ছবি না তুলে ত্রাণ নিয়ে কাউকে আসতে দেন না চেয়ারম্যান। আর কেউ ছবি না তুলে চলে আসতে চাইলে তাকে টেনে ধরেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস। নারী হলে টানের শাড়ির আঁচল।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
শুক্রবারের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ত্রাণগ্রহীতা ব্যক্তিরা দুস্থ ও অতিদরিদ্র শ্রেণির মানুষ। বেশির ভাগই বয়োবৃদ্ধ। জরাজীর্ণ পোশাক। শরীর-স্বাস্থ্যও ভালো না। শরীর এতটাই দুর্বল যে কেউ কেউ ত্রাণসামগ্রীর ব্যাগটি তুলতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। মাথা নিচু করে ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে ভিডিওতে মুখ না দেখানোয় এক লোকের গালে চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন বিশ্বাস এমনভাবে ধাক্কা দেন যে, মুখের মাস্কটি খুলে পড়ে যায়। পড়ে সেটি মেঝে থেকে আরেকজন ছুড়ে বাইরে ফেলে দেন। তারপরই একজন বৃদ্ধা ত্রাণের ব্যাগটি নিয়ে চলে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান পেছন থেকে তার শাড়ির আঁচল টেনে ধরেন। ওই নারী তখনো বুঝে উঠতে পারেননি কেন তাকে পেছন থেকে এভাবে ধরা হলো। পরে ভিডিওকারীর অনুরোধে তাকে যেতে দেয়া হয়। একই ধরনের দুর্ব্যবহারের আচরণের শিকার হন একজন প্রবীণ নাগরিকও। শিকার হতে হয়েছে রুঢ় বাক্যালাপেরও।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সমালোচনা। কেউ কেউ এই ধরনের অসদ্ব্যবহার ও অশোভন আচরণের বিচার দাবি করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। কখনো চাল ছিনতাই, কখনো বা ছবির জন্য মারধর, গালাগালি সবই করেন তিনি। এছাড়া অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমরা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিনের বিষয়টি জেনেছি। আমি উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন। তাকে শোকজ করা বা যে ব্যবস্থা নেয়ার তা নেয়া হবে। আমি বিষয়টি আমাদের জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তদন্ত হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আমরা বিষয়টা শুনলাম, দেখলাম। আমাদের নলেজের এসেছে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে একজন ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান অনেক সময় সাংবাদিকদের ফোন ধরেন না। তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেও চান না। তার বিরুদ্ধে তো আর মানুষের অভিযোগের শেষ নাই। মহামারির সময় কতো ধরনের লোক কতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি যদি এই ক্রাণের চালের পয়সা মাইরা খাওয়ার সুযোগে থাকে, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়। আমি আগেও পাঁচ বছর মেম্বার ছিলাম, এখনও আছি। কেউ বলতে পারবে না- কোনো খারাপ কাজ করছি। চেয়ারম্যানের কথা আর বলার কিছু নাই। এইসব চেয়ারম্যান চলে নাকি। যারা জনগণের সুখ-দুঃখ না বোঝে। এসব চলে নাকি।’
মুঠোফোনে মহিউদ্দিন বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো চেয়ারম্যান না। আপনি ভুল করছেন।’
এর আগে বাংলাদেশ জার্নালের কুষ্টিয়া সংবাদদাতা মহিউদ্দিন বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক না। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছে।’
এদিকে ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পরিষদের নির্বাচিত ১২ সদস্যের (মেম্বার) সবাই অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সে সময় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠান পরিষদের সদস্যরা। একই সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসককেও অনুলিপি দেয়া হয়েছিলো।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছিলো, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস একক সিদ্ধান্তে পরিষদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সদস্যদের অভিযোগ ছিলো, উপজেলা পরিষদ থেকে ভূমি হস্তান্তর কর বাবদ তিন কিস্তিতে চার লাখ তিন হাজার টাকা বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হয়। মোটা অঙ্কের এই টাকা কোন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বয়স্কভাতার মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও ওঠে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
ওই টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান নিজে ব্যবহারের জন্য একটি প্রাইভেটকার কিনেছেন বলে অভিযোগ করেন মেম্বাররা।
ইউনিয়নে দু’জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে মহিউদ্দিনের নামে। এছাড়া আরো কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে পারেননি বলে জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।