জুমবাংলা ডেস্ক : লেখাপড়া শেষ করেছে ছুটেছেন চাকরির পেছনে। চাকরিও পেয়েছিলেন ভালো একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। কিন্তু ধরাবাঁধা নিয়মে আটকে থাকতে চাননি তিনি। স্বাধীনভাবে কিছু করতে চেয়েছেন সবসময়। নিজের মতো করে দাঁড়াতে চেয়েছেন জীবিকার শক্ত ভিতের ওপর। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার কারণে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা।
বলছি একজন সফল উদ্যোক্তা সারোয়ার হোসেনের কথা। তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেকেও সব সময় উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেসলে বাংলাদেশের ডিট্রিবিশন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার চাকরি ছেড়ে নেমে পড়েন কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়। প্রথমে কোয়েল পাখি পালন এবং ডিম উৎপাদনের কাজে, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেন।
এভাবে তিনি সফলতার দিকে এগিয়ে চলতে শুরু করেন। এরপর ২০১৮ সালে ডিসেম্বর শুরু করেন বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ। গত মাত্র ১ বছরের ব্যবধানেই বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে দেশীয় মাছ চাষ করে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন সারোয়ার হোসেন। তবে তরুণ এ উদ্যোক্তার দাবি, সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া গেলে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে দেশীয় মাছ চাষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।
সারোয়ার হোসেনের শুরুটা হয়েছিল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে ইচ্ছা জাগে যান্ত্রিক এ পদ্ধতিতে তিনিও মাছ চাষ শুরু করবেন। এরপর তিনি এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ঢাকার খিলক্ষেতের ডুমনি বাজার এলাকায় অন্যের পতিত জমি লিজ নিয়ে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন।
প্রথমে একটি বায়োফ্লোক ট্যাংকি দিয়ে শুরু করলেও এখন প্রায় ৮টি ট্যাংকিটিতে চাষ করছেন। মাত্র ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে শুরু করলে এখন তার বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখের বেশি। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানের। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে ট্যাংকি তৈরি করে স্থানীয় জাতের শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা, সিলন ও ট্যাংরা জাতের মাছ চাষ করে যুব উদ্যোক্তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি।
সারোয়ার হোসেনের বায়োফ্লোক পদ্ধতির মাছ চাষ দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুবকরা তার হ্যাচারিতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে মাছ চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। কম খরচে দেশীয় জাতের মাছ চাষের পরামর্শ দিয়ে স্থানীয় বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। অল্প সময়ে তার সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেছেন।
বায়োফ্লোক পদ্ধতি মাছ চাষ সম্পর্কে সারোয়ার হোসেন জানান, মাছ চাষের আগে প্রতিটি খাঁচায় চুন, লবণ, চিটাগুড় ও প্রবাইটিক দিয়ে সাত দিন পর্যন্ত পানির কালচার (মিশ্রণ) করতে হবে। এরপর খাঁচায় স্থানীয় জাতের শিং, কৈ, মাগুর, পাবদা, সিলন ও ট্যাংরা মাছ চাষ করা যাবে। প্রতিটি খাঁচার মধ্যে মাছের সাইজ অনুযায়ী পরিমিত খাবার দিতে হবে।
১০ হাজার লিটারের একটি ট্যাংকিতে প্রতি তিন-চার মাস পর ৭-৮ মণ মাছ উৎপাদন করা যাবে। সারোয়ার হোসেন আরও বলেন, ভিন্ন দেশি এই পদ্ধতি গবেষণার মাধ্যমে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে চাহিদা মতো মাছ উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে মৎস্যচাষিদের ভরসা বায়োফ্লক প্রযুক্তি।
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় পুকুরের সমান মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করা সহজ। বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যা পানির গুণমান এবং ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করে। জলীয় খামার ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোবায়াল প্রোটিন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে।
স্থানীয় বাজারে যা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করা যাবে। সরোয়ার হোসেনের মতে, বাংলাদেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয়নি। যদি বেকার যুবকদের বিনা সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয় তাহলে বাণিজ্যিকভাবে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে মাছ চাষে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি দেশীয় জাতের মাছের উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব। তথ্যসূত্র: যায় যায় দিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।