জুমবাংলা ডেস্ক : শিশুদের যতই বকাঝকা করা হোক না কেন, তারা কথা কানে তোলার পাত্র নয়। কোনও কিছু না বুঝেই তারা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এমনই একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে দিল্লির জিকরা মালিক। বয়স ১১ মাস। খাট থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ওই খুদে। তবে দস্যি জিকরাকে বেডে শুয়ে রাখতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থায় হয় নার্স থেকে চিকিৎসকদের। তাই তার প্রিয় পুতুলকে কাছে রেখেই চলছে চিকিৎসা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের দিল্লিতে বসবাস ১১ মাস বয়সী ছোট্ট জিকরার। এই বয়সেই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠেছে পরি। দিনভর ঘরময় ছোটাছুটি করে বেড়ায় জিকরা। জিকরার ছোটাছুটিতে সব সময়ের সঙ্গী তার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে কাছের পরি। একমুহূর্তের জন্যও পরিকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরতে দেয় না জিকরা। এমনকি হাসপাতালের বিছানাতেও প্রিয় পুতুল পরিকে ছাড়তে রাজি নয় সে। শুধু তা-ই নয়, জিকরার ভাঙা পায়ে প্লাস্টার করতে তার পুতুল পরির পাও প্লাস্টার করতে হয়েছে দিল্লির লোক নায়ক হাসপাতালের ডাক্তারদের!
আরও জনা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে দিল্লির লোক নায়ক হাসাপাতেলর শিশু বিভাগের ১৬ নম্বর বেড জিকরার ঠিকানা। বেডে জিকরার সঙ্গে রয়েছে তার পরী পুতুলটিও। দুজনেরই দুটি পা ট্রাকশন রড দিয়ে ঝোলানো। এমন দৃশ্য হাসপাতালে বিরল।
জিকরার মায়ের কথায়, গত ১৭ অগস্ট, দিল্লি গেটের বাড়িতে বিছানা থেকে পড়ে যায়। তারপর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা জানান যে ছটফটে মেয়েটির থাইয়ের হিউমার হারটিতে চিড় ধরেছে। ফলে পা অপরাশেন করার আগে, ট্রাকশানের সাহায্যে হারটির অবস্থান সঠিক করা আগে জরুরী। ২ বছরের নিচে ও ১৫ কেজির নিচে থাকা শিশুদের ট্রাকশানের রডের মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া হা-পা বেঁধে রাখাটা অন্যতম পদ্ধতি।
মা ফরিন জানিয়েছেন, পাঁচ মিনিটের কম সময় সে একটি জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। সব সময় একটা জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় চলে যায়। প্রথমদিন হাসপাতালে এসে বেডে শুতে চায়নি জিকরা। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, শুয়ে পা সোজা ঝুলিয়ে রাখতে হবে যে ভাবেই হোক। কিন্তু অনবরত নড়াচড়া আর বেডে শুতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলেন জিকরার অভিভাবকরা।
তার কথায়, বাড়িতে তার এক পুতুল রয়েছে, যাকে জিকরা পরী বলে থাকে। কোনও কিছু নতুন শেখাতে গেলে পরীর মধ্যে দিয়েই জিকরাকে শেখানো হয় বাড়িতে। সেই নিয়ম মেনে মায়ের অনুরোধেই বাড়িতে থাকা প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে আসা হাসপাতালে। জিকরার পা-কে ট্রাকশান রডের ঝোলানোর জন্য পরীরও পা বেঁধে দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই সে চুপচাপ শুয়ে থাকা শুরু করে।
হাসপাতালের ওই ফুটফুটে মেয়েটিকে দেখতে ছুটে আসেন অন্য বিভাগের নার্সরাও। শিশু বিভাগটির নাম হয়ে গিয়েছে গুডিয়া ওয়ালি বাচ্চি।
পেশায় সবজি বিক্রেতা বাবা মহম্মদ শেহজাদ জানান, বন্ধুর মতো মনে করে আদরের পুতুল পরীকে। চিকিৎসকরাও এই উপায়ের ফলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। প্রথমের দিকে পেনকিলার, চকোলেট গিলেও জিকরার কান্না থামানো যায়নি। কোনও বাচ্চাকেই একই পজিশনে একই ভাবে শুয়ে রাখা অসম্ভব। তবে আদরের পুতুলের জন্য এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাল একরত্তি জিকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।