(প্রথম ১০০ শব্দে মূল কীওয়ার্ড সংযুক্তি সহ শক্তিশালী হুক)
ঢাকার গনজে আইডিয়াল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাঠে দৌড়াচ্ছিল অর্ণব। সূর্যের তেজদীপ্ত আলো তার ঘামে ভেজা মুখে পড়তেই হঠাৎ চোখে আঙুল দিয়ে হেসে উঠল স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো বন্ধুরা। “কি হে, মুখে তো ‘ব্রণ-ম্যাপ’ আঁকা দেখছি!” – বন্ধুদের রসিকতার আঘাতে অর্ণবের উচ্ছ্বাস মুহূর্তে মলিন হয়ে গেল। চেকিং শার্টের পকেটে লুকানো আয়নায় নিজের মুখের লালচে ব্রণ আর তৈলাক্ত দাগ দেখে তার মনে পড়ে গেল ইনস্টাগ্রামে দেখা সেই পরিষ্কার, উজ্জ্বল ত্বকের ছেলেদের ছবিগুলো। বাংলাদেশের শতকোটি তরুণের মতো অর্ণবও ভেবেছিল, “ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড” মানেই নাকি জটিল রুটিন আর বাজারের দামি প্রোডাক্টের পাহাড়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এই ধারণা ভাঙতে, আজকের এই গাইডে শুধু সহজ টিপস নয়, খুঁজে বের করব ত্বক সুস্থ রাখার বিজ্ঞান, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল, আর আত্মবিশ্বাসের সেই উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়ার গল্প। কারণ, ভালো ত্বক কোনো বিলাসিতা নয়, তা প্রতিদিনের আত্মমর্যাদার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড: ভুল ধারণা ভাঙা ও বেসিক রুটিনের শুরু (প্রথম H2 হেডিং)
“স্কিন কেয়ার শুধু মেয়েদের জন্যই” – এই শতাব্দীপ্রাচীন ভুল ধারণাটি বাংলাদেশের গ্রাম-শহরের কোটি কোটি পুরুষের ত্বকের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে চলেছে। ঢাকার ডার্মাটোলজিস্ট ডা. শারমিন আহমেদের চেম্বারে প্রতিদিন আসেন তরুণ থেকে মধ্যবয়সী এমন অনেক পুরুষ, যাদের মুখে লালচে ব্রণ, রুক্ষতা, অকালে পড়ে যাওয়া বলিরেখা বা সানবার্নের দাগ। তাদের প্রায় সকলেরই প্রথম প্রশ্ন, “ডাক্তার সাহেব, ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড বলে কিছু আছে নাকি সহজ?”। ডা. আহমেদের মতে, পুরুষদের ত্বক নারীদের তুলনায় প্রায় ২০-২৫% বেশি পুরু এবং বেশি তৈলাক্ত হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে সিবাম উৎপাদন বেশি হওয়ায় ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, পোরস বন্ধ হওয়ার সমস্যা প্রকট। অথচ, ভুল ধারণার বেড়াজালে পুরুষরা প্রায়ই ভাবেন, শুধু সাবান দিয়ে মুখ ধুলেই চলবে! রংপুরের কৃষক আব্দুল মান্নান থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম শিপইয়ার্ডের ইঞ্জিনিয়ার রিয়াদ হাসান – সকলের জন্যই প্রয়োজন একটি সহজ স্কিন কেয়ার রুটিন।
বেসিক রুটিনের তিন স্তম্ভ:
- ক্লিনজিং (পরিষ্কারকরণ): দিনে দুইবার (সকালে ও রাতে) হালকা, ফোমিং ক্লিনজার ব্যবহার। খেয়াল রাখতে হবে তা যেন ত্বকের প্রাকৃতিক তৈলাক্ততা সম্পূর্ণ কেড়ে না নেয়। বাংলাদেশের দূষণ, ধুলাবালি ও ঘাম মিশে ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে দেয়, তাই ক্লিনজিং অপরিহার্য।
- ময়েশ্চারাইজিং (আর্দ্রতাবিধান): তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও ময়েশ্চারাইজার জরুরি! ভুল ধারণা হলো তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগে না। বরং, আর্দ্রতা না পেলে ত্বক নিজেকে রক্ষা করতে আরও বেশি তেল উৎপন্ন করে, যা সমস্যা বাড়ায়। জেল বা ওয়াটার-বেসড হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
- সান প্রোটেকশন (সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা): বাংলাদেশের প্রখর রোদ শুধু কালো করে না, ত্বকের ক্যান্সার, অকালে বলিরেখা, দাগ-ছোপের মূল কারণ। SPF 30+ বা তার বেশি মানের ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন প্রতিদিন সকালে বাইরে বের হওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে মুখ, গলা, কান ও হাতের পেছনে মাখুন। বৃষ্টির দিনেও UV রশ্মি থাকে! বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের UV ইনডেক্স ডেটা দেখলেই বোঝা যায় রোদের ভয়াবহতা।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে বেসিক রুটিনের মানে কী?
