ছাত্রলীগ নিয়ে উপমন্ত্রী শামীমের আবেগঘন স্ট্যাটাস

জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালানো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও থাবা বসিয়েছে। এতে সারাদেশ স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও নিম্বআয়ের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ কৃষকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। তাই এই করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়াসহ নানা প্রশংসনীয় কাজ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এর প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আবারও প্রমাণিত হলো মানবতার ধারক-বাহক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস নামক এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে আমরা লড়াই করছি। বলতে গেলে পৃথিবী বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব জায়গা মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকত, সেগুলো দেখলে এখন ভূতুড়ে মনে হয়। প্রতিদিনের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত বন্ধ, ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা, গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ- এসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এই অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের কারণে।

এই প্রাণঘাতি ভাইরাসের সঠিক ওষুধ এখনো আবিস্কার হয়নি। এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় একা থাকা অথবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর ন্যায় বাংলাদেশের মানুষও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। যে যার মতো ঘরে থাকার চেষ্টা করছেন। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কমই বের হচ্ছেন মানুষজন। কিন্তু অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে দেশের অনেক মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দরিদ্র পরিবারের লোকজনের খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার খাদ্য নিশ্চিত করেছেন। আমাদের সরকারের মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা যার যার মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ব্যবসা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজার হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য ১ কোটি রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। তারা ১০ টাকায় চাল পাবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, শেখ হাসিনার সরকার আমলে একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না।

যাইহোক, যে কথাগুলো লিখতে বসে এসব লিখলাম, এবার সেই মূল কথায় আসা যাক। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। নিজেকে নিরাপদ রাখতেই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। নিজেকে রক্ষার একমাত্র উপায় এটাই। অর্থাৎ চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। লকডাউন পালন করতে গিয়ে শ্রমিকরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছেন না। ফলে কৃষক (জমির মালিক) গণ পড়েছেন মহাবিপদে। সেই সময় পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ যখন দেখি বিভিন্ন স্থানে ‘বিনা পারিশ্রমিকে কৃষকের ধান কেটে দিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ‘গরীব কৃষককে ধান কেটে সহাযোগিতা করলো ছাত্রলীগ, ‘রাতের আধারে অসহায় পরিবারের পাশে ছাত্রলীগ’।

শুধু কি তাই যখন দেখি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক স্যানিটাইজার নিজেরাই তৈরি করে সারাদেশে বিতরণ করছে, মাস্ক বিতরণ করছে। করোনা প্রতিরোধে ছাত্রলীগের ভূমিকা অনন্য। তখন গর্বে বুকটা ভরে উঠে। সমস্ত শরীরে শিহরণ জাগে এই ভেবে যে আমিও এই গর্বিত সংগঠনের একজন কর্মী ছিলাম। একসময় শুধু বাংলাদেশেরই নয়, উপমহাদেশের অন্যতম ও ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। আমার বুকটা ভরে ওঠে যখন দেখি অসহায় ছিন্নমূল মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয়, বাংলাদেশে তো আরও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন আছে? তারা কোথায়? আজকেই কেবল মানবতার সেবায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগই একাই কাজ করছে। অথচ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পারতো নিজেদের ঘরে আবদ্ধ রাখতে। ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাড়িতেই বসে থাকতে। কিন্তু তা করেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে প্রতিটি নেতাকর্মী। এটাই বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই হচ্ছে সত্যিকারের সোনার মানুষ।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কেউ কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে। কেউ খাদ্য বিতরণ করছে গভীর রাতে। এখানেই আমার ছাত্রলীগ নিয়ে গর্ব। মানুষের এই দুর্যোগে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেখে ছাত্রজীবনে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে করোনার কারণে শ্রমিক সংকট থাকা গ্রামের রহিম চাচাকে বলি, ‘চাচা আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা আপনার জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেব। চাচা চিন্তা করবেন না, কোনো পারিশ্রমিক দিতে হবে না- বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে দাঁড়াতে আমাদের নিদের্শ দিয়েছেন। আপনারা বাঁচলে (কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে) তবেই বাংলাদেশ বাঁচবে। ছাত্রলীগ নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, একবার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। তার আগে আমার পরিচয় আমি স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের ভোটের মাধ্যমে জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেন।

ছাত্রলীগ শুধু করোনাকালেই নয়, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি আদায়ে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছে। হলের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। যখনই অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, তখনই রাজপথে সক্রিয় ছিল ছাত্রলীগ। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের বন্যায় সময় বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছিল বাংলাদেশে এক কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে বিবিসির প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারনে। সে সময়ে আমি ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, সারাদেশে ছাত্রলীগের অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের হলগুলোতে রুটি-স্যালাইন বানানোর কারখানায় রূপান্তর হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুটি-স্যালাইন বানিয়ে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেছিল লাখ লাখ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

অতীতের ধারাবাহিকতায় সেই সাক্ষর ছাত্রলীগ ধরে রেখেছে অনেকবার। সে কারণেই আজকে কৃষককে বিনা পারিশ্রমিকে ধান কেটে দিচ্ছে। আবার গভীর রাতে আধারে গিয়ে বলছেন, ‘বাড়িতে কেউ আছেন? আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নিয়ে এসেছি’।

আমার মনে পরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যখন ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছিল, তখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ১২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিশাল ছাত্র সমাবেশ আমার হাতে (সে সময় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম) বই-খাতা তুলে দিয়ে বলেছিলেন, বই-খাতা-কলম হচ্ছে ছাত্রদের প্রকৃত হাতিয়ার। তিনি আরও বলেছিলেন, শুধু ভালো কর্মী হলেই চলবে না-ভালো ছাত্রও হতে হবে। নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মেধাবীরাই ছাত্রলীগ করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সেরা সাহসী সন্তানেরাই ছাত্রলীগ করে’। তিনি বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আর ছাত্রলীগ হচ্ছে সোনার মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান। তাই আজ মানবতার সেবায় সমগ্র বাংলাদেশের মাঠে, ঘাটে, পথে ছাত্রলীগ দেখে গর্বিত হই। ধন্যবাদ ছাত্রলীগের কোটি নেতাকর্মীকে। এমনিভাবেই মানবতার পাশে থেকে কাজ করে যাবে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ। ধন্যবাদ স্নেহের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *