জুমবাংলা ডেস্ক : চাতাল শ্রমিক চাঁন মিয়া (৪০) কিছুদিন ধরে বার্জারস রোগে (থ্রোম্বোএঞ্জাইটিস অবলিটারেন্স) আক্রান্ত হন। বাম পায়ের দগদগে ঘা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। একটি আঙুল পচে খসে পড়েছে; অপর আঙুলেরও একই অবস্থা। মিতা বেগম সাধ্যমতো চিকিৎসা করিয়েও কাজে অক্ষম স্বামীকে সুস্থ করতে পারেননি।
শরীরে প্রচণ্ড দুর্গন্ধের কারণে কেউ বাড়ি ভাড়াও দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি গত ৩ আগস্ট বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের আড়াইগ্রামে নাগর নদের তীরে কাপড় ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু বানিয়ে সেখানে চাঁন মিয়াকে রাখেন। এরপর তিনি আট বছরের ছেলেকে নানির বাসায় রেখে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান।
গ্রামবাসী গত কয়েক দিন তার খোঁজখবর নেননি। পাঁচ দিন পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, গ্রামপুলিশের মাধ্যমে তিনি খবর পান তার থানা এলাকাসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী আদমদীঘি উপজেলার আড়াইগ্রামে নাগর নদের তীরে কাপড়ের তাঁবুতে অসুস্থ ব্যক্তি পড়ে রয়েছেন। যে কোনো সময় শিয়াল বা হিংস্র কোনো প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলতে পারে। স্ত্রী যে শুকনো খাবার দিয়ে গেছেন, তা গত পাঁচ দিন খেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে পায়ে পচন রোগে আক্রান্ত চাঁন মিয়াকে শুয়ে থাকতে দেখেন।
জিজ্ঞাসাবাদে চাঁন মিয়া জানান, তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুণাহার ইউনিয়নের পাওগাছা তালপুকুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আবদুল জোব্বারের ছেলে। প্রায় ১০ বছর আগে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলায় মিতা বেগমকে বিয়ে করেন। সংসারে আট বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবার নিয়ে আগে গুচ্ছগ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। পরবর্তীতে তার মা আসমা বেগম মারা যাওয়ায় বাবা আবদুল জোব্বার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎমা সংসারে আসার পর অশান্তি দেখা দেয়।
বাধ্য হয়ে চাঁন মিয়া স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকার চাতালে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ গত এক বছর শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাটে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। কিছুদিন ধরে তিনি বার্জারস নামে জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হন। বাম পায়ে পচন ধরে। একটি আঙুল খসে পড়ে গেছে। অপর একটি আঙুলেরও একই অবস্থা। একপর্যায়ে তিনি কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
একদিকে সংসারে অভাব, অন্যদিকে স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হিমশিম খান স্ত্রী মিতা বেগম। এরপরও ধারদেনা ও সাহায্য নিয়ে স্বামীকে চিকিৎসা করিয়েছেন। এতেও চাঁন মিয়া সুস্থ না হওয়ায় ও ঘরে খাবার না থাকায় মিতা ঢাকায় কাজের জন্য যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শেষপর্যন্ত তিনি স্বামীকে আদমদীঘির নাগর নদের তীরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ৩ আগস্ট সেখানে কাপড়, বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে তাঁবু তৈরি করেন। নিচে মাদুর বিছিয়ে চাঁন মিয়াকে রাখেন। এর আগে তিনি ছেলেকে কাহালুর নানির বাসায় রেখে আসেন। ঢাকায় পাড়ি জমানোর আগে মিতা বেগম কিছু শুকনা খাবার ও পানি দিয়ে যান। চাঁন মিয়া গত কয়েক দিন সেখানে ওই খাবার ও পানি খেয়ে বেঁচে আছেন। তবে শিয়াল বা হিংস্র কোনো প্রাণী তাকে আক্রমণ করেনি। গত কয়েক দিন গ্রামবাসী কেউ তার খোঁজ নেয়নি; খাবারও দেয়নি। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে গত কয়েক দিন তিনি অমানবিকভাবে তাঁবুতে পড়ে ছিলেন।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর নির্দেশনা অনুসারে চাঁন মিয়াকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
পরবর্তীতে চান মিয়ার স্ত্রী মিতা বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসা ও খাবার খরচ বহনে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি স্বামীকে নাগর নদের ধারে রেখে এসেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।