- স্থানীয় ব্র্যান্ডের ব্যবহার: দামি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নয়, দেশীয় মানের ব্র্যান্ড যেমন জেমস (James), স্কিনেক্স (SkinX) বা ক্লিয়ার (Clear) এ ভালো ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়।
- শেভিংয়ের পর যত্ন: শেভ করার পর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে। ক্লিনজিংয়ের পর অ্যালোভেরা জেল বা স্যুটিং লোশন (Aftershave Lotion) ব্যবহার জ্বালাপোড়া কমায় এবং র্যাশ প্রতিরোধ করে।
- খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব: অতিরিক্ত তেল-মসলাদার খাবার (বিরিয়ানি, তেহারি, ফাস্ট ফুড), চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। প্রচুর পানি, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জীবনযাত্রায় মানানসই বিশেষ যত্নের কৌশল (দ্বিতীয় H2 হেডিং)
চৈত্রের খরতাপ থেকে বর্ষার আর্দ্রতা – বাংলাদেশের জলবায়ু যেন ত্বকের জন্য এক ধ্রুব চ্যালেঞ্জ। গরমে অতিরিক্ত ঘাম, ধুলোবালি আর দূষণে মুখ ভরে যায় ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসে। আবার বর্ষায় আর্দ্রতায় ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়, ফলে ব্রণ বেড়ে যায়। খুলনার এক কলেজ শিক্ষার্থী সাকিবের অভিজ্ঞতা বলছে, “বর্ষায় ব্রণের যন্ত্রণা এত বেড়ে যায় যে ক্লাসে যেতেই লজ্জা হতো। ডাক্তার দেখিয়ে বুঝলাম, ঘাম শুকানোর আগেই তা মুছে ফেলা এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্লিনজিং জরুরি।
বিশেষ সমস্যার সমাধান:
- ব্রণ (Acne) নিয়ন্ত্রণ: তৈলাক্ত ত্বকের প্রধান শত্রু ব্রণ। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid) বা বেঞ্জয়িল পারঅক্সাইড (Benzoyl Peroxide) সমৃদ্ধ ক্লিনজার বা স্পট ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করুন। কখনই ব্রণ খুঁটবেন না, এতে দাগ ও সংক্রমণ বাড়ে। গুরুতর হলে ডার্মাটোলজিস্ট দেখান। খাবারে ভাজাপোড়া কমিয়ে দিতে হবে।
- ত্বকের দাগ (Scars & Dark Spots): ব্রণ বা ইনগ্রাউন হেয়ারের দাগ, সান ড্যামেজের দাগ দূর করতে ভিটামিন সি সিরাম, নিয়াসিনামাইড (Niacinamide) বা রেটিনল (Retinol) সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট কার্যকর। তবে রেটিনল সূর্যের সংস্পর্শে ত্বককে সংবেদনশীল করে, তাই রাতে ব্যবহার এবং দিনে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক। স্থায়ী দাগের জন্য কসমেটিক প্রসিডিওর (Chemical Peels, Laser) নেওয়া যেতে পারে। দেশের স্বনামধন্য ত্বক বিশেষজ্ঞদের তালিকা দেখে নিতে পারেন।
- শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক (Dry & Rough Skin): শীতকাল বা এসির নিচে দীর্ঘক্ষণ থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফাটতে পারে। হেভিয়ার ক্রিম-বেসড ময়েশ্চারাইজার, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করুন। গোসলের পানি খুব গরম না করা ভালো।
- চোখের নিচের কালো দাগ (Dark Circles): ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, বংশগতির কারণে হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা), পুষ্টিকর খাবার, ঠান্ডা চামচ বা কোল্ড টি ব্যাগ চোখে রাখা এবং ভিটামিন K বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ আই ক্রিম কিছুটা উপশম দিতে পারে।
প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার (ঐতিহ্যবাহী টোটকা):
বাংলাদেশের ঘরোয়া চিকিৎসায় ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বহু পুরনো। তবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবহার জরুরি:
