আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ঐতিহাসিক এক মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতা দূর করতে তার প্রতিদ্বন্দ্বি কোম্পানি কিনে নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রতিষ্ঠান বিক্রির ব্যাপারে তারা কঠোর প্রতিকার চায়।
ফলে সামাজিক যোগাযোগ খাতের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছে বিবিসি। ফেসবুকের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, অন্য আরো ৪৫ জন কর্মকর্তা মিলে যে মামলা করেছেন।
আদালতের কাছে তারা আবেদন করেছেন যেন ফেসবুকের ওপর এই আদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভাজন বা পুনর্গঠন করা হয়’। যার মানে হতে পারে ২০১২ সালে এক বিলিয়ন ডলার মূল্যে কেনা ইন্সটাগ্রাম বা ২০১৪ সালে ১৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যে কেনা হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দিতে বাধ্য করা। এসব প্রতিষ্ঠান কিনে নেওয়ার পর ফেসবুকের শেয়ারের দাম চারগুণের বেশি বাড়ে।
ফেসবুকের এখন মোট মূল্য ৮০০ বিলিয়ন ডলার। ফেসবুকের ব্যাপারে তদন্ত করেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি কমিটি। সেই কমিটির প্রধান ড্যামিয়ান কলিন্স বিবিসিকে বলেছেন, এটা একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমেরিকার কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আলাদা করার ক্ষেত্রে মামলা করা।
তবে ফেসবুকও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, তাদের ভেঙ্গে ফেলার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে তারা শক্তিশালী আইনি লড়াই চালাবে।
কারণ যখন তারা হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্সটাগ্রাম কিনেছে, তখন কোন আপত্তি করেনি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, এখন এরকম কিছু করা হলে ব্যবসায়িক সমাজের জন্য সেটা ক্ষতিকর হবে।
প্রযুক্তি বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, তার মতে, ফেসবুক হয়তো ভাঙ্গন ঠেকাতে সক্ষম হবে।
যুক্তরাজ্যের অফিস অফ ফেয়ার ট্রেডিং- এর সাবেক প্রধান জন ফিঙলেটন বলছেন, ”একচেটিয়া ব্যবসা করার মামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট অনেক বেশি সন্দেহ প্রবণ।”
”আদালতের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই যখন তারা বলছে যে তারা ফেসবুককে ভেঙ্গে দিতে চায়, তার মানে হলো এটা আসলে যতটা না অর্থনীতি এবং আইনের ব্যাপার, তারচেয়েও বেশি হচ্ছে রাজনীতি,” তিনি বলছেন।
তবে জন ফিঙলেটন এবং ড্যামিয়ান কলিন্স, দুজনেই বিশ্বাস করেন একটি দীর্ঘ আইনি লড়াই ফেসবুক এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ধরনের ওপর বেশ প্রভাব ফেলবে।
ব্রিটিশ এমপি ড্যামিয়ান কলিন্স মনে করেন, সামাজিক মাধ্যমের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছোট প্রতিষ্ঠানকে আগের মতো আর কিনে নিতে বা ভেঙ্গে দিতে পারবে না। বরং আরও বেশি সৃষ্টিশীল হবে।
মি. ফিঙলেটন বলছেন, গত ৩০/৪০ বছর ধরে আমরা দেখে আসছি, গ্রাহকদের সুরক্ষার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা চলেছে, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুরক্ষা নিয়ে নয়। কিন্তু এখন এমন অনেক মামলা দেখা যাচ্ছে, যেখানে বাজারে সুষম প্রতিযোগিতার দাবি করা হচ্ছে।
এর আগে নিয়ন্ত্রণকদের সঙ্গে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের যেসব বিরোধের ঘটনা ঘটেছে, তা থেকে ফেসবুকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হয়তো একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। মাইক্রোসফটকে যখন ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, তারা এ নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা লড়েছে।
তারা ভাঙ্গন এড়াতে পেরেছে। কিন্তু বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে এবং তাদেরকে এখন আর প্রতিযোগিতা-বিরোধী হিসাবে দেখা হয় না। নিয়ন্ত্রকরাও তাদের নিয়ে আর ভাবে না।
ফেসবুক হয়তো আশা করতে পারে যে, সেই ইতিহাসেরই আবার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।