সকালবেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ লক্ষ করলেন, গালে দু’টি নতুন ব্রণ ফুটে উঠেছে কিংবা রোদে বেরোতেই ত্বক টানটান শুষ্ক হয়ে আসছে। চিন্তায় ভেঙে পড়ার কিছু নেই! বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া, ধুলোবালি আর দূষণের মাঝেও ছেলেদের ত্বক রাখা যায় প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যকর। শুধু প্রয়োজন সঠিক গাইডলাইন। এই ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড আপনাকে জানাবে ত্বকের মৌলিক চাহিদা, ভুল ধারণার অবসান এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রযোজ্য সহজ টিপস। ভাবছেন স্কিন কেয়ার শুধু মেয়েদের জন্য? একদম ভুল! যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজির (AAD) সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ৭৫% পুরুষই কোনো না কোনো ত্বকের সমস্যায় ভোগেন – যার মধ্যে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব, ব্রণ ও অকালে ত্বক কুঁচকে যাওয়া প্রধান। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায়, সিলেটের পাহাড়ি পথে কিংবা খুলনার সমুদ্রসৈকতে – আপনার ত্বকই আপনাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয়। চলুন জেনে নিই, কীভাবে ন্যূনতম সময় ব্যয়ে সর্বোচ্চ সুফল পেতে পারেন।
ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড: কেন নিয়মিত যত্ন অপরিহার্য?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের ত্বকের যত্নকে “বিলাসিতা” ভাবার দিন শেষ। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নিরাপদ সীমার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি, যা ত্বকের পোরস বন্ধ করে অকাল বার্ধক্য ও ব্রণের জন্ম দেয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা হকের মতে, “বাংলাদেশি পুরুষদের ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা তৈলাক্ত। এখানকার উচ্চ আর্দ্রতা ও ঘামের সাথে মিশে এই তেল জমে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডসের সৃষ্টি করে। শ্যাম্পু দিয়ে মুখ ধোয়া বা সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয়, সমস্যা আরও বাড়ায়।” আমার নিজেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে – কয়েক বছর আগে অফিসের চাপ ও অনিয়মিত রুটিনে ত্বক হয়ে গিয়েছিল নিষ্প্রাণ। শুধুমাত্র একটি সহজ স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলায় পরিবর্তনটা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু চেহারার জন্যই নয়, ত্বক শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ। এটি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড মানে শুধু সুন্দর দেখানো নয়, সার্বিক সুস্থতারও অংশ।
স্কিন কেয়ারের ৫টি মৌলিক স্তম্ভ: সহজে শুরু করার উপায়
জটিল রুটিন বা দামি প্রোডাক্ট নয়, এই ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড অনুসরণ করুন নিয়মিতভাবে:
- পরিষ্কারকরণ (Cleansing): ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- কেন? দিনের বেলার ধুলা, ময়লা, ঘাম ও অতিরিক্ত তেল (সেবাম) জমে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। সঠিক ক্লিনজিং ছাড়া অন্য কোনো পণ্য ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।
- কীভাবে? দিনে দুইবার (সকালে ও রাতে) হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে নিন। একটি মৃদু, ফোম তৈরি হয় এমন ফেস ওয়াশ (pH ব্যালেন্সড, ৫.৫-৬.৫) হাতে নিয়ে পরিপূর্ণ ফোম তৈরি করুন। গোলাকার মোশনে হালকা হাতে ৩০-৬০ সেকেন্ড মাসাজ করুন, বিশেষ করে T-জোনে (কপাল, নাক, থুতনি)। ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কখনোই গরম পানি বা রুক্ষ সাবান ব্যবহার করবেন না।
