আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জুলাইয়ে চীনের শিল্প উৎপাদন ও খুচরা বিক্রির পরিমাণ প্রত্যাশিত পরিমাণের চেয়ে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল তা অনেকটাই গতি হারিয়েছে। নতুন করে কভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির ঘটনায় ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাবে এমনটা ঘটেছে বলে দেখা যায়। খবর রয়টার্সের।
জুলাইয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের শিল্প উৎপাদনের মাত্রা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সম্প্রতি দেশটির ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের (এনবিএস) প্রকাশিত তথ্যে এ চিত্র উঠে আসে।
বিশ্লেষকরা আশা করেছিলেন জুলাইয়ে উৎপাদনের মাত্রা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। জুনে এ প্রবৃদ্ধির মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
এনবিএসের তথ্যে দেখা যায়, জুলাইয়ে গত বছরের তুলনায় খুচরা বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেকটাই কম। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী জুলাইয়ে চীনের খুচরা বিক্রয় প্রবৃদ্ধির মাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। জুনে খুচরা বিক্রিতে দেশটি ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল।
বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রাক-মহামারী স্তরে পৌঁছেছে, কিন্তু ব্যয়ের উচ্চহার ও সরবরাহ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার ফলে এ প্রবৃদ্ধি তার গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে দেখা যায়। জুলাইয়ে নতুন করে কভিড সংক্রমণ দেখা দিলে দেশটিতে পুনরায় মহামারীসংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাশাপাশি এ গ্রীষ্মে প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলে চীনের কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এনবিএসের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর সোমবার এশিয়ার পুঁজিবাজারে দরপতন দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্রে হঠাৎ করেই তীক্ষ্ন মন্দা দেখা দেয়ায় এ দরপতনের ঘটনা ঘটে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে জুনে পরিসংখ্যান দপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে চীনের রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখা যায়। এ চিত্র দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে একটি আশাব্যঞ্জক অবস্থার প্রতিফলন দেখায়, যা ২০২০ সালে মহামারীর কারণে হ্রাস পেয়েছিল। তবে জুলাইয়ের প্রকাশিত তথ্যে এ প্রবৃদ্ধিতে অপ্রত্যাশিত মন্দার চিত্র ফুটে ওঠে।
এক মন্তব্যে জাপানভিত্তিক অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান নোমুরার বিশ্লেষকরা জানান, আগস্টে চীনের ব্যবহার, শিল্প উৎপাদন এবং বিনিয়োগ একসঙ্গে হ্রাস পেতে পারে। কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সম্পত্তি ও উচ্চদূষণকারী শিল্পগুলোতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে এমনটা ঘটতে পারে বলে জানায় বিশ্লেষকরা। উৎপাদনের ওপর এমন নিয়ন্ত্রণের ফলে ২০২০ সালের এপ্রিলের পর থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশটির অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
এরই মধ্যে সর্বশেষ কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বেশ কয়েকটি শহরে কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন। এসব বিধিনিষেধ দেশটির পরিষেবা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে, বিশেষ করে পর্যটন ও আপ্যায়ন খাত তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দেখা যায়।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশীয় ইকোনমিকস প্রধান লুইস কুইজ এক মন্তব্যে জানান, কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে চীন। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশায় উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরিতে প্রভাব রাখবে। যদিও দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ জনগণ এরই মধ্যে কভিড টিকার আওতায় চলে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।