চলে গেছে দুদিকে। নদীর বাঁকের এই জায়গাটা মোহনা। দুটি নদীর মিলনস্থল।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক বললেন, এখানে সোজা পূর্ব দিকে চলে গেছে ঘাঘট। সেটি বালাসিতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে। আর দক্ষিণে চলে গেছে আলাই নদী। সেটি পুলবন্দী হয়ে গোবিন্দগঞ্জের কাড়াখালীতে পড়েছে।
আলাই নদীর ধার ঘেঁষে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার পক্ষ থেকে সিমেন্টের বেঞ্চ পাতা রয়েছে। রয়েছে গোল ছাউনিও। কিন্তু দর্শনার্থী কম।
এলাকার কয়েকজন বললেন, এতদূর যে বসার জায়গা আছে, অনেকেই জানেন না। তবু ইদে কিছু দর্শনার্থী আসেন। অন্য সময় পড়েই থাকে বেঞ্চগুলো।
আশরাফুল ইসলাম নামের একজন দর্শনার্থী জানালেন, যেহেতু লোকজন কম, তাই নির্জনে সময় কাটাতে চাইলে এটা খুব ভালো জায়গা। দুপুরে মন উদাস থাকলেই তিনি এখানে আসেন।
নতুন ব্রিজ থেকে পশ্চিম দিকে বাঁধ ধরে এগোলে কিছু দূর গেলেই সিমেন্টের বেঞ্চ পাতা দেখা যায়। রয়েছে ছাউনিও। এদিকে দর্শনার্থী কিছু বেশি। তবে আরও পশ্চিমে গেলে নদী কয়েকটা বাঁক নিয়ে বয়ে গেছে। এদিকটায় মানুষ কম।
এই এলাকায় কথা হয় শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি এসেছিলেন স্ত্রী-পুত্রসহ।
শাহনেওয়াজ বলেন, উদাস দুপুরে কিংবা ব্যস্ত বিকেলে কোলাহলমুক্ত সময় কাটাতে চাইলে ঘাঘটপাড় খুব ভালো জায়গা। নদের তীরে নরম হাওয়া আপনার মন ভালো করবে নিমিষেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।