- প্রোডাক্ট টিপ: বাংলাদেশে সহজলভ্য ব্র্যান্ড যেমন Garnier Men, Biotique, বা Himalaya Herbals-এর মাইল্ড ক্লিনজার বেছে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য Salicylic Acid (০.৫%-২%) বা Glycolic Acid সমৃদ্ধ ক্লিনজার ভালো।
- টোনিং (Toning): ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা
- কেন? ক্লিনজিংয়ের পর ত্বকের pH লেভেল সাময়িকভাবে বেড়ে যায়। টোনার এই pH ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে, অবশিষ্ট ময়লা সরায় এবং পরবর্তী পদক্ষেপের (ময়েশ্চারাইজার) শোষণ বাড়ায়।
- কীভাবে? কটন প্যাডে অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল-মুক্ত টোনার নিন। মুখ ও গলা হালকা হাতে মুছে নিন। ঘষবেন না। বাংলাদেশের গরমে Witch Hazel বা Rose Water ভিত্তিক টোনার বেশ কার্যকর ও সুলভ।
- বিশেষ নোট: অনেকেই টোনিংকে অপশনাল ভাবেন, কিন্তু বিশেষ করে তৈলাক্ত বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
- ময়েশ্চারাইজিং (Moisturizing): আর্দ্রতার সুরক্ষা কবচ
- কেন? ধারণার বিপরীতে, তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন! ক্লিনজিং ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা কিছুটা সরিয়ে দেয়। ময়েশ্চারাইজার এই আর্দ্রতা পুনরায় সরবরাহ করে, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ও বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। শুষ্ক ত্বক টানটান ও খসখসে হয়ে যায়, বলিরেখা দেখা দেয় আগেই।
- কীভাবে? টোনিংয়ের পর ত্বক সামান্য ভেজা থাকতে থাকতেই (৩০ সেকেন্ডের মধ্যে) মটর দানার সমান বা সামান্য বেশি ময়েশ্চারাইজার নিন। হাতের তালুতে সামান্য গরম করে নিয়ে মুখ ও গলায় হালকা হাতে ট্যাপ করে ম্যাসাজ করুন, যতক্ষণ না শোষিত হয়।
- প্রোডাক্ট টিপ: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য Gel বা Water-based, শুষ্ক ত্বকের জন্য Cream বা Lotion বেসড ময়েশ্চারাইজার নিন। Nivea Men, L’Oreal Paris Men Expert, বা স্থানীয় ব্র্যান্ড Kay Kraft-এর পণ্য ব্যবহার করুন। দিনে কমপক্ষে দুইবার (সকাল ও রাতে) ব্যবহার আবশ্যক।
- সান প্রোটেকশন (Sunscreen): সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র!
- কেন? সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UVA/UVB) ত্বকের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। এটি ত্বকের কোলাজেন ভেঙে দেয়, ফলে অকালে বলিরেখা, কালো দাগ (হাইপারপিগমেন্টেশন) এবং ত্বক ঝুলে পড়ে। AAD স্পষ্ট বলেছে, দিনের বেলা বাইরে বের হলেই – মেঘলা দিনেও – সানস্ক্রিন ব্যবহার অপরিহার্য। বাংলাদেশের মতো ক্রান্তীয় দেশে এর গুরুত্ব আরও বেশি।
- কীভাবে? ঘর থেকে বের হওয়ার কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে মুখ, গলা, কান ও হাতের পিছনে (যে অংশগুলো কাপড়ে ঢাকা থাকে না) পর্যাপ্ত পরিমাণে (এক চা চামচের প্রায় অর্ধেক শুধু মুখের জন্য) সানস্ক্রিন লাগান। SPF 30 বা তার বেশি (Broad Spectrum, অর্থাৎ UVA & UVB দুটোর বিরুদ্ধেই সুরক্ষা) বেছে নিন। ঘাম বা পানির সংস্পর্শে এলে বা ২ ঘণ্টা পরপর পুনরায় লাগান। রোদে থাকার সময় হ্যাট বা ছাতা ব্যবহারও সহায়ক।
- প্রোডাক্ট টিপ: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য Gel বা Matte Finish সানস্ক্রিন (Neutrogena Ultra Sheer, Lotus Herbals Safe Sun), শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বেসড (Bioderma Photoderm, Avene High Protection) নিন। ডার্মাটোলজিস্টরা প্রায়ই লেবেলে ‘Non-Comedogenic’ লেখা আছে কিনা দেখতে বলেন, অর্থাৎ ব্রণ সৃষ্টি করে না এমন।
- এক্সফোলিয়েশন (Exfoliation): মৃত কোষ সরিয়ে উজ্জ্বলতা আনা (সপ্তাহে ১-২ বার)
- কেন? আমাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবেই প্রতি ২৮-৩০ দিনে মৃত কোষ ত্যাগ করে। কিন্তু অনেক সময় এই কোষগুলো জমে গিয়ে ত্বক নিস্তেজ দেখায়, ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। এক্সফোলিয়েশন এই মৃত কোষগুলো সরিয়ে ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল করে এবং অন্যান্য পণ্যের শোষণ বাড়ায়।
