জুমবাংলা ডেস্ক: বুক সমান গাছ!! কোনটা আবার ৫/৬ ফুট ছাঁড়িয়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট হলুদ রঙের কমলা। এরই মধ্যে অনেক ফলেই পাকা রং ধরেছে। ফলটির নাম ‘’চায়নিজ কমলা’’। সুদূর চীন দেশে ব্যাপক চাষ হয় বলে ফলটির এমন নামকরণ। তবে বগুড়া জেলার সদর উপজেলার গোকুল ইউপির পলাশবাড়ী দক্ষিনপাড়া গ্রামের কমলাচাষী আজিজুর রহমান ও মাহমুদ বাবুল এর বাগানে এই ফলটির চাষ হচ্ছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কমলা চাষ দেখতে আশে পাশের লোক সহ দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। দেখছেন, কেউবা আবার তুলছেন ছবি।
কমলাচাষী মাহমুদ বাবুল জানান, ২০১৮ সালে নিজের ১১ শতক জমিতে ১২টি চাইনিজ কমলার চারা রোপন করেন। সে সময় তিনি সঠিক জানতেনও না, এই গাছে কেমন ফল হবে। প্রায় দুই বছর পর গাছে ফল আসে। এতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন তিনি। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে কমলার চাষ করতে প্রথম ১০/১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সামান্য কিছু পরিচর্যা করলেই এ চাষে সাফল্য আসে। কমলা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে ৩০-৩৫ কেজি কমলা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। প্রায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই বাগান চত্বর। তখন মনটা খুশিতে ভরে যায়।
কথা হয় কমলাচাষী আজিজুর রহমান এর সাথে। তিনি জানান, “গ্রামে তিনি সবজির আবাদ করতেন। বছর চারেক আগে আমার পুত্র বাবুল চুয়াডাঙ্গা থেকে সবজি চাষের পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে পারিবারিক চাহিদা পুরণ ও পরীক্ষামূলক ভাবে কমলার চারা লাগায়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গাছ গুলো। ২০২০/২১ এ কমলার ফলন হয় যা দেখে আমরা আরো অনুপ্রাণিত হই। পরে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ২২টি কমলার চারা দিয়ে বাগান গড়ে তুলি। বাগানে কাজ করছে ১০-১৫ জন শ্রমিক। ভালো পরিচর্যার কারণে ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে বাগান থেকে বিনামূল্যে মানুষকে এই কমলা খাওয়ানো হয়। তাই কমলা আমরা বিক্রি করি না। আমাদের প্রত্যাশা সাধারণ মানুষেরা বিষমুক্ত সকল শাক সবজি ও ফল গ্রহণ করুক”।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে থোকায় থোকায় কমলা লেবুতে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান। যা দেখে যে কারোরই মন ভরে উঠবে। বাগান দেখতে আসা রসুল খন্দকার জানান, ‘’বাগানে প্রতিটি গাছে কমলার ফলন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি। বাগানের কমলা দেখে আমি মুগ্ধ৷ আমাদের জেলাতেও যে কমলা চাষ সম্ভব তা তারা করে দেখিয়েছে। এতো সুন্দর, মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা উৎপাদন নিজ চোখে না দেখলে বুঝা যেত না”। নামুজা থেকে দেখতে আসা দর্শনার্থী সুলতানা বেগম বলেন, “পাশের গ্রামেই হামার বাপের বাড়ি, বেড়াবের আসে শুননু ইটি বলে কমলার আবাদ হচে, সিডেই এনা দেখপের আনু, কমলার গাছ দেকে ভালই লাগলো”।
যদি কমলার আবাদ করা হয় তাহলে শুধু এই অঞ্চলের উৎপাদিত কমলা বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে। তাই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের চায়না কমলার বাগান করার পরামর্শ দেন মাহমুদ বাবুল। তিনি আরো বলেন, “কমলার চারা গুলো মূলত ২ বছরের মধ্য ফলন দেয় যা ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ১১ শতাংশ জমিতে ১২টি চারা থেকে শুরু হওয়া শখের বসে গড়ে তোলা এই বাগান এখন ৭০ শতক জায়গায় রুপ নিয়েছে। নাম দিয়েছেন “মুহিত এগ্রো”। মূলত কৃষি বিপ্লব করায় মূখ্য উদ্দেশ্য বলে জানান এই নতুন কমলাচাষী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।