- মধু ও দইয়ের ফেসপ্যাক: প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও ময়েশ্চারাইজিং। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো।
- তুলসী পাতার পেস্ট: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
- নিম: ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস নাশক। ত্বকের সংক্রমণ ও ব্রণে কার্যকর।
- অ্যালোভেরা: সূর্যেপোড়া, জ্বালাপোড়া, শুষ্কতায় প্রশমনকারী। শেভিংয়ের পর ভালো কাজ করে।
সতর্কতা: প্রাকৃতিক মানেই নিরাপদ নয়। কারো কারো অ্যালার্জি হতে পারে। মুখে লাগানোর আগে হাতে টেস্ট করে নিন। এগুলো নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিনের বিকল্প নয়, বরং পরিপূরক।
দৈনন্দিন অভ্যাস ও জীবনযাপন: ত্বকের সুস্থতার গোপন চাবিকাঠি (H2 হেডিং)
আপনি যতই দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন না কেন, দৈনন্দিন অভ্যাসই আপনার ত্বকের প্রকৃত স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। সিলেটের একটি ক্যালিস্থেনিকস ট্রেনার ফাহিমের কথায়, “যখন আমি নিয়মিত এক্সারসাইজ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর পর্যাপ্ত ঘুমের রুটিন মেনে চললাম, তখনই আমার জেদি ব্রণ এবং তৈলাক্ততা সত্যিই নিয়ন্ত্রণে আসলো।”
- পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে, টক্সিন দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। বাংলাদেশের গরমে ডিহাইড্রেশন ত্বককে নিস্তেজ করে দেয়।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন এ, সি, ই, জিঙ্ক, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের জন্য অপরিহার্য। সবুজ শাকসবজি (পালংশাক, লাউশাক), রঙিন ফল (পেঁপে, কমলা, বেরি), বাদাম, মাছ (সামুদ্রিক মাছ ভালো), ডিম রাখুন খাদ্যতালিকায়। তেল-চর্বি, অতিরিক্ত মিষ্টি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ধূমপান ত্বকের শত্রু।
- গুণগত ঘুম: ঘুমের সময় ত্বক নিজেকে মেরামত করে ও রিজেনারেট করে। রাত ১০টা-১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া এবং ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, ফোলাভাব ও ত্বকের নিস্তেজ ভাব আনে।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: চাপ, উদ্বেগ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার অন্যতম কারণ। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, শখের চর্চা (গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা) বা নিয়মিত ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন: ধূমপান ত্বকে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়, বলিরেখা বাড়ায় এবং ত্বককে নিষ্প্রাণ করে তোলে। মদ্যপান ত্বককে ডিহাইড্রেট করে।
বয়সভেদে ত্বকের যত্ন: কিশোর থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত (H2 হেডিং)
কিশোর বয়স (১৩-১৯ বছর): এই সময়ে হরমোনের ওঠানামার কারণে ত্বক বেশি তৈলাক্ত হয় এবং ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ফোকাস রাখুন নিয়মিত ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং ও সান প্রোটেকশনে। ব্রণ সমস্যা বেশি হলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। স্কুলের ছাত্র রাফিদের মন্তব্য, “সপ্তাহে দুইবার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ফেস ওয়াশ ব্যবহার করায় আমার ব্রণ অনেক কমেছে।”