- কীভাবে? রাসায়নিক (Chemical) এক্সফোলিয়েন্ট (AHA/BHA যেমন Glycolic Acid, Salicylic Acid সমৃদ্ধ সিরাম বা মাস্ক) বা ভৌত (Physical) স্ক্রাব (সূক্ষ্ম দানাদার) ব্যবহার করুন। ভৌত স্ক্রাব ব্যবহারের সময় খুব জোরে ঘষবেন না। সপ্তাহে মাত্র ১-২ বার (বিশেষ করে রাতে) যথেষ্ট। এক্সফোলিয়েশনের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
- সতর্কতা: অতিরিক্ত এক্সফোলিয়েশন ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করে, সংবেদনশীলতা বাড়ায়। সংবেদনশীল ত্বকে রাসায়নিক এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারে সতর্ক হোন।
বাংলাদেশি ত্বকের জন্য বিশেষ টিপস: আমাদের আবহাওয়ায় হাইড্রেশন (পানি পান) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ঢাকার মতো দূষিত শহরে বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। পাশাপাশি, ত্বক সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টও জরুরি।
আপনার ত্বকের ধরন বুঝে নিন: কাস্টমাইজড কেয়ার প্ল্যান
সব ত্বক এক রকম নয়! আপনার ত্বকের প্রকৃতি বুঝে যত্ন নিলে ফলাফল হবে দ্রুত ও কার্যকর। এখানে মূল চার ধরন:
- তৈলাক্ত ত্বক (Oily Skin): মুখ চকচকে দেখায়, বিশেষ করে T-জোনে। ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস হওয়ার প্রবণতা বেশি। পোরস বড় দেখায়।
- যত্ন: Oil-free, Non-comedogenic, Gel-based বা Water-based পণ্য বেছে নিন। Salicylic Acid (BHA) সমৃদ্ধ ক্লিনজার/টোনার/সিরাম খুব কার্যকর। ময়েশ্চারাইজার বাদ দেবেন না, হালকা জেল বা লোশন নিন। ম্যাটিফাইং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- শুষ্ক ত্বক (Dry Skin): টান টান ভাব, খসখসে অনুভূতি, চুলকানি, ফ্লেকিং (খোসা ওঠা) হতে পারে। বলিরেখা আগেই দেখা দেয়। পোরস সাধারণত সূক্ষ্ম।
- যত্ন: ক্রিমি, ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার। অ্যালকোহল-মুক্ত টোনার (হাইড্রেটিং)। ভারী ক্রিম বা লোশন বেসড ময়েশ্চারাইজার দিনে দুইবার। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিন সমৃদ্ধ পণ্য ভালো। হিউমিডিফায়ারের নিচে ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- মিশ্র ত্বক (Combination Skin): সবচেয়ে সাধারণ ধরন। T-জোন (কপাল, নাক, থুতনি) তৈলাক্ত, কিন্তু গাল শুষ্ক বা স্বাভাবিক।
- যত্ন: মাইল্ড, ব্যালেন্সিং ক্লিনজার। T-জোনে তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণের জন্য টোনার ব্যবহার করতে পারেন। গালে ক্রিমি ময়েশ্চারাইজার, T-জোনে হালকা জেল বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। Broad-spectrum সানস্ক্রিন সর্বত্র।
- সংবেদনশীল ত্বক (Sensitive Skin): সহজেই লাল হয়ে যায়, চুলকায়, জ্বালা করে বা র্যাশ হয়। নতুন পণ্যে রিঅ্যাকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- যত্ন: ফ্র্যাগরেন্স-ফ্রি, ডাই-ফ্রি, অ্যালকোহল-ফ্রি, মাইল্ডেস্ট পণ্য বেছে নিন (Hypoallergenic লেবেল দেখুন)। প্যাচ টেস্টিং (হাতের তালু বা কানে পরীক্ষা করে দেখা) ছাড়া নতুন পণ্য মুখে লাগাবেন না। মিনিমালিস্ট রুটিন মেনে চলুন। ক্যালেন্ডুলা, অ্যালোভেরা বা সেরামাইড সমৃদ্ধ পণ্য শান্তিদায়ক। এক্সফোলিয়েশন সাবধানতার সাথে করুন বা বাদ দিন।
পরামর্শ: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, মুখ না ধুয়ে, একটি ক্লিন টিস্যু দিয়ে T-জোন মুছে দেখুন। যদি টিস্যুতে স্পষ্ট তেলের দাগ দেখা যায়, তবে আপনার ত্বক তৈলাক্ত বা মিশ্র। শুষ্ক বা টানটান লাগলে শুষ্ক। জ্বালা-চুলকানি হলে সংবেদনশীল।
ভাঙুন ভুল ধারণা: ছেলেদের স্কিন কেয়ার নিয়ে প্রচলিত মিথ
- মিথ: “স্কিন কেয়ার মানেই তো মেয়েলি কাজ!”
