জুমবাংলা ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আকর্ষণীয় বেতনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে একটি চক্র। এই চক্রের মূলহোতা স্বামী-স্ত্রী। চাকরির নামে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে আদায় করা হত। এ পর্যন্ত ৭০০- ৮০০ জনের সঙ্গে প্রতারণার করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।
সম্প্রতি এমন প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরখান থানার আটিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলো- কথিত সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামসুন্নাহার ওরফে মায়া (৩৩) ও তার স্বামী মো. জুয়েল ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস (২৪), ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার (২৩), মেহেদী হাসান(২১), আল মামুন ওরফে মাসুদ (২১), তাজবির হাসান ওরফে লোহান (১৯)।
এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০ টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ভিজিটিং কার্ড, টাকা আদায়ের রশিদ, ১০১ টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, সীল, ১৫ টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিষ্টার, আটটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি পাশে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা সাবেক সেনা কর্মকর্তার বডিগার্ড, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতো। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবন বৃত্তান্ত জমা নেয়া হত। কয়েকদিন পর যোগাযোগ করে বলা হত চাকরি হয়েছে।
অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা নেয়া হত। এরপর চাকরি না দিয়ে তাদের বলা হত তাদের মতো আরও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহে। চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে পার্সেন্টেজ হিসেবে ১ হাজার ১০০ টাকা দেয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি এ পর্যন্ত ৭০০-৮০০ লোকের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
তারা এই টাকাগুলো কোন খাতে ব্যয় করে জানতে চাইলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অর্থ পাচারের কোন তথ্য পায়নি। তবে এ অর্থ দিয়ে তারা বিলাসবহুল জীবন-জীবন যাপন করতেন এবং তাদের কোম্পানির প্রচারণার জন্য এ টাকা দিয়ে ফেসবুক বোস্টিং করত।
এর আগেও তারা এমন কোন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি তারাই এই মামলার বাদী হবেন। এছাড়া তাদের আগের কোন প্রতারণার তথ্য আমাদের কাছে নেই তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি ভুয়া সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করত এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন। তারা আট মাস ধরে এই কাজ করে আসছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, এর আগেও আমরা এরকম প্রতারণাকারীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে তারা জামিনে বের হয়ে অন্য নামে একই ধরণের কোম্পানি খুলে বসে।
সুজন বর্মণ নামে এক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে খুলনার বাগেরহাট থেকে ঢাকায় এসেছেন। উদ্দেশ্য একটি সিকিউরিটি কোম্পানির সহকারী সুপারভাইজার পদে চাকরি করবেন। কিন্তু চাকরি নিতে আসা সুজনকে বলা হয় তার মতো আরও তরুণদের আনতে। কিন্তু এক মাসেও কাউকে না আনতে পারায় কোনো টাকাই পাননি। এই এক মাস নানা কষ্টে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান সুজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।