স্পোর্টস ডেস্ক: দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিরুদ্ধে অভিযোগের হাড়ি খুলেছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। তবে বিসিবির নোটিশ দেয়ার আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
বুধবার (২৪ আগস্ট) দেশের আরও একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে ডমিঙ্গো নিজেই চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসন্ন এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে কোনো দায়িত্বে রাখা হয়নি ডমিঙ্গোকে। টি-টোয়েন্টি থেকে একবারেই সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। এরপর দেশে ফিরে যান তিনি। দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি তার।
যদিও বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী ডমিঙ্গো এখনও প্রধান কোচ এবং বুধবার পর্যন্ত ডমিঙ্গোর কাছ থেকে পদত্যাগপত্র পায়নি বলেও জানায় বিসিবি।
বাংলাদেশে ভালো সময় যাচ্ছিল না ডমিঙ্গোর। জাতীয় দল-সংশ্নিষ্ট একজন জানান, কোচিং স্টাফ ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল তাঁর। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল নানা ইস্যুতে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঢাকা ফেরার সময় ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাইটে যাতায়াত করতেন দু’জনে। বিসিবি থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ডমিঙ্গোর একক কর্তৃত্ব কোচিং স্টাফের বাকিরা মেনে নিতে পারছিলেন না। জাতীয় দল নিয়ে তাঁর উদাসীনতা বেড়ে যাওয়ায় ক্রিকেটাররা বিরক্ত ছিলেন।
একজন ক্রিকেটার বলেন, ‘কোচের কথা কেউ শুনত না। এ রকম কোচ থাকলে অস্ট্রেলিয়া দলও ঘুমিয়ে যাবে। মুখস্থ কিছু কাজ ছাড়া কিছুই করতেন না। জেমি সিডন্সকে দেখতে পারতেন না। ম্যাচের কঠিন পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা দেওয়া হয় সব দলেই। ডমিঙ্গো নিজে তো দিতেনই না, অন্যদেরও বাধা দিতেন। এ রকম কোচের কথা খেলোয়াড়রা কেন শুনবে!’
প্রধান কোচ হিসেবে দলে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সত্য বলে স্বীকার করেন ডমিঙ্গো। এসএমএসে তিনি জানান, ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা দিতেই এটা করতেন তিনি। ‘ক্রিকেটারদের কেন বলতে হবে- এটা করো, ওটা করো। যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাঁদের। কোচরা যে যাঁর মতো বার্তা দিতে চেয়েছেন। সেটা করতে দেওয়া ঠিক হতো না।’
দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে উড়ছিলেন ডমিঙ্গো। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভরাডুবি হতে পারে- কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের উন্নয়ন বা প্রশিক্ষণ নিয়ে উদাসীন ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার ঢাকায় ফিরে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। টি২০ দলের কোচের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে একটা বার্তা দেওয়া হয়েছিল প্রধান কোচকে। এরপরও টেস্ট এবং ওয়ানডে দলের কোচ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দেশে ফিরে যান ২৩ আগস্ট।
বিসিবির সঙ্গে বোঝাপড়া হওয়ার পরও চাকরি ছাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে ডমিঙ্গো বলেন, ‘বিসিবিতে আমার সময় শেষ। আর থাকছি না।’ পাল্টা প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কি সত্যিই বিসিবি ছেড়ে যাচ্ছেন? ডমিঙ্গোর দুই শব্দের উত্তর, ‘ইয়েস স্যার।’
বিসিবির তোলা বেশিরভাগ অভিযোগ মেনে নিয়েছেন টাইগার প্রধান কোচ। কিছু পাল্টা অভিযোগও আছে তাঁর দিকে থেকে। যদিও বোর্ড থেকে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী ফোন না ধরায় ডমিঙ্গোর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় যায়নি। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ডমিঙ্গোর পদত্যাগ করার কথা ৩০ নভেম্বরের পর। সে ক্ষেত্রেও তিন মাসের নোটিশ দিতে হবে তাঁকে। অবশ্য উভয় পক্ষ রাজি থাকলে যে কোনো কিছুই হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।