সত্য: ত্বকের সুস্থতা লিঙ্গনিরপেক্ষ। যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ডার্মাটোলজিস্টসের (BAD) মতে, পুরুষদের ত্বক মহিলাদের তুলনায় প্রায় ২০% বেশি পুরু এবং বেশি তেল উৎপন্ন করে, ফলে তাদেরও আলাদা যত্নের প্রয়োজন। শেভিং, ঘামাচি, রেজর বার্ন – এগুলো তো ছেলেদেরই সাধারণ সমস্যা! এগুলো সমাধানও স্কিন কেয়ারের অংশ। - মিথ: “সানস্ক্রিন শুধু গরমে বা সমুদ্র সৈকতে লাগে।”
সত্য: সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি মেঘলা দিনেও ভেদ করে আসে। WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, UV রশ্মির ৮০% মেঘ ভেদ করতে পারে। ঢাকার রাস্তায় হাঁটা, অফিসের জানালার পাশে বসে কাজ – সবক্ষেত্রেই সুরক্ষা দরকার। UVA রশ্মি কাচ ভেদ করে ঢুকে ত্বকের গভীরে ক্ষতি করে। - মিথ: “তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে ব্রণ বাড়বে!”
সত্য: তৈলাক্ত ত্বকও আর্দ্রতা হারায়। ময়েশ্চারাইজার না দিলে ত্বক নিজেকে রক্ষা করতে আরও বেশি তেল উৎপাদন শুরু করে, যা ব্রণের ঝুঁকি বাড়ায়! শুধু Oil-free, Non-comedogenic ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। - মিথ: “দামি ব্র্যান্ড মানেই ভালো প্রোডাক্ট।”
সত্য: দাম নয়, প্রোডাক্টের উপাদান তালিকা (Ingredients List) এবং আপনার ত্বকের ধরনই প্রধান। বাংলাদেশে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের অনেক ব্র্যান্ড (যেমন: Vaadi Herbals, Arata) উৎকৃষ্ট মানের পণ্য সরবরাহ করে। “Active Ingredients”-এ নজর দিন (যেমন: Salicylic Acid, Hyaluronic Acid, Zinc Oxide)।
দৈনন্দিন স্কিন কেয়ার রুটিন: ১০ মিনিটেই সম্পূর্ণ!
সকালবেলা (ঘুম থেকে উঠে):
- ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন (৩০ সেকেন্ড)।
- টোনার লাগান (যদি ব্যবহার করেন) (৩০ সেকেন্ড)।
- ময়েশ্চারাইজার লাগান (৩০ সেকেন্ড)।
- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: সানস্ক্রিন লাগান (১ মিনিট)। বাইরে বেরোতে কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে।
রাতে (ঘুমানোর আগে):
- ক্লিনজার দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে দিন ও দিনের ময়লা, সানস্ক্রিন সরান (৩০ সেকেন্ড – ১ মিনিট)।
- টোনার লাগান (যদি ব্যবহার করেন) (৩০ সেকেন্ড)।
- ময়েশ্চারাইজার লাগান (৩০ সেকেন্ড)।
- (সপ্তাহে ১-২ বার): এক্সফোলিয়েট করুন (ক্লিনজিংয়ের পর, ময়েশ্চারাইজিংয়ের আগে) (১-২ মিনিট)।
বোনাস টিপ: শেভিংয়ের পর অবশ্যই অ্যালকোহল-মুক্ত অ্যাফটারশেভ বা ক্যালামিং ময়েশ্চারাইজার লাগান। রেজর বার্ন এড়াতে শেভিং ক্রিম ব্যবহার করুন এবং ধারালো ব্লেড ব্যবহার করুন।
বাংলাদেশি ত্বকের জন্য অতিরিক্ত যত্ন: নারিকেল তেল (সীমিত পরিমাণে), অ্যালোভেরা জেল বা মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক (সপ্তাহে একবার) প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে পারে। তবে এগুলো মৌলিক রুটিনের বিকল্প নয়, সম্পূরক মাত্র।
এই ছেলেদের স্কিন কেয়ার গাইড শুধু জটিল ধাপ নয়, বরং দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাসকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে রূপান্তরিত করার একটি বিজ্ঞানসম্মত রোডম্যাপ। মনে রাখবেন, সুস্থ ত্বক কোনো লাক্সারি নয়, বরং আপনার সার্বিক সুস্থতারই প্রতিচ্ছবি। আজ থেকেই শুরু করুন এই সহজ রুটিন, আপনার ত্বককে দিন দিন উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হতে দেখুন। এই গাইডকে সঙ্গী করে আপনার ত্বকের যত্নের যাত্রা শুরু হোক এখনই – কারণ আপনার প্রতিদিনের ছোট্ট প্রচেষ্টাই তৈরি করবে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল, সুস্থ আপনাকে।
জেনে রাখুন-
- ছেলেদের জন্য স্কিন কেয়ার কি সত্যিই প্রয়োজন?
