জুমবাংলা ডেস্ক: সোহেল মাহমুদ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এখন তার অফিসেই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু মনের টান অগ্রাহ্য করতে না পেরে তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন রাজধানীতে বিকাশ কার্যালয়ের সামনে। এখানে কয়েক শত তরুণ-তরুণীর সাথে মিলে তিনি যোগ দিয়েছেন বিকাশসহ সব ব্র্যাক পণ্য বর্জনের দাবিতে। আর এই দাবিটা তারা করছেন ব্র্যাকের শিক্ষক আসিফ মাহাতাব উৎসর চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদে।
আজ ‘সচেতন মুসলিম জনতা’ ব্যাপারে দুপুর দেড়টা থেকে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার এবং দুপুর ২:২০ থেকে স্বাধীনতা টাওয়ারের বিকাশ কার্যালয় ঘেরাও করেন এই তরুণ-তরুণীরা। তাদের সবার হাতে ছিলো প্লাকার্ড ও ব্যানার। সেসব প্লাকার্ডে ছিলো নানা ধরণের স্লোগান-‘বয়কট বিকাশ’, ‘সমকামী ব্র্যাকের চালিকাশক্তি বিকাশ বয়কট করুন’ বা ‘লুত জাতীর দেশের বিকাশের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই’।
জেন্ডার ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি বক্তব্য দিয়ে এবং সপ্তম শ্রেণির একটি বইয়ের দুটি পাতা ছিড়ে আলোচিত হয়েছেন আসিফ মাহাতাব উৎস। সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষক ফোরামের ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে জনসম্মুখে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্পটি ছিঁড়ে ফেলেন উৎস, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আসিফ মাহতাব অভিযোগ করেন, ‘সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবই ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্প আছে। আমি বইটি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসেছি। এখানে লেখা আছে ছোটবেলা সবাই আমাকে ছেলে বলতো। কিন্তু আমি নিজেই একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। সে (ছেলে) যদি মেয়ে হয় তাহলে তার বিয়ে হবে কার সঙ্গে? অবশ্যই ছেলের সঙ্গে। তার মানে এটা সমকামী, যা আমাদের দেশে অবৈধ। কিন্তু সেটাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এই গল্পের মাধ্যমে। এটাতো স্কুলে ছেলেমেয়ের এক প্রকার ব্রেনওয়াশের মতো করা হচ্ছে, যেটা ইউরোপ-আমেরিকাতে করা হয়।’
উৎসর এই বক্তব্য দেওয়ার পর তাকে ব্র্যাকের শিক্ষকতায় আর না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকে ব্র্যাকের বিপক্ষে চলছে আন্দোলন।
সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও তাদের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাবেশ করেছেন। সেখান থেকে ব্র্যাকের সব পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়। আর এই ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল ব্র্যাকের অন্যতম অঙ্গসংস্থা বিকাশের কার্যালয় ঘেরাও করেন তরুণ-তরুণীরা। সেখানে হাতে বিভিন্নরকম প্লাকার্ড লিখে নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন তারা।
ঘেরাও সমাবেশে থাকা এরকমই এক তরুণ সোহেল মাহমুদ। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের ধর্ম ও সংষ্কৃতি এইসব ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামীতাকে অনুমোদন দেয় না। আমরা আমাদের ধর্মের বাইরে যেতে পারি না। উৎস স্যার এই বিষয়টাই বলেছেন। তার ফলে তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়ে ব্র্যাক পশ্চিমা এই অপসংষ্কৃতির পক্ষে দাড়িয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’
সমাবেশে থাকা এক তরুণী শাহনাজ ইসলাম বলছিলেন, ‘উৎস স্যার কী অন্যায় করেছেন। তিনি ইসলামের পক্ষে কথা বলেছিলেন। তাই তাকে চাকরি হারাতে হলো। তাহলে কী এই দেশে ইসলামের পক্ষে কথা বলা যাবে না? ব্রাক আমাদের শত্রুর মত কাজ করেছে। আমরা তাই ব্রাকের সবকিছু বর্জন করতে চাই। বিকাশও আর চলবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুন বলছিলেন, ‘আমরা সমকামীদের এই দেশে থাকতে দেবো না। এরা সমকামীতা ছড়াচ্ছে। তাই আমরা এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।’
ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বইয়ের অধ্যায়টি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।