জুমবাংলা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের বই গোপনে বিক্রি করে দেওয়া আলোচিত সেই প্রধান শিক্ষক মোঃ শামসুল আলম পরীক্ষায় নাম্বার বেশি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ছাত্রদের থেকে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড নেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। মাঝে মাঝেই ছাত্রদের কাছে থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নিয়মিত মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা কার্ড ও ফ্লেক্সিলোড নেন তিনি। সেইসাথে বিদ্যালয়ের বাইরের অছাত্রদের কাছে থেকে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রশংসাপত্র দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের বরাদ্দকৃত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর কয়েক হাজার কপি বই গোপনে বিক্রি করে সব অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে এই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। সরকারি ছুটিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে এবং সব টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অফিস বা ম্যানিজিং কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের বই বিক্রি করে দেন। ঘটনা জানাজানির পর থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সচেতন এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামলি পারভীন জানান, “তিনি আজকে স্কুলেই আসেননি। আমাদের কিছু বলেনওনি যে তিনি কোথায় আছেন। “বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও সহকারী শিক্ষক মোঃ গোলাম আযম বলেন, ” আমরা ভাবতেই পারিনি যে আমাদের প্রধান শিক্ষক এমন লজ্জাজনক কাজ করতে পারেন। এটা সত্যি দুঃখজনক।
এদিকে বিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মোঃ শামসুল আলম তাদেরকে পরীক্ষায় নাম্বার বেশি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড নেন এবং মাঝে মাঝেই এমবি কার্ড কিনে দিতে বলেন। সেইসাথে তারা আরো জানায় বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক রকিবুল ইসলামের সহযোগিতায় বিভিন্ন জনের কাছে থেকে টাকা নিয়ে প্রশংসাপত্র দেন। সেইসাথে শিক্ষার্থীদের নাম সংশোধন ও সার্টিফিকেট, মার্কশিট এর সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ব্যাংক ড্রাফটের অতিরিক্ত কয়েকগুণ অর্থ আদায় করে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।”
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, ” বোঝেনই তো প্রধান শিক্ষক নির্দেশ দিলে আমরা তা করতে বাধ্য। “সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের দুইবারের নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শাহীন আলম এবং অভিভাবক সদস্য আব্দুল হালিমের সাথে। তারা বলেন, “এই প্রধান শিক্ষক কৌশলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি তা গায়ে মাখান না।
সর্বশেষ তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই না দিয়ে গোডাউনে রেখে গোপনে বিক্রি করে দিয়ে একেবারেই ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। এটা আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই লজ্জাজনক। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এবং তার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল ইসলাম বলেন, ” এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এর মাধ্যমে এবং এলাকাবাসীর মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তদন্ত করে যদি প্রমানিত হয় যে তিনি প্রকৃত পক্ষেই এগুলো করেছেন তাইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হবে।”
এদিকে সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নরিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বই বিক্রি করায় এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তারা প্রশাসনের নিকট আশু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।