একদম প্রয়োজনীয়! ছেলেদের ত্বক পুরু ও বেশি তেল উৎপাদন করে, ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও রোদের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। ধুলোবালি, দূষণ ও শেভিং-জনিত জ্বালা থেকে রক্ষা পেতেও নিয়মিত ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং ও সানস্ক্রিন ব্যবহার অপরিহার্য। এটি শুধু চেহারা নয়, ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। - কোন বয়স থেকে ছেলেদের স্কিন কেয়ার শুরু করা উচিত?
বয়ঃসন্ধির শুরু থেকেই স্কিন কেয়ারের মূল নীতি (ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং, সানপ্রোটেকশন) মেনে চলা উচিত, যখন হরমোনের পরিবর্তনে ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়ে ও ব্রণের সমস্যা শুরু হয়। তবে সানস্ক্রিনের ব্যবহার তো শিশুবয়স থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তত ভালো। - ব্রণ হলে কী করব? কোন পণ্য ব্যবহার করব?
ব্রণ হলে প্রথমে হাত দিয়ে খোঁচাবেন না। Salicylic Acid (১-২%) বা Benzoyl Peroxide (২.৫-৫%) সমৃদ্ধ ক্লিনজার/স্পট ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করুন। তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ময়েশ্চারাইজার বাদ দেবেন না (Oil-free নিন)। খুব বেশি ব্রণ বা দাগ হলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। ঘরোয়া উপায়ে অ্যালোভেরা জেল বা টি ট্রি অয়েল ডট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে (প্যাচ টেস্টিং করে)। - সানস্ক্রিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কি?
বাইরে বের হওয়ার কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট আগে মুখ, গলা, কান ও হাতের পিছনে পর্যাপ্ত পরিমাণে (প্রায় ১/২ চা চামচ শুধু মুখের জন্য) SPF 30+ Broad Spectrum সানস্ক্রিন লাগান। ঘামলে, মোছলে বা পানির সংস্পর্শে এলে, কিংবা টানা ২ ঘণ্টা রোদে থাকলে পুনরায় লাগান। মনে রাখবেন, মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন আবশ্যক! - স্কিন কেয়ার পণ্য কিনতে গেলে কি কি দেখে নেব?
- আপনার ত্বকের ধরন: তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র নাকি সংবেদনশীল?
- উপাদান তালিকা (Ingredients): আপনার সমস্যা অনুযায়ী সক্রিয় উপাদান আছে কিনা (যেমন: ব্রণের জন্য Salicylic Acid, শুষ্কতার জন্য Hyaluronic Acid/Glycerin, সুরক্ষার জন্য Zinc Oxide/Titanium Dioxide)।
- লেবেল: “Oil-Free”, “Non-Comedogenic” (ব্রণ সৃষ্টি করে না), “Fragrance-Free” (সংবেদনশীল ত্বকের জন্য), “Broad Spectrum SPF 30+” (সানস্ক্রিনের জন্য)।
- মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ: কখনোই এক্সপায়ারি পণ্য ব্যবহার করবেন না।
- স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য খাদ্যাভ্যাসে কী পরিবর্তন আনব?
প্রচুর পানি পান করুন (দিনে ৮-১০ গ্লাস)। চিনি ও অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড কমিয়ে আনুন। ফলমূল (বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ যেমন: পেয়ারা, আমলকী, লেবু) ও শাকসবজি (গাজর, পালংশাক) বেশি খান। প্রোটিন (ডাল, মাছ, ডিম) ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (বাদাম, আভোকাডো) ত্বকের গঠন ও উজ্জ্বলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাঙ্ক ফুড ও মিষ্টি ব্রণের প্রবণতা বাড়াতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।