বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : পাঁচ দশক পর চন্দ্রপৃষ্ঠে মানব নভোচারীদের ফেরানোর পরিল্পনায় নাসার গন্তব্যস্থল চাঁদের দক্ষিণ মেরু। সব পরিকল্পনামাফিক এগোলে এবারই প্রথম নারী নভোযাত্রীর পদচিহ্ন পড়বে চাঁদের বুকে।
৭০-এর দশকের শুরুতেই সমাপ্ত হয় নাসার অ্যাপোলো কর্মসূচী। সফল ওই মিশনগুলোয় চাঁদে প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর পাঁচ দশকে আর কোনো মানব পদচিহ্ন পড়েনি চাঁদে। এবার আর্টেমিস মিশনে ফের চাঁদে যেতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যে কয়টি লক্ষ্য রয়েছে মিশনটি ঘিরে তার অন্যতম হচ্ছে – মিশনে অন্তত একজন নারী নভোচারী রাখা যিনি চাঁদে নামবেন।
আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত একাধিক মাইলফলক অর্জনের চেষ্টা করছে, প্রথম নারী নভোচারী পাঠানো তার একটি। প্রযুক্তি সাইট সিনেট বলছে, কেবল নভোচারী নয়, আর্টেমিস মিশনের উৎক্ষেপণ প্রধান হিসেবেও রয়েছেন একজন নারী – ব্ল্যাকওয়েল-থম্পসন।
লক্ষ্য হিসেবে চাঁদের বুকে প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ নভোচারীও রয়েছে নাসার তালিকায়।
এসবের পাশাপাশি, ২০২৫ সালের আর্টেমিস ৩ মিশনে নভোচারীদের অবতরণের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ১৩টি স্থানের তালিকা প্রকাশ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
চাঁদের এই অঞ্চলটি এখনও কার্যত অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে মহাকাশ গবেষকদের কাছে। গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের অভাবে পৃথিবীর উপগ্রহের এ অঞ্চলটি ‘ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন’ হিসেবেও পরিচিত।
আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে গবেষণার জন্য পানির বরফের নমুনা সংগ্রহ করবেন নাসার নভোচারীরা। ২০২৫ সালেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আর্টেমিস ৩ অবতরণ করাতে চায় নাসা।
চাঁদে পা রাখা প্রথম মানব নিল আর্মস্ট্রং এক ঐতিহাসিক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন- “একজন মানুষের ছোট্ট এই পদক্ষেপ আসলে গোটা মানবজাতীর জন্য এক দীর্ঘ লাফ।”
সেই বাণীর সূত্র ধরেই বর্তমান পরিকল্পনার ব্যাখ্যা দিয়ে নাসার ‘আর্টেমিস ক্যাম্পেইন ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন’-এর উপ সহযোগী প্রশাসক মার্ক ক্রাসেচ বলেছেন, “চাঁদের মানুষ ফেরানোর বেলায় আমরা আরেকটা বড় লাফ দেওয়ার মতো দূরত্বে আছি।”
“আগের অন্য যে কোনো মিশনের চেয়ে আলাদা হবে এটি। মানুষের কাছে অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে এমন অঞ্চলগুলোতে পা দেবেন নভোচারীরা, ভবিষ্যতের দীর্ঘ মিশনগুলোর ভিত্তি স্থাপন করবেন তারা।”
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে ১৩টি এলাকাকে আর্টেমিস ৩ অবতরণের জন্য বিবেচনা করছে নাসা, তার মধ্যে আছে-
ফাউস্টিনি রিম এ।
শ্যাকলটনের নিকটবর্তী পর্বতৃশৃঙ্গ।
সংযোগস্থাপনকারী শৈলশিরা।
ওই শৈলশিরার বর্ধিত অংশ।
ডে গ্রেলাস রিম ১।
ডে গ্রেলাস রিম ২।
ডে গ্রেলাস-কোশার ম্যাসিফ।
হাওর্থ।
ম্যালাপার্ট ম্যাসিফ।
লিবনিটজ বেটা সমভূমি।
নোবাইল রিম ১।
নোবাইল রিম ২।
অ্যামুন্ডসেন রিম।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, নাসা প্রাথমিকভাবে অবতরণের জন্য যে ১৩টি গন্তব্যস্থল নির্বাচন করেছে সেখানে বছরের বিভিন্ন সময় অবতরণ করা সম্ভব। ফলে, আর্টেমিস ৩-এর উৎক্ষেপণ আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে গেলেও বড় কোনো বিলম্ব হবে না মিশনে।
অবতরণের স্থানটি চিহ্নিত করতে ‘লুনার রিকনিসেন্স অরবিটার’ মহাকাশযান এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক উৎস থেকে সংগৃহিত তথ্য নিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের ওই অঞ্চলটি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেছেন নাসার গবেষকরা। এ ছাড়াও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ওই অঞ্চলে সূর্যের আলোর উপস্থিতি এবং পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগের মতো বিষয়গুলো।
এ ক্ষেত্রে নিজস্ব ‘স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস)’ রকেট, ওরিয়ন মহাকাশ যান এবং স্পেসএক্সের তৈরি ‘স্টারশিপ হিউম্যান ল্যান্ডিং সিস্টেম’-এ কার্যক্ষমতাও বিবেচনায় নিয়েছে নাসা।
আর্টেমিস ৩-এর অংশ হিসেবে চাঁদে সাড়ে ছয়দিন কাটাবেন নভোচারীরা। মিশনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পর অবতরণের চূড়ান্ত স্থান ঘোষণা করবে মহাকাশ সংস্থাটি।
অন্যদিকে, এ মাসের ২৯ তারিখেই আর্টেমিস ১ মহাকাশে পাঠাচ্ছে নাসা। চন্দ্রপৃষ্ঠের ৬০ মাইলের মধ্যে পৌঁছে উপগ্রহটির মাধ্যাকর্ষণ আর মহাকাশের বিকিরণ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে মহাকাশযানটি। এ ছাড়াও চাঁদের কক্ষপথে কয়েকটি ছোট ছোট স্যাটেলাইট লঞ্চ করবে এবং ছবি তুলবে মহাকাশযানটি।
আর নভোচারীদের নিয়ে চাঁদের চারপাশে চক্কর দেবে আর্টেমিস ২ মিশনটি। ২০২৪ সালের মে মাসে এ মিশনের পরিকল্পনা করে রেখেছে নাসা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।