বিংশতি (২০-৩০ বছর): ত্বক এখনও তুলনামূলকভাবে তরুণ, তবে স্ট্রেস, অনিয়মিত জীবনযাপন, দূষণের প্রভাব পড়তে শুরু করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (ভিটামিন সি সিরাম), সানস্ক্রিনের পাশাপাশি প্রিভেন্টিভ কেয়ার হিসেবে হালকা রেটিনল বা পেপটাইডস সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার শুরু করতে পারেন। বলিরেখা রোধে এটাই সেরা সময়।
ত্রিশোর্ধ্ব (৩০+ বছর): ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদন কমতে শুরু করে, বলিরেখা দেখা দেয়। এই পর্যায়ে রেটিনল/রেটিনয়েড, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, নায়াসিনামাইড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট এবং পুষ্টিকর ক্রিম ব্যবহার জরুরি। চোখ ও ঘাড়ের ত্বকের বিশেষ যত্ন নিন। নিয়মিত স্কিন চেকআপ করানো ভালো।
সঠিক প্রোডাক্ট বাছাই ও ব্যবহারের কৌশল (H2 হেডিং)
ত্বকের ধরন চিনুন: প্রোডাক্ট কেনার আগে নিজের ত্বকের ধরন (তৈলাক্ত, শুষ্ক, সংমিশ্রণ, সংবেদনশীল) বুঝে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বা ওয়াটার-বেসড, শুষ্ক ত্বকে ক্রিম-বেসড প্রোডাক্ট বেছে নিন। সংবেদনশীল ত্বকে পারফিউম ও অ্যালকোহল মুক্ত, হাইপোঅ্যালার্জেনিক প্রোডাক্ট নির্বাচন করুন।
ইনগ্রিডিয়েন্ট লেবেল পড়ুন: শিখে নিন কিছু মৌলিক উপাদানের নাম ও কাজ:
- হায়ালুরোনিক অ্যাসিড: ত্বকে পানি ধরে রাখে, আর্দ্রতা দেয়।
- গ্লিসারিন: হিউমেক্ট্যান্ট, ত্বকে আর্দ্রতা আকর্ষণ করে।
- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড: তেল নিয়ন্ত্রণ করে, ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস দূর করে।
- বেঞ্জয়িল পারঅক্সাইড: ব্রণের ব্যাকটেরিয়া মারে।
- নিয়াসিনামাইড: ত্বকের টোন উন্নত করে, লালভাব কমায়, তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে।
- রেটিনল: কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, বলিরেখা, দাগ ও ব্রণ কমায়।
- জিঙ্ক অক্সাইড/টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড: ফিজিক্যাল সানস্ক্রিনের প্রধান উপাদান।
প্যাচ টেস্ট করুন: নতুন কোনো প্রোডাক্ট মুখে লাগানোর আগে কনুইয়ের ভাজে বা কানের পিছনে সামান্য লাগিয়ে ২৪-৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। র্যাশ, লালভাব, চুলকানি না হলে তবেই মুখে ব্যবহার করুন।
ধৈর্য ধরুন: ত্বকের উন্নতি দেখতে সময় লাগে। কোনো প্রোডাক্ট সাধারণত ৪-৮ সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ব্যবহারের পর ফল দেয়। ঘনঘন প্রোডাক্ট বদলানো উচিত নয়।
জেনে রাখুন (FAQs – H2 হেডিং)
প্রশ্ন: ছেলেদের জন্য স্কিন কেয়ার কি আসলেই জরুরি?
উত্তর: একদমই জরুরি। ছেলেদের ত্বকও ধুলাবালি, দূষণ, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ও বয়সের প্রভাবের শিকার হয়। নিয়মিত যত্ন ত্বককে সুস্থ, সতেজ ও সমস্যামুক্ত রাখে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্যান্সার, অকালবার্ধক্য রোধ করে।প্রশ্ন: আমার ত্বক খুব তৈলাক্ত, ময়েশ্চারাইজার লাগানো কি সমস্যা করবে না?
উত্তর: না, বরং আরও জরুরি। তৈলাক্ত ত্বকও আর্দ্রতার প্রয়োজনীয়তা থেকে বাদ পড়ে না। শুষ্ক ত্বক নিজেকে রক্ষা করতে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন করে, যা সমস্যা বাড়ায়। ‘অয়েল-ফ্রি’, ‘নন-কমেডোজেনিক’, ‘জেল’ বা ‘ওয়াটার-বেসড’ হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন, যা ত্বকে চটচটে ভাব আনে না।প্রশ্ন: বাংলাদেশের রোদে সানস্ক্রিন কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কোন ধরনের ভালো?
