চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ ‘জিপিটি-৪’ ; ছবি বুঝতে সক্ষম, মানুষের আবেগকে নকল করতে পারে

চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ 'জিপিটি-৪'

চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ ‘জিপিটি-৪’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চার মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর একটি ছোট কোম্পানি নতুন অনলাইন চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি চালু করে প্রযুক্তি জগতে ঝড় তুলেছিল। সেটা জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে, কবিতা লিখতে এবং এমনকি মানুষের আবেগকেও নকল করতে পারে।

চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ 'জিপিটি-৪'

ওপেনএআই নামে সংস্থাটি এবার সেই প্রযুক্তির নতুন সংস্করণ নিয়ে এসেছে। এর নাম জিপিটি-৪। এটা আগের চ্যাটবটকে আরও বহুলাংশে উন্নত করেছে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণে সিলিকন ভ্যালির দৌড়ের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তি শিল্পে পরবর্তী প্রজন্মের নেতা কে হবে, তা নির্ধারণ করবে এই প্রযুক্তি।

প্রযুক্তিখাতে সাড়া জাগানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির নতুন সংস্করণ জিপিটি-৪ প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। আগে শুধু টেক্সট বুঝতে পারলেও এবার থেকে ছবিও বুঝতে পারবে চ্যাটজিপিটি। নতুন সংস্করণটি আগের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন।

ওপেনএআই জানিয়েছে, জিপিটি-৪ এর নিরাপত্তা বিষয়গুলো নিশ্চিতে তারা ৬ মাস ধরে কাজ করেছে এবং মানুষের মতামতের সাহায্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে জিপিটি-৪ এ এখনো ভুল তথ্য চলে আসতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

নতুন এই সংস্করণ সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়। চ্যাটজিপিটি প্লাস সাবস্ক্রাইবাররা শুধুমাত্র এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মাসিক চার্জ ২০ ডলার (২ হাজার ১১১.৪৭ টাকা)।

YouTube video player

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ৩৭৫ জন কর্মচারী রয়েছে ওপেনএআইর। তবে মাইক্রোসফটসহ আরও অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানিটি। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এর নতুন প্রযুক্তি জিপিটি-৪কে অন্তর্নিহিত ইঞ্জিন হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটা সার্চ ইঞ্জিন থেকে ব্যক্তিগত অনলাইন টিউটর পর্যন্ত চ্যাটবট এবং অন্য সব ধরনের সিস্টেমকে শক্তিশালী করেছে। বেশিরভাগ মানুষ কোম্পানির চ্যাটজিপিটি চ্যাটবটের নতুন সংস্করণের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন।

ওপেনএআইর অগ্রগতি মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে প্রযুক্তি শিল্পকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি দিয়েছে বলে এ  শিল্পের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন। এটা নব্বই দশকের গোড়ার দিকে ওয়েব ব্রাউজার তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন। এর অবিশ্বাস্য দ্রুত বিকাশ কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করেছে।

জিপিটি-৪ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিফর্ম বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শীর্ষ ১০ ভাগ পরীক্ষার্থীর মানের উত্তর দিতে সক্ষম এটি। চ্যাটজিপিটির উত্তর ছিল সবচেয়ে খারাপ করা ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীর মত।  এটি তাৎক্ষণিকভাবে কারও ট্যাপের হিসাব এবং ছবির বিশদ বিবরণ প্রদান করতে পারে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ‘মানব-স্তরের’ সাফল্য দেখাতে পারে বলে জানায় আলজাজিরা।

জিটিপি-৪ গভীর অধ্যয়নের ফসল। মানুষের প্রায় কাছাকাছি তার জ্ঞানের ভান্ডার।  কোম্পানিটি এক ব্লগ পোস্টে বলেছে, ‘আমরা আমাদের আগের পরীক্ষামূলক প্রোগ্রামের পাশাপাশি চ্যাটজিপিটি থেকে শিক্ষা নিয়ে জিপিটি-৪কে দাঁড় করতে ছয় মাস গবেষণা করেছি। এর ফলে তথ্যনির্ভরতা, পরিচালনযোগ্যতা এবং নির্ভুলতার দিক থেকে আমাদের সর্বকালের সেরা ফলাফল পেয়েছি।  তবে তা নিখুঁত থেকে এখনও অনেক দূরে।’

এক অনলাইন প্রদর্শনীতে ওপেনএআইর প্রেসিডেন্ট গ্রেগ ব্রকম্যান দেখিয়েছেন, হাতে আঁকা ছবির ওপর ভিত্তি করে একটি বাস্তব ওয়েবসাইট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে জিপিটি-৪।

ওপেনএআই বলেছে, জিআরই বা গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড পরীক্ষার স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্টের প্রমাণভিত্তিক পড়া এবং লেখা ও মৌখিক বিভাগে নতুন চ্যাটবট ৯০ শতাংশ মানুষকে পরাজিত করতে পারে। চ্যাটজিপিটি এত উচ্চ স্কোর করেনি। এসএটি পরীক্ষায় ১৬০০-এর মধ্যে ১৩০০  নম্বর পেয়েছে জিপিটি-৪। হাই স্কুলে অ্যাডভান্সড প্লেসমেন্ট পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, ক্যালকুলাস, ম্যাক্রো ইকোনমিকস, সাইকোলজি, পরিসংখ্যান ও ইতিহাসে ৫ এর মধ্যে ৫ স্কোর করতে পারে জিপিটি-৪।

কোম্পানি বলেছে, জিপিটি-৪ এ চ্যাটজিপিটির তুলনায় ভুল, আপত্তিকর ও অপমানজনক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম। এটি বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এমনকি ডাক্তারদেরও চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে মুগ্ধ করেছে।  নিউইয়র্ক টাইমস থেকে একটি নিবন্ধ সরবরাহ করা হলে নতুন চ্যাটবট প্রায় সংক্ষিপ্ত এবং সঠিক সারাংশ জানাতে পারে। আপনি যদি সারাংশে একটি এলোমেলো বাক্য যোগ করেন এবং বটকে জিজ্ঞাসা করেন যে সারাংশটি ভুল কি-না, এটি যোগ করা বাক্যটিকে দেখিয়ে দেবে।

নতুন চ্যাটবট সাংবাদিকতা থেকে স্বাস্থ্যসেবাসহ বহু পেশাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। গুগল, মাইক্রোসফট, হুয়াওয়ে, আলিবাবা ও বাইদুর মতো টেক জায়ান্টরা দ্রুত বর্ধিষ্ণু কৃত্রিম বুত্তিমত্তা খাতের প্রতিযোগিতায় আদাজল খেয়ে নেমেছে। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ওপেনএআই মানব বুদ্ধিমত্তার সমান হতে পারছে না। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা মিথ্যা অনেক সময় বুঝতে অক্ষম এটি। তাই হয়তো সম্পূর্ণ ভুল তথ্যও দিতে পারে।