জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্রনেতা থেকে শতকোটিপতি বনে গেছেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান। ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসন থেকে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। প্রথমবার এমপি হওয়ার পর থেকেই আব্দুর রহমানের সম্পদ বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হিসেবে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী হন। ছয় মাসের মন্ত্রী হলেও আব্দুর রহমানের সঙ্গে স্ত্রী ও মেয়ের জামাইরাও কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন।
আশির দশকের শুরুতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হয়ে ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে যুক্ত হন তিনি।
১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে ছাত্রলীগ থেকে এক লাফে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে এমপি হন। বর্তমানে তিনি দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
বাড়িঘর, অবকাঠামো, ব্যাংক ব্যালান্স, শেয়ার ব্যবসা : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া আব্দুর রহমান পৈতৃক সূত্রে ভিটেবাড়িসহ কয়েক বিঘা জমির মালিক হলেও এমপি হওয়ার পরপরই বাড়তে থাকে তাঁর সম্পদ।
তাঁর সঙ্গে স্ত্রী ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. মির্জা নাহিদা হোসেন বন্যারও সম্পদের পরিমাণ কম নয়! তাঁর নামে-বেনামে ঢাকার পূর্বাচলে জমি এবং ধানমণ্ডি, উত্তরা ও পরীবাগে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। রয়েছে কয়েকটি ভিআইপি গাড়ি। নিজ ইউনিয়ন কামালদিয়ার টাকদিয়া মাঠ, কামালদিয়া মাঠ, বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী পোস্ট অফিসের পাশে, কাদিরদী কলেজের সামনে, মুজুরদিয়া ঘাটসংলগ্ন জমি এবং কানখরদী ও বেড়াদীর বিলে কয়েক শ বিঘা জমি। এ ছাড়া কানখরদীর জমিতে ‘রাজ অটো ব্রিকস’ দেখিয়ে জনতা ব্যাংক থেকে কয়েক শ কোটি টাকা লোন নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান ও মামলা : আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক।
সরকার থেকে তাঁর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও শোনা যায়, তিনি ৫ আগস্টের পরপরই দেশ ছেড়ে পাশের দেশ বা দেশের বাইরের কোনো রাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় আব্দুর রহমান তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২৮ লাখ ১১ হাজার ৬২৪ টাকা। আর নিজের নামে ফরিদপুরের মধুখালীর কামালদিয়ায় একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করে স্ত্রীর নামে ঢাকায় চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন।
নির্বাচনী এলাকায় নিজের বলয় তৈরি : নিজ সংসদীয় এলাকার তিনটি উপজেলায় নিজস্ব বলয় ভারি করার জন্য কর্মিবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন আব্দুর রহমান। এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।
অভিযোগ আছে, বোয়ালমারীতে মিয়া ও মৃধা গ্রুপ নিয়ে আওয়ামী লীগে বিভক্তি রয়েছে। মৃধা গ্রুপকে শক্তিশালী করতে গিয়ে আব্দুর রহমান নিজেও সমালোচিত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় একটি অংশ তাঁর কথায় নিয়ন্ত্রিত হতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘আব্দুর রহমানকে টাকা দিয়ে পদ নেওয়া যেত।
নিজ ও পরিবারের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ফরিদপুর-১ আসনের তিনটি উপজেলায় একচ্ছত্র ‘রাজত্ব’ কায়েম করেন আব্দুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে দখলদারির অভিযোগ। নিজ নামে এবং ছেলেমেয়ের নামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে ব্রাহ্মণকান্দায় ‘আব্দুর রহমান টেকনিক্যাল কলেজ’ ও ‘আয়েশা-সামি’ জেনারেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারি জায়গা প্রভাব খাটিয়ে কলেজের নামে করে নেন তিনি। কাদিরদি এলাকায় সরকারি অর্থায়নে গড়ে তোলা একটি কারিগরি কলেজের নাম তাঁর মা ও বাবার নামে করার চেষ্টা চালান। মধুখালী নরকোনা কলাগাছিয় রয়েছে আব্দুর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বরাদ্দ বিতরণে স্বজনপ্রীতি : আলোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী এলাকায় ভাই-ভাতিজাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলেও শ্বশুরবাড়ির শ্যালকদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তাঁর শ্যালকরা তিনটি উপজেলায় থানার দালালি, বিভিন্ন বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্তু আব্দুর রহমান এমপি থাকাকালে আত্মীয়-স্বজন ও তাঁর অনুসারীরা সরকারি বরাদ্দের টিআর-জিআরসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করে কামিয়েছেন অর্থকড়ি।
মুক্তিযোদ্ধা হওয়া নিয়ে সমালোচনা : আব্দুর রহমানের বিরোধী শিবিরের মধুখালী উপজেলার দুই মুক্তিযোদ্ধা নেতা (উপজেলা যাচাই-বাছাইয়ের সদস্য ছিলেন) বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আব্দুর রহমান নিজ এলাকায় ছিলেন না। তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে মুক্তিযুদ্ধকালে বোয়ালমারী উপজেলার ‘গোহাইলবাড়ি’ মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গোহাইলবাড়ি মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন আব্দুর রহমান। এখান থেকে তাঁকে ভারতে পাঠানো হয়।
ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, এই আসনের সাবেক এমপি আব্দুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় তিন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ড্রাগ দিয়ে ছয়লাব করে দিয়েছিলেন। আব্দুর রহমান সরকারি জায়গা দখল করে তাঁর বাবা, ছেলে ও মার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন।
প্রসঙ্গত ৫ আগস্টের পর থেকেই আর দেখা মেলেনি একসময়ের প্রভাবশালী এই নেতার। প্রতিবেদনের বিষয়ে বা অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষকেরা চিন্তার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।