উত্তর: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে UV রশ্মির মাত্রা প্রায়ই উচ্চ থেকে অত্যন্ত উচ্চ থাকে। SPF 30+ বা তার বেশি এবং ‘ব্রড-স্পেকট্রাম’ (UVA & UVB রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়) সানস্ক্রিন প্রতিদিন সকালে বাইরে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে মুখ, গলা, কান ও হাতের পেছনে লাগানো আবশ্যক। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ‘ম্যাট ফিনিশ’ বা ‘জেল’ ফর্মুলা ভালো। ঘামলে বা ২-৩ ঘণ্টা পরপর রিঅ্যাপ্লাই করুন।প্রশ্ন: শেভ করার পর ত্বকে জ্বালাপোড়া ও র্যাশ হয়। সমাধান কী?
উত্তর: শেভিং প্রি-কেয়ার ও পোস্ট-কেয়ার জরুরি। শেভিংয়ের আগে গরম পানির ভাপ বা গরম তোয়ালে দিয়ে ত্বক নরম করুন। শেভিং জেল বা ক্রিম ব্যবহার করুন। তীক্ষ্ণ ব্লেড দিয়ে শেভ করুন, চাপ প্রয়োগ করবেন না। চুলের দিক বরাবর শেভ করুন (With the grain)। শেভিংয়ের পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে হালকা হাতে মুছুন। তারপর অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালকোহল-মুক্ত, সুগন্ধিমুক্ত অ্যাফটারশেভ লোশন বা বাম লাগান।প্রশ্ন: ব্রণের দাগ কিভাবে দূর করব?
উত্তর: ব্রণের দাগ দূর হতে সময় লাগে (কয়েক মাস থেকে বছরও লাগতে পারে)। নিয়াসিনামাইড, ভিটামিন সি, আজেলাইক অ্যাসিড বা রেটিনল সমৃদ্ধ সিরাম/ময়েশ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহারে দাগ হালকা হয়। কেমিক্যাল পিল (গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড) বা লেজার ট্রিটমেন্ট দ্রুত ফল দিতে পারে, তবে তা ডার্মাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নতুন ব্রণ হওয়া প্রতিরোধ করা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, কারণ সূর্যের আলো দাগকে আরও গাঢ় করে।- প্রশ্ন: কতদিন পর পর স্ক্রাবিং করা উচিত?
উত্তর: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সপ্তাহে ১-২ বার, শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য সপ্তাহে একবার বা দু’সপ্তাহে একবার স্ক্রাবিং যথেষ্ট। অতিরিক্ত স্ক্রাবিং ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে, জ্বালাপোড়া ও তৈলাক্ততা বাড়াতে পারে। হালকা, বৃত্তাকার গতিতে ম্যাসাজ করুন, ঘষবেন না। শারীরিক স্ক্রাবের চেয়ে রাসায়নিক এক্সফলিয়েন্ট (AHA/BHA) অনেক সময় সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভালো বিকল্প।
এই গাইডটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। আপনার ত্বকের ধরন ও অবস্থা ভিন্ন হতে পারে। ত্বকে গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা (অতিরিক্ত ব্রণ, একজিমা, সোরিয়াসিস, সন্দেহজনক তিল বা দাগ) থাকলে অবশ্যই একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডার্মাটোলজিস্টের (ত্বক বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নিন। স্ব-চিকিৎসা এড়িয়ে চলুন।
যে সহজ সত্য আজ আমরা জেনেছি তা হলো: একটি পরিকল্পিত ‘ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড’ অনুসরণ করা শুধু মুখের উজ্জ্বলতাই ফেরায় না, প্রতিদিনের আত্মবিশ্বাসকেও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ঢাকার অর্ণব থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক – প্রতিটি পুরুষের ত্বকই তার ব্যক্তিত্বের অনবদ্য অভিব্যক্তি। বাংলাদেশের প্রখর রোদ, আর্দ্রতা আর দূষণের মাঝেও নিয়মিত ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, সান প্রোটেকশন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের এই সহজ বিজ্ঞান আপনাকে দিতে পারে সমস্যামুক্ত, সতেজ ত্বকের নিশ্চয়তা। মনে রাখবেন, ত্বকের যত্ন কোনো রাতারাতির ম্যাজিক নয়, এটি একটি ধারাবাহিক ভালোবাসার প্রকাশ। তাহলে আর দেরি কেন? আজই আপনার সহজ স্কিন কেয়ার যাত্রা শুরু করুন – আপনার ত্বকই আপনার প্রথম পরিচয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।